Thank you for trying Sticky AMP!!

শান্তি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে এগোবে বাংলাদেশ

ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে আমার প্রথম বাংলাদেশ সফর শেষ হয় এ বছরের মে মাসে। এই সফরে সুন্দর এ দেশটির সরকার ও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে যে উষ্ণ আতিথেয়তা পেয়েছি, সে জন্য আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।

বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই ইউএসএআইডি এ দেশের মানুষের সঙ্গে কাজ করে আসছে। দীর্ঘদিনের সম্পর্কের যে বলিষ্ঠ শক্তি তার বদৌলতে আমরা যৌথভাবে বেশ কিছু কার্যকর কর্মসূচি সম্পন্ন করতে পেরেছি। এ দেশের মানুষের সহনশীলতা ও ঐকান্তিকতার জোরে উন্নয়নের ক্ষেত্রে কিছু বিস্ময়কর অগ্রগতি হয়েছে।

বাংলাদেশে মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার ৬০ শতাংশের বেশি কমেছে। ধানের উৎপাদন বেড়েছে তিন গুণ। এক দশক ধরে মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি গড়ে ৬ শতাংশের ওপরে আছে।

বাংলাদেশ জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণ শুরু করার শর্তগুলো পূরণ করতে পেরেছে। আগামী তিন বছরের মধ্যে দেশটি একটি মধ্য-আয়ের দেশ হওয়ার লক্ষ্য স্থির করেছে।

উন্নয়ন এবং অন্যান্য সহযোগিতা কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশের এই অসাধারণ উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পেরে যুক্তরাষ্ট্র সরকার গর্বিত। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও ব্যক্তির অধিকারের মতো অভিন্ন মূল্যবোধের অংশীদার হতে পেরেও আমরা গর্ববোধ করি। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশেরই জন্ম হয়েছে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে।

মার্কিন কংগ্রেসে আট বছর থাকার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, গণতন্ত্র কখনো কখনো গোলযোগ ও ঝামেলাপূর্ণ হতে পারে। তবে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে জোরদার বিতর্ককে উৎসাহিত করা এবং সাধারণ মানুষ, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা দরকার, যাতে করে তারা মুক্তভাবে মত প্রকাশ করতে পারে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের মূল চেতনায় প্রোথিত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীসহ সব নাগরিককে তাদের নিজেদের ভবিষ্যতের বিষয়ে কথা বলার সুযোগ দেয়—এমন একটি মুক্ত ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকারকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে। এ বিষয়গুলো আমি আশা করি, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে সব নাগরিক অবাধে অংশ নেবে এবং সে নির্বাচন হবে নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক। নির্বাচনের আগে সব শান্তিকামী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের প্রচারণায় অংশ নিতে পারার বিষয়টিও খুব গুরুত্বপূর্ণ।

পরিশেষে, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রতি অসাধারণ সহানুভূতি প্রদর্শনের জন্য আমি বাংলাদেশের সব নাগরিককে ধন্যবাদ জানাতে চাই। ২০১৭ সালের আগস্ট মাস থেকে বাংলাদেশে আরও প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু এসেছে। আমি কক্সবাজার গিয়েছিলাম। সেখানে বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলে যেভাবে এসব মানুষের প্রাণ রক্ষায় মানবিক তৎপরতা চালাচ্ছে, তা দেখে আমি সত্যিই অভিভূত। সরকার রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় মানুষকেও সহযোগিতা করছে। বর্ষা ও ঘূর্ণিঝড়ের আসন্ন মৌসুমে রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় মানুষ উভয়ের কল্যাণে আমাদের মিলিত তৎপরতা হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সরকারি কর্মকর্তা ও সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনায় আমি রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, সম্মানের সঙ্গে এবং নিরাপদে প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ সরকারের অঙ্গীকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সন্তুষ্টির কথা পুনর্ব্যক্ত করেছি। মিয়ানমার সফরে গিয়েও আমি একই কথা বলেছি। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরের মানুষ তাদের ফিরে যাওয়ার জন্য যেসব বিষয় বিবেচনা করা দরকার বলে জানিয়েছে, সেগুলোও মিয়ানমারের কাছে আবার তুলে ধরেছি।

আপনাদের আতিথেয়তার জন্য আবারও ধন্যবাদ।

বাংলাদেশের নেতৃত্ব এবং স্বপ্নের দিকে লক্ষ রেখে আমি আস্থাশীল যে এ দেশের সব মানুষের শান্তি ও উন্নয়নের বিষয়ে আমাদের যে অভিন্ন লক্ষ্য, তা আমরা পূরণ করতে পারব।

মার্ক গ্রিন ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) অ্যাডমিনিস্ট্রেটর