Thank you for trying Sticky AMP!!

সংকট সমাধানে জাতিসংঘের ভূমিকা দরকার

কাশ্মীরের জনগণের ওপর নেমে আসা নিপীড়নের অবসানে জাতিসংঘের উদ্যোগ নেওয়া অতি জরুরি হয়ে পড়েছে। ছবি: রয়টার্স

সত্তর বছরের বেশি সময় ধরে ভারতের কাশ্মীরে সন্ত্রাস, হত্যা, নির্যাতন, গুমের মতো ঘটনা চলে আসছে। সুদীর্ঘ কালের এই সংকট থেকে স্থানীয় মানুষকে রেহাই দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই চেষ্টা–তদবির বাড়াতে হবে। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা ইউএনএইচসিআর ২০০৮ ও ২০০৯ সালে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যাতে দেখা যাচ্ছে এই সময়কালে কাশ্মীরে ব্যাপক মাত্রায় অপহরণ, খুন, গুম ও যৌন সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

এ অবস্থায় কাশ্মীরের জনগণের ওপর নেমে আসা নিপীড়নের অবসানে জাতিসংঘের উদ্যোগ নেওয়া অতি জরুরি হয়ে পড়েছে। এ উদ্যোগ মানে অবশ্যই এটা নয় যে ভারত ও পাকিস্তানের ওপর জাতিসংঘ কোনো সমাধানসূত্র চাপিয়ে দেবে। তবে সেখানকার রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলায় এবং সেখানে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি স্থাপনে জাতিসংঘের একজন বিশেষ দূত থাকা দরকার। 

১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় সংঘাতের শুরু। ওই বছর কাশ্মীরের মহারাজা কাশ্মীরিদের স্বাধীনতার লক্ষ্য বিসর্জন দিয়ে ভারতের সঙ্গে এই শর্তে যুক্ত হন যে ভারত সরকার পাকিস্তানের আদিবাসীদের দখলাভিযান থেকে তাঁকে সুরক্ষা দেবে। এর ফল হিসেবে কাশ্মীর দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেল। এক ভাগ হলো ভারতের নিয়ন্ত্রণে। আরেক ভাগ পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে। এর পরে এই এতগুলো বছরে কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তান দুবার যুদ্ধে জড়িয়েছে এবং বহুবার যুদ্ধ লাগার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বেশ কয়েকবার এই দ্বন্দ্বের মধ্যে চীনও জড়িয়েছে। ১৯৮৮ সালে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর উপত্যকায় কয়েকটি সশস্ত্র গ্রুপ ধারাবাহিক বোমা হামলা শুরু করে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন ঘোষণা করেছিল। সেই আন্দোলন আজও জারি আছে। 

এই দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। ভূস্বর্গখ্যাত এই জনপদে যে প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে, তা স্থানীয় উন্নয়নের কাজে ব্যয় না হয়ে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এগিয়ে থাকার জন্য সশস্ত্র গ্রুপগুলো অস্ত্র কেনায় ব্যয় করছে। এই সংঘাতের ফলে ধর্ম–বর্ণনির্বিশেষে সব ধরনের সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের নিজস্ব সম্পদ থাকার পরও তারা দারিদ্র্যের শিকার হচ্ছে। 

কাশ্মীর বিতর্ক অবসানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেছে। কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ মর্যাদা নির্ধারণে জাতিসংঘ একটি গণভোট নেওয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। এ সমস্যা সামরিকভাবে সমাধান করা যাবে না—এটি জানার পরও ভারত গণভোটবিষয়ক ওই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে। 

২০০৩ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ এ সংকট অবসানে চার ধাপের একটি রাজনৈতিক সমাধান সূত্র পেশ করেছিলেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, প্রথম ধাপে, গণভোটের বিষয়ে জোরাজুরি না করে ভারত ও পাকিস্তানকে প্রথম আলোচনায় বসতে হবে। দ্বিতীয় ধাপে, দ্বিপক্ষীয় বৈরিতার প্রধান কারণ হিসেবে কাশ্মীর ইস্যুকে স্বীকার করে নিতে হবে। তৃতীয় ধাপে, যে বিষয়গুলো উভয় পক্ষের কাছে অগ্রহণযোগ্য তা শনাক্ত এবং দূর করতে হবে। চতুর্থ ধাপে, দুই পক্ষের কাছে, বিশেষ করে কাশ্মীরিদের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সমাধান প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের চেষ্টা করতে হবে। 

মোশাররফের এ প্রস্তাবের পর দুই দেশ একটি যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছিল এবং উভয় দেশের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠকও হয়েছিল। কিন্তু একটি সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত এ উদ্যোগ ভেস্তে দেয়। প্রক্রিয়াটি পুনরায় এগিয়ে নেওয়ার জন্য পরে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাঁরা ব্যর্থ হন। 

কাশ্মীর ইস্যুতে আমি নিজেও কিছুদিন সম্পৃক্ত ছিলাম। গত বছর এ নিয়ে ভারত এবং পাকিস্তানের জ্যেষ্ঠ রাজনীতিকদের সঙ্গে আমার বৈঠকও হয়েছে। আমি জানি কাশ্মীর সমস্যাকে ভারত সম্পূর্ণ দ্বিপক্ষীয় ইস্যু বলে মনে করে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ভারতকে অবিলম্বে বিষয়টি নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। যদি তারা তা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে অবশ্যই এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে হস্তক্ষেপ করতে হবে। 

বিশেষ করে ভারতশাসিত কাশ্মীর এবং পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরের মধ্যবর্তী ‘লাইন অব কন্ট্রোল’-এর বিষয়টি দ্রুত সমাধান করতে হবে। এই সীমানারেখার চূড়ান্ত ফয়সালা হওয়া দরকার।

কাশ্মীরে আমার সর্বশেষ সফরের সময় আমি দেখেছি সেখানে চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। বিশেষ করে গত বছরের অক্টোবরে কাশ্মীরের বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা রদ করার পর সেখানে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে। আমি সেখানে গিয়ে দেখেছি সেখানে নিরাপত্তা বাহিনী গণগ্রেপ্তার করছে। সব ধরনের সভা–সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে এবং ইন্টারনেট পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। 

এ অবস্থায় আমি জাতিসংঘকে সেখানে বিশেষ দূত নিয়োগের আহ্বান জানাই। একই সঙ্গে জাতিসংঘের মহাসচিবকে কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের দুঃখ দূর করতে বিশেষ উদ্যোগ নিতেও আহ্বান জানাই।

ইংরেজি থেকে অনূদিত। স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট


কেজেল মাগনে বোনদেভিক নরওয়ের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং অসলো সেন্টারের বর্তমান এক্সিকিউটিভ চেয়ার