Thank you for trying Sticky AMP!!

যক্ষ্মা নির্মূল করতে পারব আমরা

৯ বছর বয়সী সাব্বির অসুস্থ ছিল। কয়েক সপ্তাহ ধরে ওর বুকব্যথা হচ্ছিল। সঙ্গে ছিল খুব কাশি। একেক সময় কাশির সঙ্গে রক্তও পড়ছিল। সাব্বিরের মা-বাবা ওকে একটি ফার্মেসিতে নিয়ে যান। সেখানকার লোকজন ওর অসুখ সঠিকভাবে ধরতে না পেরে ভুল ওষুধ দেয়। স্বাভাবিকভাবেই তাতে কোনো কাজ হয়নি। কিছুতেই বুকব্যথা ও কাশি না সারায় সাব্বিরকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সৌভাগ্যক্রমে তিনি ধরতে পারেন ওর যক্ষ্মা (টিবি) হয়েছে। চিকিৎসক সাব্বিরকে কাছের একটি হাসপাতালে পাঠান। কিন্তু সেখানে তিন মাস চিকিৎসার পর ওর স্বাস্থ্য আরও খারাপ হয়ে পড়ে। শরীরের ওজন কমে ৪২ পাউন্ডে নেমে আসে। পরীক্ষা করে দেখা যায়, তখনো ওর টিবি সারেনি।

সাব্বিরকে তখন জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে (এনআইডিসিএইচ) পাঠানো হলো। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডির ‘চ্যালেঞ্জ টিবি’ কর্মসূচির আওতায় এনআইডিসিএইচকে সহায়তা দেওয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা করে দেখা যায়, সাব্বিরের ওষুধ–প্রতিরোধী যক্ষ্মা হয়েছে। এনআইডিসিএইচের কর্মীরা বিভিন্ন ওষুধের সমন্বয়ে ওর জন্য বিশেষ চিকিৎসা শুরু করেন। ১৯ মাস হাসপাতাল ও বাসার নিবিড় চিকিৎসা আর বিশেষ ওষুধ প্রয়োগের সুবাদে সাব্বিরের ওজন আবার বাড়ল। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, ওর টিবিও সেরে গেছে। সুস্থ হয়ে ছেলেটি আবার স্কুলে যোগ দিল।

টিউবারকিউলোসিস (যক্ষ্মা) বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংক্রামক ব্যাধি। এটি একটি প্রাচীন রোগ, যা একধরনের ব্যাকটেরিয়া থেকে হয়। মানুষ সাধারণত কাশির মাধ্যমে এটি ছড়িয়ে দেয়। আক্রান্ত ব্যক্তি কাশি, হাঁচি বা থুতু ছিটানোর মাধ্যমে বাতাসে টিবির জীবাণু ছড়ায়। একজন লোকের সংক্রমিত হওয়ার জন্য এই জীবাণুগুলোর মাত্র কয়েকটি নিশ্বাসের সঙ্গে নিলেই যথেষ্ট। যাদের ফুসফুসে টিবির জীবাণু সক্রিয় রয়েছে, তারা টানা কাশি, ক্লান্তি, জ্বর, ওজন কমা এবং রাতে ঘাম হওয়া ইত্যাদি সমস্যায় ভুগতে পারে। চিকিৎসা করা না হলে টিবির কারণে মৃত্যুও হতে পারে। বিশ্বে এইচআইভি/এইডস ও ম্যালেরিয়া মিলে যত মানুষ মারা যায় টিবিতে তার চেয়ে বেশি লোকের মৃত্যু হয়। অথচ এটি একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ, যা চিকিৎসার মাধ্যমে সারানো যায়।

টিবি প্রতিরোধ ও নিরাময়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের যৌথ কর্মসূচিগুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে শিশুচিকিৎসকদের আরও ভালোভাবে এই রোগ চিহ্নিত ও এর চিকিৎসা করার প্রশিক্ষণ দেওয়া। ইউএসএআইডির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে নানা ধরনের উদ্ভাবনী চিকিৎসা কর্মসূচি চালায়। কমিউনিটিভিত্তিক ওষুধ–প্রতিরোধী যক্ষ্মা (এমডিআর-টিবি) চিকিৎসা হচ্ছে তার একটি। এই অংশীদারত্বের সুবাদেই বাংলাদেশে যক্ষ্মা রোগী চিহ্নিত করা ও এর চিকিৎসায় গতি বেড়েছে। বাংলাদেশ যক্ষ্মা চিকিৎসায় স্বল্পমেয়াদের এমডিআর-টিবি চিকিৎসাপদ্ধতিও পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এখন এটি সুপারিশ করে থাকে। চিকিৎসাব্যবস্থাটি সবার কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছে ‘বাংলাদেশ রেজিমেন’ নামে।

২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব তহবিল দিয়ে যক্ষ্মার ‘ফার্স্ট লাইন’ (প্রাথমিক পর্যায়ের) ওষুধ কিনেছে। এটি রোগটির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশের জোরালো অঙ্গীকারেরই পরিচায়ক। তবে এ ধরনের আশাব্যঞ্জক প্রচেষ্টার পরও বিশ্বজুড়ে চিহ্নিত না হওয়া টিবির ২ দশমিক ৩ শতাংশই বাংলাদেশে ঘটে। আবার এ দেশে এমডিআর-টিবির প্রায় ৭০ শতাংশই ধরা পড়ে না। ২০১৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্বনেতারা যক্ষ্মা মহামারির অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে জাতিসংঘে এক বৈঠকে বসেন। ঘাতক ব্যাধিটি মোকাবিলা করার আন্তর্জাতিক কৌশল নির্ধারণ করতে এটাই ছিল বিশ্বনেতাদের প্রথম বৈঠক। তাঁরা ২০৩০ সাল নাগাদ টিবি নির্মূল করতে অঙ্গীকার করেন।

যুক্তরাষ্ট্র সরকার গ্লোবাল ফান্ড, ডব্লিউএইচও, সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন ও ইউএসএআইডির মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী টিবির বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে লড়াই করছে। ইউএসএআইডির প্রশাসক মার্ক গ্রিন সম্প্রতি যক্ষ্মা মোকাবিলা কর্মসূচির নতুন একটি মডেল ঘোষণা করেছেন। ‘গ্লোবাল অ্যাকসিলারেটর টু অ্যান্ড টিউবারকিউলোসিস’ নামের মডেলটি এই ব্যাধি নির্মূল করতে বিভিন্ন দেশ এবং সরকারি ও বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকে গতিশীল করবে।

২৪ মার্চ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস। ১৮৮২ সালে ড. রবার্ট কচের যক্ষ্মার জীবাণু আবিষ্কার করার দিনটি স্মরণ করতে পালিত হয় এ দিবস। টিবি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টায় এ পর্যন্ত অর্জনগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়ার দিন এটি। নতুন ও সংকল্পবদ্ধ বৈশ্বিক অঙ্গীকারের মাধ্যমে আমরা টিবিকে পরাস্ত করতে পারব। সবাই মিলে সাব্বিরের মতো বাংলাদেশের শিশুদের তথা বিশ্বের সব প্রান্তের শিশুদের জন্য নিশ্চিত করতে পারব আরও উজ্জ্বল আর স্বাস্থ্যকর এক ভবিষ্যৎ।

আর্ল আর মিলার : বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত