Thank you for trying Sticky AMP!!

যুক্তরাষ্ট্র–যুক্তরাজ্য–অস্ট্রেলিয়ার চুক্তিতে কি সংকটে ন্যাটো

হোয়াইট হাউস থেকে ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির ঘোষণা দিচ্ছেন জো বাইডেন

২১ সেপ্টেম্বর হোয়াইট হাউসে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তাঁদের এ আলোচনা লন্ডনের জন্য একপ্রকার কূটনৈতিক অভ্যুত্থান। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে তথাকথিত এইউকেইউএস চুক্তির পর তাঁরা একসঙ্গে বসলেন। এই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়া তাদের নৌবাহিনীকে আধুনিক করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নিউক্লিয়ার প্রপেলারযুক্ত সাবমেরিন কিনবে।

যুক্তরাজ্য যুক্ত হওয়ায় প্রতিরক্ষা চুক্তিটি ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তা চুক্তিতে পরিণত হয়েছে। এর ফলে ফ্রান্সের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া ১২টি ডিজেল সাবমেরিন কেনার জন্য ৩৮ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের যে চুক্তি করেছিল, সেটা ভন্ডুল হয়ে গেছে। জনসনের কাছে পুরো গল্পটা ব্রিটেনকে বিশ্বদরবারে খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার একটা নজির। কেননা ইউরোপের শিকল থেকে বেরিয়ে এসে বৈশ্বিক বিষয়ে মুক্তভাবে বড় ভূমিকা পালন করতে চেয়েছে দেশটি। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি করেছে ব্রিটেন। জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনের আয়োজক তারা। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর টুপিতে এ দুটি ঘটনা দুটি পালক যুক্ত করেছে।

সাবমেরিন বিক্রিকে কেন্দ্র করে বাইডেন প্রশাসন ফ্রান্সের সঙ্গে একটি বিবাদে জড়িয়ে পড়েছে। এই বিবাদে চীন ও অন্য ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে মোকাবিলা করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। সে জন্য বিরক্তিকর ইউরোপীয় মিত্রদের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্যকে সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছে। বাইডেন যেটা মনে করছেন, তার চেয়ে বাস্তবতা আরও জটিল। যুক্তরাজ্য কিংবা ফ্রান্স কোনো দেশেরই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সামরিক সাম্য অবস্থা আনার মতো সামর্থ্য নেই। আঞ্চলিক কৌশলগত খেলায় একদিকে চীন, অন্যদিকে আমেরিকা ও আঞ্চলিক মিত্র জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত (তথাকথিত কোয়াড জোট) এবং দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম ও নিউজিল্যান্ড।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক গভীর করার মধ্য দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের সামনে একটা সুযোগ এসেছে। চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়াকে শক্তিশালী করার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এমন এক খেলোয়াড়, যাদের উপস্থিতি গুরুত্ব বহন করে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে এইউকেইউএস কি ন্যাটোকে তছনছ করে দিতে পারে? ইউরোপের দুই শীর্ষ দেশ যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দিচ্ছে? গ্লোবাল টাইমস–এ প্রকাশিত নিবন্ধ, চীন সরকারের মুখপাত্র এবং কয়েকজন পর্যবেক্ষকের মতে, এ ঘটনা উত্তর আটলান্টিক জোটটির বন্ধনে আঘাত লেগেছে। প্রকৃতপক্ষে দৃশ্যপটের বড় পরিবর্তন ঘটেছে। ক্যানবেরা ও ওয়াশিংটন থেকে ফ্রান্সের দূতদের প্রত্যাহার করা হয়েছে। মিসাইল সহযোগিতা বিষয়ে যুক্তরাজ্য-ফ্রান্সের মধ্যকার মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক বাতিল হয়েছে। সংকট যে গভীর হয়েছে, এসব ঘটনা তারই বহিঃপ্রকাশ। তবে এটা একটা সাময়িক ধাক্কা। এর চেয়ে গুরুতর কিছু যে ঘটবে না, তা ধারণা করার বেশ কিছু কারণ আছে। সর্বোপরি লন্ডন ও প্যারিস এর আগে একবারের বেশি সংঘাতে জড়ায়নি। ২০০৩ সালে ইরাক হামলাকে কেন্দ্র করে যে বিরোধ তাদের মধ্যে তৈরি হয়েছিল, সেটা খুব বেশি দিনের জন্য স্থায়ী হয়নি। দ্বিতীয়ত, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষাকে কেন্দ্র করে তারা শক্তিশালী দ্বিপক্ষীয় মৈত্রীতে আবদ্ধ।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক গভীর করার মধ্য দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের সামনে একটা সুযোগ এসেছে। চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়াকে শক্তিশালী করার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এমন এক খেলোয়াড়, যাদের উপস্থিতি গুরুত্ব বহন করে।

তৃতীয়ত, ন্যাটোর বাকি সদস্যদেশ এবং সংস্থাটির মহাসচিব জেন স্টলটেনবার্গ পরিস্থিতির অবনতি যাতে না হয়, সে জন্য চলমান বিতর্কে মন্তব্য করা থেকে বিরত রয়েছেন। তাঁরা বরং ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকিয়ে আছেন, যাতে দেশ দুটি নিজেদের সমস্যা মিটিয়ে ফেলতে পারে। এ রকম লক্ষণ এর মধ্যেই দেখা গেছে। ২২ সেপ্টেম্বরের ফোনালাপের পর জো বাইডেন ও এমানুয়েল মাখোঁও একটি সমঝোতামূলক বিবৃতি দিয়েছেন। আগামী সপ্তাহে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত ওয়াশিংটন ফিরে যাবেন। দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে মুখোমুখি সংলাপও আসন্ন।

কিন্তু এতে বেইজিংয়ের খুশি হওয়ার কারণ আছে। এএইকেইউএস সংকট ফ্রান্স ও ইউরোপের অন্য দেশগুলোকে বাইডেন প্রশাসন ও একই সঙ্গে চীনের বাজপাখির মতো যে অবস্থান, সেটা থেকে দূরে থাকার একটা অজুহাত তৈরি হয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন কী করবে? এ ঘটনাকে ধরে ফ্রান্স ইউরোপের বিদেশনীতি আরও শক্তিশালী করার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরবে। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-ইভেস লে ড্রিয়ান ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফ্লোরেন্স পারলি যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, এখন কেবল ইউরোপীয় কৌশলগত সার্বভৌমত্ব ইস্যুতে বলিষ্ঠ ও স্পষ্ট করে তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। ইইউ কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিচেল এবং ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লেন ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়েছেন। ট্রাম্পের নেওয়া ‘আমেরিকা প্রথম’ নীতি বাইডেনও অনুসরণ করছেন, এমন অভিযোগ করেছেন তাঁরা।

ফ্রান্সের অবস্থান এখন পর্যন্ত আংশিক সঠিক। ইউরোপীয়দের তাদের নিজেদের নিরাপত্তার দিকে নজর দেওয়া উচিত। এটা করতে গেলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ফ্রান্সের এবং যুক্তরাজ্যের সহযোগিতা বাড়াতে হবে। কিন্তু এ ধরনের সহযোগিতার সম্ভাবনা খুব বেশি নেই। এইউকেইউএস ইউরোপের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাঁক নয়। কিন্তু এটা ইউরোপের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে খুব বেশি সহযোগিতাও করছে না।

ইংরেজি থেকে অনূদিত, আল–জাজিরা থেকে নেওয়া

দিমিতার বেচেভ ফেলো, ইনস্টিটিউট অব হিউম্যান সায়েন্স, ভিয়েনা