Thank you for trying Sticky AMP!!

রাজনৈতিক সমাধানের আশাবাদ

২০১৫ সালে সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল–আসাদ প্রথম রাশিয়া সফর করেন। যুদ্ধের সংকটকালে ভ্লাদিমির পুতিনকে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করতেই তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। এরপর ২০১৭ সালে আসাদ আবারও পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। তবে এবার গেলেন আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ের পর বিদ্যমান সংকটের সমাধান নিয়ে আলোচনা করতে, বিশেষজ্ঞরা তা-ই মনে করছেন।
২০১৫ সালে রুশ সেনারা সিরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। মানুষ আসাদের প্রথম ঘোষিত রাশিয়া সফরের খবরে নড়েচড়ে বসে, যখন দেশটি নানা সংকটে জর্জরিত। ওই সময় আইএস সিরিয়ার বিপুল পরিমাণ ভূমি নিয়ন্ত্রণ করছিল। রাজনৈতিক কর্মীরা বলেন, তখন সিরিয়ার অর্ধেকের বেশি ভূমি আইএসের দখলে ছিল।
ব্যাপারটা হচ্ছে ২০১৫ সালে আসাদের রাশিয়া সফর ছিল দেশ দুটির মধ্যকার শক্তিশালী বন্ধনের সংকেত। তখন পশ্চিম ও আরবের কিছু দেশ সিরিয়ার রাজনৈতিক সংকটের সমাধানের পূর্বশর্ত হিসেবে আসাদের বিদায়ের আহ্বান জানাচ্ছিল। ওই বছর থেকে সিরীয় সরকার রাশিয়ার বিশেষ সেনা ও বিমান হামলার বদৌলতে আইএসসহ অন্যান্য অতি উগ্র দলগুলোর কাছ থেকে ভূমি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এরপর তারা রাশিয়া ও ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলো, বিশেষ করে হিজবুল্লাহর সহায়তায় আইএসের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল দখল করে নিতে সক্ষম হয়। বিশেষ করে তারা মরূদ্যান শহর পালমিরা এবং ইরাকি সীমান্তের কাছে পূর্বাঞ্চলীয় হোমস প্রদেশের গ্রামাঞ্চলে আইএসের অনেক ঘাঁটি দখল করে নেয়। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ছিল, আইএসের কাছ থেকে দিয়ের-এজর শহর দখল করে নেওয়া। আর এই সপ্তাহেই সিরীয় সেনারা আইএসের শেষ শক্ত ঘাঁটি আল-বুকামল শহর দখল করেছে।

এর সমান্তরালে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্স (এসডিএফ) আইএসকে কার্যত তার রাজধানী রাকা থেকে উচ্ছেদ করেছে। যদিও এই অভিযানগুলো এসডিএফ ও সিরীয় সেনাদের মধ্যকার উত্তেজনার মধ্যেই হয়েছে, এতে আইএসের মাজা ভেঙে গেছে। আইএস জঙ্গিদের নিজস্ব ঢঙের খিলাফত ভেঙে পড়েছে, যার কারণে সিরিয়ায় এক নতুন যুগ শুরু হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ছয় বছরের বেশি দীর্ঘ যুদ্ধের অবসান ঘটেছে এবং বিশ্বের সবচেয়ে খতরনাক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বাস্তুচ্যুত হয়ে সিরিয়ার উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

এই বাস্তবতার মধ্যেই পুতিন ও আসাদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো। মঙ্গলবার দুই নেতার এই হঠাৎ বৈঠকে দেখা গেল, উভয় নেতা পরস্পরের প্রতি উষ্ণ সম্ভাষণ জানালেন। কোলাকুলি করলেন। ব্যাপারটা দেখে মনে হলো মানুষ জীবনের কঠিনতম বাধা পেরোনোর পর তাকে যেমন অভিনন্দন জানানো হয়, তাঁরা পরস্পরের প্রতি সে রকম অভিনন্দন জানালেন। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানা বলেছে, রাশিয়ার সোচি শহর সফরে আসাদ পুতিনসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করেছেন, যার লক্ষ্য ছিল পুতিনের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা। সানা বলছে, এই বৈঠকগুলো ছিল আসাদ ও রাশিয়ার শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যকার ‘সম্মেলনের’ মতো।

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেছেন, সিরিয়ার সেনাবাহিনীর প্রতি রাশিয়ার সামরিক সমর্থনের কারণে বিভিন্ন বিষয়ে, বিশেষ করে মানবিক, সামরিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জন করা গেছে। সানার সূত্রমতে, সিরিয়ার দীর্ঘমেয়াদি সংকট নিরসনে দেশটি আগ্রহী সব পক্ষের সঙ্গে আলোচন করতে রাজি। এ ছাড়া পুতিন বলেছেন, সিরীয় প্রেসিডেন্ট দেশটির শান্তি ও স্থিতিশীলতার ব্যাপারে আগ্রহী সব পক্ষের সঙ্গেই কাজ করতে চান। খবর অনুসারে, আসাদ পুতিনকে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেছেন। দেশটির সরকার রাজনৈতিক সমাধানের ব্যাপারে কী ভাবছে বা কী পদক্ষেপ নেবে এবং সংকট সমাধানে জাতিসংঘের ভূমিকা কেমন হবে, এসব বিষয়ে পুতিন আসাদের কথা শুনেছেন।

পুতিন বলেছেন, আসাদের এই সফরের লক্ষ্য ছিল ২২ নভেম্বর রাশিয়া, তুরস্ক ও ইরানের মধ্যকার ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের আগে মস্কো ও দামেস্কের মধ্যে আলোচনা ও সমন্বয় প্রক্রিয়া শুরু করা। এই বৈঠকের আগে রোববার তুরস্কের আন্তালিয়া শহরে এই তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক হয়েছে। অন্যদিকে পুতিন আসাদকে বিজয়ের অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, সিরিয়ার মানুষ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, সময়ের দিক থেকে এই সম্মেলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সিরিয়ার সেনারা আইএসের শেষ ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর এই বৈঠক হতে যাচ্ছে। সিরিয়ার রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও এই আলোচনায় সিরিয়ার প্রতিনিধি ওসামা দানুরা সংবাদ সংস্থা সিনহুয়াকে বলেছেন, ‘এটা বিজীয়দের সম্মেলন।’

ওদিকে আরেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক হামাইদি আল-আবদুল্লাহ বলেছেন, সিরিয়ার পরবর্তী স্তরটি ‘স্পর্শকাতর’ হতে যাচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, এই পর্যায়ে সিরিয়ার সরকার ও মিত্রদের আরও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। তিনি সিনহুয়াকে বলেছেন, বিদেশি সেনারা সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে লড়তে সিরিয়ার সরকারের অনুমতি না নিয়ে ইতিমধ্যে সিরিয়ায় ঢুকে গেছে, যাদের মধ্যে তুর্কি ও মার্কিন সেনারা আছে। তিনি আরও বলেছেন, রাজনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যে এই পর্যায়ে যুদ্ধের মিত্রদের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের সমন্বয় তৈরি করতে হবে। বৈঠকের পর পুতিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ বিশ্বনেতাদের এ সম্পর্কে অবহিত করেছেন।

মঙ্গলবার ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘পুতিনের সঙ্গে আমার দারুণ ফোনালাপ হয়েছে।’ এক ঘণ্টার বেশি সময়ের ওই আলাপে তাঁদের মধ্যে ‘সিরিয়ার শান্তি’, উত্তর কোরিয়া ও ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

চায়না ডট ওআরজি থেকে নেওয়া, অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন।

হুম্মাম শেখ আলি: সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার সাংবাদিক।