Thank you for trying Sticky AMP!!

শহরকেন্দ্রিক কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন-স্বাস্থ্য

গত ২৪ নভেম্বর ২০১৮, প্রথম আলোর আয়োজনে ও জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউএনএফপিএ) সহযোগিতায় ‘শহরকেন্দ্রিক কিশোর–কিশোরীদের প্রজনন–স্বাস্থ্য’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে ছাপা হলো।

আলোচনায় সুপারিশ
■ বস্তি এলাকায় িকশোর–কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে
■ শহরে কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে
■ নগরজীবনে ব্যস্ততার মধ্যেও মা–বাবা ও অভিভাবকদের প্রয়োজনীয় সময় দিতে হবে এবং বন্ধুসুলভ আচরণ করা দরকার
■ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে কিশোর–কিশোরীরা যেন ভুল তথ্য গ্রহণ না করে সেটা নিশ্চিত করতে হবে
■ কিশোর ও অবিবাহিত কিশোরীদের সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য জাতীয় পর্যায়ে জরিপ করতে হবে
■ কিশোর–কিশোরীদের নিয়ে কাজ করে এমন বেসরকারি সংস্থা, জাতিসংঘ ও সরকারের দিক থেকে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মধ্যে অধিকতর সমন্বয় জরুরি
■ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যসেবা, বিশুদ্ধ পানি ও টয়লেটের ব্যবস্থা করতে হবে

আলোচনা
আব্দুল কাইয়ুম
শহরে বসবাসকারী কিশোর–কিশোরীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় না। আবার বস্তিগুলোতে বসবাসকারী কিশোর-কিশোরীরা স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন না।
এদের অনেকে বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়। মাদকাসক্ত ও অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। এসব এলাকায় শিক্ষার অভাব রয়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। এসব বিষয় আজকের আলোচনায় প্রাধান্য পাবে। এখন এ বিষয়ে আলোচনা করবেন মুনির হোসেন।

মুহাম্মদ মুনির হোসেন

মুহাম্মদ মুনির হোসেন
তথ্যের অভাবে অনেক ধরনের কর্মসূচি সঠিকভাবে প্রণয়ন করা যায় না। আমাদের জাতীয় পর্যায়ে কিশোরদের ওপর জরিপ করা দরকার। নগরায়ণের জন্য কৈশোর স্বাস্থ্য আরও হুমকির মুখে পড়েছে।
২০২১ সালের মধ্যে শহরে বসবাসকারী মোট জনসংখ্যার ২২ শতাংশ হবে কিশোর–কিশোরী। নগরে তারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। বস্তিতে বসবাসকারী ১৯ বছরের নিচে কিশোরীদের ৪৪ শতাংশ গর্ভবতী হয়ে যাচ্ছে অথচ সেখানে তাদের জন্য মাতৃস্বাস্থ্যসেবা খুবই কম।
আমাদের দেশে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৬ জনই ২০ বছর বয়সের আগে সন্তান জন্ম দিচ্ছে। এর সঙ্গে রয়েছে জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা। প্রতি ১০ জন কিশোরীর মধ্যে ৪ জন সঙ্গীর দ্বারা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়।
প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাবে কিশোর–কিশোরীদের জন্য সঠিক কর্মসূচি প্রণয়ন করা যায় না । অবিবাহিত কিশোর–কিশোরী সম্পর্কে তথ্যের যথেষ্ট অভাব রয়েছে।
জাতীয় পর্যায়ে কিশোরদের ওপর জরিপ করা প্রয়োজন। একটি সুন্দর ও সুস্বাস্থে্যর অধিকারী ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা ও লিঙ্গবৈষম্য দূর করে সামাজিক সচেতনতার প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করা জরুরি।

ইখতিয়ার উদ্দিন খন্দকার

ইখতিয়ার উদ্দিন খন্দকার
কৈশোর–স্বাস্থ্যের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব সম্পর্কে কারও দ্বিমত নেই। নিজ অবস্থান থেকে সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে কৈশোর–স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা সহজ হবে।
বর্তমানে কৈশোরকেন্দ্রিক সরকারি ও বেসরকারি কর্মসূচি গ্রামকেন্দ্রিক। শহরের কিশোর–কিশোরীদের খুব একটা পরিচর্যা করা হচ্ছে না। এদের নিয়ে কাজ করতে হবে। সমস্যাগুলো বুঝতে হবে।
কৈশোর বয়সে স্বাস্থ্যসেবার সঠিক তথ্য গুরুত্বপূর্ণ। কৈশোরের তথ্য পাওয়ার সুযোগ খুব একটা নেই। স্কুলপর্যায়ে তথ্য প্রদান ও গ্রহণের পরিবেশ সৃষ্টি করা দরকার।
স্কুলবহির্ভূত কিশোর–কিশোরীরা সাধারণত কোনো কর্মের সঙ্গে জড়িত। ওই সব কর্মস্থলে গিয়ে স্বাস্থ্য সম্পর্কে তথ্য ও সেবা প্রদান করতে হবে। অন্যথায় তারা বিপথে যেতে পারে। অভিভাবকদেরও দায়িত্বশীল হতে হবে।

আনিকা শাহজাবিন

আনিকা শাহজাবিন

শহুরে এলাকায় অভিভাবকেরা অনেক ব্যস্ত থাকেন। সন্তানদের দেখাশোনা করার প্রয়োজনীয় সময়টুকু অনেক সময় থাকে না। এ জন্য কৈশোরে পদার্পণের সময় যে ধরনের প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়, তা প্রকাশের সুযোগ কম। আবার স্কুলে খোলামেলা আলোচনা করার সুযোগ নেই। স্কুলে এসব বিষয় সম্পর্কে সচেতনতার পরিবেশ সৃষ্টি করা জরুরি। স্কুলে শারীরিক শিক্ষা ক্লাসে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।

শহরের বস্তি এলাকায় সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কাজ করে। তারপরও এসব এলাকায় বাল্যবিবাহের সংখ্যা অনেক বেশি। কম বয়সে সন্তান ধারণ করায় মা ও শিশু স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকছে। এসব বিষয় নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি।
অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হয়। অনেকের পড়াশোনার প্রতি একধরনের বিরূপ মানসিকতা কাজ করে। পড়াশোনার পরিবেশটিকে আরও আনন্দদায়ক ও উপভোগ্য করে তুলতে হবে।

নাফিসা মেহরিন

নাফিসা মেহরিন
শহর ও গ্রামকেন্দ্রিক কিশোর–কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে। মনে করা হয়, বিভিন্ন মাধ্যমে শহরের কিশোরেরা স্বাস্থ্য সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে। কিন্তু তাদের জ্ঞান বাস্তবসম্মত কি না তা যাচাই করা হয় না।
কিশোর–কিশোরীদের অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সংগৃহীত তথ্যের সত্যতা যাচাই না করে বিপথগামী হচ্ছে।
জেনারেশন ব্রেক থ্রুসহ বেশ কয়েকটি এনজিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করে। তবে এর মাধ্যমে পুরো শহর অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক কিশোরের সমস্যা সমাধান হচ্ছে না। জেনারেশন ব্রেক থ্রুর মতো আরও কর্মসূচি হাতে নেওয়া উচিত। এসব বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করলে কিশোরদের জন্য আরও ভালো হবে বলে মনে করি।
কোনো বস্তি এলাকায় বছরে স্কুল খোলা থাকে মাত্র তিন মাস। এ স্বল্প সময়ে প্রজনন–স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন হবে নাকি অন্যান্য শিক্ষা গ্রহণ করবে?
সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি। খোলামেলা আলোচনা করার পরিবেশ নেই বললেই চলে। অভিভাবকদের উচিত তাঁদের সন্তানদের যথাযথ সময় দেওয়া। শিক্ষকদের বন্ধুর মতো হওয়া উচিত। তাহলে ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য সম্পর্কে কিশোরেরা সচেতন হবে ও সুন্দর বাংলাদেশ গঠনে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।

রেবেকা সুলতানা

রেবেকা সুলতানা
বর্তমানে কিশোরদের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ রয়েছে। কিন্তু আমি যখন কিশোরী ছিলাম ওই সময় এ ধরনের কর্মসূচি ছিল না। সমাজে কিছুটা হলেও পরিবর্তন এসেছে।
শিক্ষকেরা কিশোরীদের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে চান না। তবে জেনারেশন ব্রেক থ্রুর মাধ্যমে এসব বিষয় কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। এ বিষয়টিকে প্রকল্প হিসেবে না রেখে একটি স্থায়ী পরিকল্পনা হাতে নেওয়া দরকার। স্কুলগুলোয় পরামর্শ সহায়তার জন্য একজন থাকা উচিত।
বিদ্যালয়ে টয়লেটগুলোর পরিবেশ ভালো নেই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যবহারের অযোগ্য। এগুলো পরিবর্তন হওয়া জরুরি। এ বিষয়ে একটি শিশু বা কিশোরীর জীবনকে সহজ করে দিতে হবে। কোনো মতেই ভুল তথ্য প্রদান করা যাবে না। সঠিক তথ্য ও দিকনির্দেশনা দিয়ে একটি শিশুকে গড়ে তুলতে হবে।

এম এ মান্নান

এম এ মান্নান
স্বাস্থ্য বিষয়কে আলাদাভাবে দেখার সুযোগ নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্যকে সার্বিকভাবে বিবেচনা করে। স্বাস্থ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে। সরকার স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যথেষ্ট আন্তরিক। এ খাতে সরকার সহযোগিতা করছে। অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে। কিন্তু বরাদ্দের অর্থের সঠিক ব্যবহার অনেক সময় হচ্ছে না।
বর্তমানে নতুন বিদ্যালয়গুলোতে আধুনিক টয়লেট স্থাপন করা হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের প্রকল্পে মেয়েদের উপকারের বিষয়ে খোঁজখবর নেন।
অনেকে মনে করেন, কিশোর স্বাস্থ্য নিয়ে শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি কাজ হচ্ছে। কিন্তু দেশের বড় স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলো শহরেই প্রতিষ্ঠিত। গ্রামে যত উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক না কেন শহরের চেয়ে গ্রাম পিছিয়ে থাকবে।
স্কুলগুলোতে টয়লেট সঠিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। এ জন্য শিক্ষকদের সচেতন হওয়া দরকার।

কনিকা ফেরদৌস

কনিকা ফেরদৌস
শহরের বস্তি এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরেও একটি বড়সংখ্যক কিশোর রয়েছে। এরা কোনো না–কোনো কাজের সঙ্গে যুক্ত। এদের
স্বাস্থ্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা উচিত।
রায়েরবাজার ও চাঁদ উদ্যান নামে দুটি বস্তিতে কাজ করেছি। সেখানে প্রায় ৫০ শতাংশ কিশোর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে। তাদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে সামাজিক ও প্রচলিত কুসংস্কার সম্পর্কে জানতে পেরেছি। পরবর্তীকালে তাদের সঠিক তথ্য দিয়ে সহায়তা করা হয়। এ ধরনের জ্ঞান তারা নিজেদের জীবনে প্রয়োগ করতে চাইলেও বাধার সম্মুখীন হয়।
বস্তি এলাকায় ভালো টয়লেটের অভাব রয়েছে। স্কুলগুলোতে প্রায় একই অবস্থা। স্কুলগুলোতে প্রজনন–স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানার সুযোগ, পরিচ্ছন্ন টয়লেট ও স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবস্থা থাকা অত্যন্ত জরুরি।
শহরের বস্তি এলাকায় সরকারি যে স্বাস্থ্যসেবা রয়েছে, সেখানে অনেক কিশোরী যেতে চায় না। এ জন্য তাদের পছন্দ অনুযায়ী জায়গায় যেন এ ধরনের উপকরণ রাখার ব্যবস্থা করা হয়।
সরকারি প্রতিষ্ঠানেও যেন কিশোরীদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করা হয়। তাদের সমস্যার বিষয়গুলো গোপনীয়তার নিশ্চয়তার মাধ্যমে জানা ও সমাধানের দিকনির্দেশনা প্রদান করা উচিত।

জোনায়েদুল ইসলাম

জোনায়েদুল ইসলাম
কিশোর বয়সের সমস্যাগুলো প্রকাশের জন্য আমাদের সমাজে উপযুক্ত পরিবেশ নেই। এ জন্য সমস্যাগুলো সমাধান হওয়ার পরিবর্তে কঠিন আকার ধারণ করে। সামাজিক কুসংস্কারের জন্য এসব বিষয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকের সঙ্গে আলোচনা করতে পারি না।
কয়েকটা বিষয়ে জোর দিলে কিশোরদের সমস্যাগুলো সহজেই সমাধান করা সম্ভব হবে বলে মনে করি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কাজে লাগাতে হবে। শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় সেবা বিদ্যালয়ে রাখতে হবে। এ বিষয়ে আলাদা ক্লাসের ব্যবস্থা করা হলে আরও ভালো হবে।
কিশোর বয়সে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক বন্ধু নির্বাচন। কিশোরেরা বন্ধুদের মাধ্যমে প্ররোচিত হয়। খারাপ বন্ধুর সঙ্গে চলাফেরা করলে
বিপথে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। অনেকে মাদকদ্রব্যে প্ররোচিত করে। এ বিষয়ে কয়েকটি এনজিও কাজ করছে। আরও ব্যাপকভাবে কাজ
করা দরকার।

মাশফিকা জামান সাটিয়ার

মাশফিকা জামান সাটিয়ার
বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের মতো ছেলেদেরও বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। নেদারল্যান্ডস অ্যাম্বাসির একটি খাত হলো যৌন ও প্রজনন–স্বাস্থ্য এবং অধিকার। এর অধীন বর্তমানে প্রায় ১২টি কর্মসূচি চলছে।
কিশোর–কিশোরীদের সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য অবাধ ও সঠিক তথ্য থাকা জরুরি। সরকারের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে, যা প্রশংসনীয়ভাবে কাজ করছে। কিশোর–কিশোরীদের জন্য অ্যাডোলেসেন্ট ফ্রেন্ডলি সার্ভিস নামে একটি কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। ইউনিসেফ
অ্যাডোহার্টস প্রকল্পের মাধ্যমে এটি গোটা দেশেই ছড়িয়ে দেওয়া উচিত।
কিশোর বয়সে শরীরের সঙ্গে মনেও পরিবর্তন আসে। মানসিক দিক ঠিক রাখার জন্য আমাদের তেমন উদ্যোগ নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্কুল হেলথ কর্মসূচির সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকারকে সম্পৃক্ত করতে হবে। শহরকেন্দ্রিক কিশোর–কিশোরীদের বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য স্থানীয় সরকার দায়িত্ব পালন করে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকারের যৌথ উদ্যোগ ও কাজের সমন্বয় থাকা জরুরি।

শার্মিন ফরহাত ওবায়েদ

শার্মিন ফরহাত ওবায়েদ
প্রজনন–স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হলে দুটো বিষয়ে গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। এক. তথ্য প্রদান। দুই. স্বাস্থ্যসেবা ও উপকরণ সরবরাহ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
পাঠ্যবইয়ে প্রজনন–স্বাস্থ্য বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হলেও পড়ানো হচ্ছে না। শিক্ষক ও ছাত্রদের মধ্যেও লজ্জাবোধ কাজ করছে। শহরের কিশোরেরা ইন্টারনেট ব্যবহার করলেও সঠিক দিকনির্দেশনা নেই।
সঠিক তথ্য পেলে সেবার প্রতি চাহিদা সৃষ্টি হবে। তখনই সরকার বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বিষয়টি সমাধানের জন্য এগিয়ে আসবে।
স্কুলগুলোতে ভালো স্যানিটেশনের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। শারীরিক শিক্ষা ও প্রজনন–স্বাস্থ্য সম্পর্কে পড়াশোনা বা আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি করা উচিত। কেবল জিপিএভিত্তিক শিক্ষা প্রদান না করে জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষা প্রদান করতে হবে।

ইকবাল হোসেন

ইকবাল হোসেন
শহরের কিশোরদের নিয়ে কাজ করতে হলে প্রথমে তাদের চিহ্নিত করতে হবে। কিশোরেরা কোথায় বসবাস করে? পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রায় ৪০ শতাংশ কিশোর স্কুলের বাইরে কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িত। যারা কাজ করে তাদের মধ্যে ৮৫ শতাংশই কাজ করে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে।
স্কুলবহির্ভূত কিশোরদের কর্মের সঙ্গে সংগতি রেখে কর্মসূচি প্রণয়ন করতে হবে। অন্যথায় তাদের বড় একটি সংখ্যা সুবিধাবঞ্চিত হবে।
কিশোরদের উপযুক্ত তথ্য বা জ্ঞান দিতে হবে। এসব জ্ঞান বাস্তবজীবনে প্রয়োগের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা বা উপকরণের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে হবে।

মোমেনা খাতুন

মোমেনা খাতুন
শহরে কিশোরদের নিয়ে কাজ করতে হলে বস্তিতে বসবাসকারী কিশোরদের প্রাধান্য দিতে হবে। কারণ, এরাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। শহরের একটি সমৃদ্ধ পরিবারের কিশোর ও বস্তিতে বসবাসকারী কিশোরের জীবন এক হবে না।
এ ধরনের কিশোরেরা প্রায় ক্ষেত্রে শিশুশ্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকে। যৌন হয়রানির শিকার হয়। ফুটপাতে রাত কাটায়। স্যানিটেশনের ব্যবস্থা
নেই। মাদকাসক্ত হয়ে বিকৃত জীবনযাপন করে। এসব বিষয় মাথায় রেখে কিশোরকেন্দ্রিক কর্মসূচি প্রণয়ন করা উচিত। সুস্পষ্ট সরকারি নীতি থাকা দরকার।
কিশোরদের দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে কিশোর কর্নার রয়েছে। শহরের ওয়ার্ড পর্যায়ে এ ধরনের সুবিধা থাকা উচিত।
আলোচনার বিষয়টি এখানেই সীমাবদ্ধ না রেখে প্রচারণার মাধ্যমে গোটা দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। সম্পৃক্ত সব সংস্থার কাজের সমন্বয় ঘটাতে হবে।

ফারিয়া শবনম

ফারিয়া শবনম
কিশোরীদের প্রজনন–স্বাস্থ্য নিয়ে অভিভাবকেরা খোলামেলা আলোচনা করতে আগ্রহী নন। আমার বাবা একজন চিকিৎসক। তিনিও আমাদের সঙ্গে এসব বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করেননি। অন্য সাধারণ পরিবারে তাহলে কী অবস্থা হতে পারে!
সচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। নিয়মিত প্রচার–প্রচারণার মাধ্যমে সামাজিক কুসংস্কার দূর হবে বলে মনে করি। কিশোরেরা যে মাধ্যমগুলো থেকে তথ্য নিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে সেসব মাধ্যম ব্যবহার করা উচিত।

মোহাম্মদ শরীফ

মোহাম্মদ শরীফ
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বর্তমানে যে কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে, সেগুলো উপস্থাপন করা হলে আরও ভালো হতো। কয়েকটি স্থানে কিশোর
কর্নার করা হয়েছে। এদের জন্য আলাদা করে ওয়েবসাইট রয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণায়ের প্রচেষ্টায় জাতীয় কিশোর নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। সবাইকে নিয়ে এটি জাতীয়ভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।
গ্রামীণ পর্যায়ে ইউনিয়ন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কিশোরদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
কিশোর–কিশোরীদের একটা বড় অংশ মাদ্রাসায় শিক্ষা লাভ করছে। এদের নিয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো কর্মসূচি নেই। এটি নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। কারণ, এদের বেশির ভাগই বাল্যবিবাহের শিকার।
সবাইকে কাজ করতে হবে। শহরের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে কিশোর ফ্রাইডে কর্নার চালু করতে হবে। স্কুলপর্যায়ে কিশোরদের প্রয়োজনীয় তথ্য ও সেবা প্রদানের ব্যবস্থা থাকা উচিত।

মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন

মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন
সমাজ ও সংস্কৃতিকে বাদ দিয়ে কোনো কর্মসূচি হাতে নিলে তার ফলাফল খুব একটা ভালো হয় না। প্রজনন–স্বাস্থ্য নিয়ে কিছু বিষয় পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও ফলপ্রসূ হয়নি। কারণ, এসব বিষয় আমাদের সমাজে খোলামেলা আলোচনা করার পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি।
কিন্তু আমরা সামাজিক কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ন্যাশনাল কারিকুলাম অ্যান্ড টেক্সট বুক বোর্ডের (এনসিটিবি) সঙ্গে এক বছর
ধরে নিবিড়ভাবে কাজ করছি। এ বিষয়ে প্রকাশিত ডকুমেন্টটি কয়েকবার করে যাচাই–বাছাই করা হয়েছে।
প্রজনন–স্বাস্থ্য ছাড়াও কিশোরদের সার্বিক সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করা উচিত। তথ্যভান্ডারকে সমৃদ্ধ ও সহজলভ্য করা জরুরি। তাহলে সঠিক উপায়ে যেকোনো ধরনের সমস্যা সহজভাবে সমাধান করা সম্ভব।
লিঙ্গবৈষম্য দূর করে সবকিছু সম্পর্কে জানার পর্যাপ্ত সুযোগ দিতে হবে। এতে তারা নিজেরা নিজেদের স্বাস্থ্য নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
টয়লেটের বিষয়ে কথা হয়েছে। এ বিষয়ে কাজ চলছে। প্রতিটি স্কুলে আধুনিক টয়লেট স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ছেলেমেয়ে ও বিশেষ প্রয়োজনে আলাদা টয়লেট ব্লক রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
কৈশোর যৌনস্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ২০২১ সাল থেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। এটি পরিকল্পনাধীন।
স্কুলে ঝরে পড়া কমানোর জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চলে দুপুরের খাবার সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্কুলগুলোতে দুজন করে কাউন্সিলর নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আবুল কালাম আজাদ

আবুল কালাম আজাদ
শিক্ষা যেকোনো দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। শিক্ষার মান সঠিক থাকলে যেকোনো সমস্যা সমাধান করা সহজ হয়। প্রত্যেক শিশুর উচিত স্কুলে যাওয়া।
সে ব্যবস্থা রাষ্ট্রকে করতে হবে। শিক্ষা তাদের অধিকার। তাহলে যেকোনো কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। যেকোনো কর্মসূচি গ্রহণ করার আগে সবার জন্য সহজলভ্যতার বিষয়টি মাথায় রাখতে হয়।
কিশোরীদের বর্তমানে যে সমস্যা হচ্ছে, আগেও এ ধরনের সমস্যা ছিল। ওই সময় মানুষ প্রকৃতির ওপর নির্ভর করেছে। এখন চায় না। নিজেই নিজের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। বর্তমানে মানুষ কিছুটা হলেও সচেতন হয়েছে।
স্যানিটারি ন্যাপকিন প্রথম আবিষ্কার হয় আমেরিকায়। সেখানেই এর ব্যবহার শুরু হয়। প্রথম দিকে পত্রপত্রিকায় এর বিজ্ঞাপন প্রকাশ
করা নিষেধ ছিল। কিন্তু বর্তমানে সমাজে পরিবর্তন এসেছে।
সমাজ বা রাষ্ট্র একটি যন্ত্র নয়। আমরা যা চাই, সঙ্গে সঙ্গে তা হয়ে যাবে বিষয়টি এমন নয়। যেকোনো বিষয় পরিবর্তন হতে সময় লাগবে। তবে এসব বিষয় নিয়ে সমাজ, পরিবার ও স্কুলে খোলামেলা আলোচনা করার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এতে কিশোরেরা এসব বিষয় জানতে পারবে।
ওষুধপথ্যসহ প্রতিরোধমূলক পরামর্শ স্বাস্থ্যসেবার আওতাভুক্ত। কেউ সেবা নিতে হাসপাতালে না এলে বাড়িতে গিয়ে সেবা প্রদান করতে হবে। একইভাবে কেউ স্কুলে আসা বন্ধ করে দিলে তাকে স্কুলে উপস্থিত করার ব্যবস্থা করা উচিত।
অনেকে পরীক্ষার ভয়ে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এ জন্য শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও আনন্দদায়ক করতে হবে। মাথায় রাখতে হবে শিক্ষার্থীরা যেন সঠিক শিক্ষা লাভ করে।
স্বাস্থ্য খাতে যেকোনো ধরনের বিনিয়োগ অন্য যেকোনো খাতের চেয়ে লাভজনক। দেশের প্রত্যেকটি মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা গেলে অন্যান্য খাতে চাপ কমে যাবে।

আব্দুল কাইয়ুম
িকশোর–কিশোরীদের স্বাস্থ্য িনয়ে কয়েকটি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। এগুলো সরকারি পর্যায়ে নীতিনির্ধারণ ও পরিকল্পনা প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য প্রথম আলোর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

যাঁরা অংশ নিলেন
এম এ মান্নান: মাননীয় সাংসদ, প্রতিমন্ত্রী, অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়
আবুল কালাম আজাদ: মহাপরিচালক, ডাইরেক্টরেট জেনারেল অব হেলথ সার্ভিসেস, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন: পরিচালক, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক অধিদপ্তর
মোহাম্মদ শরীফ: পরিচালক, মা ও শিশুস্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, ঢাকা
ইকবাল হোসেন: শিক্ষা বিশেষজ্ঞ, ইউনিসেফ
মাশফিকা জামান সাটিয়ার: সিনিয়র পলিসি অ্যাডভাইজার (এসআরএইচআর অ্যান্ড জেন্ডার) অ্যাম্বাসি অব দ্য কিংডম অব দ্য নেদারল্যান্ডস
ফারিয়া শবনব: অভিনেত্রী
ইখতিয়ার উদ্দিন খন্দকার: হেড অব হেলথ প্রোগ্রাম, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ
শার্মিন ফরহাত ওবায়েদ: প্রোগ্রাম কো–অর্ডিনেটর, ইউনাইট ফর বডি রাইটস বাংলাদেশ অ্যালায়েন্স (ইউবিআর)
মোমেনা খাতুন: হেলথ টেকনিক্যাল স্পেশালিস্ট, গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা
রেবেকা সুলতানা: প্রধান শিক্ষক, তেজগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়
কনিকা ফেরদৌস: ম্যানেজার, সেভ দ্য চিলড্রেন
আনিকা শাহজাবিন: সদস্য, ইউনাইটেড ন্যাশনস ইয়ুথ অ্যাসোসিয়েশন প্রোগ্রাম (ইউএনওয়াইএপি)
মুহাম্মদ মুনির হোসেন: প্রোগ্রাম অ্যানালিস্ট, জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ)
জোনায়েদুল ইসলাম: শিক্ষার্থী, দারুন নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদ্রাসা
নাফিসা মেহরিন: শিক্ষার্থী, নবম শ্রেণি, হলিক্রস গার্লস হাইস্কুল
সঞ্চালক
আব্দুল কাইয়ুম: সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো