Thank you for trying Sticky AMP!!

সংঘাতের সুযোগ নিতে পারে সাম্প্রদায়িক শক্তি

রানা দাশগুপ্ত

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র পক্ষকাল বাকি আছে। মোটামুটি এই পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশ আগের তুলনায় ভালো আছে বলে আমি মনে করি। ইতিমধ্যে দেশের দু-একটি জায়গায় সংখ্যালঘুদের ওপর বিচ্ছিন্ন হামলার ঘটনা ঘটেছে। এটিকে কেবলই বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে আপাতত ধরে নিচ্ছি।

তবে আজকের এই পরিস্থিতি যদি নির্বাচনের পরে পর্যন্ত বিদ্যমান থাকে, তাহলে এতটুকু বলা যেতে পারে, স্বাধীনতার পর বিশেষ করে ১৯৯০ সালের পর এই সময়কালের মধ্যে এটাই হবে সর্বোত্তম ইতিবাচক পরিবেশ। তবে প্রশ্ন হতে পারে, এই পরিবেশ নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কোনো ভূমিকা লক্ষ করছি কি না। নির্বাচনের পূর্বাপর সময়ে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইসির সঙ্গে দেখা করেছি। আমাদের শঙ্কা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছি।

এবারই সর্বপ্রথম ইসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি চিঠি দিয়েছে, তাতে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এর আলোকে আমরা লক্ষ করেছি, র‍্যাবের মহাপরিচালক ও পুলিশের আইজি পৃথকভাবে একদিকে আমাদের শঙ্কা ও উৎকণ্ঠার কথা জানতে চেয়েছেন। অন্যদিকে শঙ্কা ও উদ্বেগ নিরসনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কী করতে পারে, সে বিষয়ে আমাদের মতামত চেয়েছেন।

কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী বৈঠকে আমরা আমাদের মতামত জানিয়েছি। তাঁদের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন জেলা পর্যায়ে র‍্যাব ও পুলিশ প্রশাসন আমাদের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছেন। এ বৈঠকগুলোর মধ্যে একটি বিষয় স্থির হয়েছে, নির্বাচনে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিদের মধ্যে একটি ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে তোলা, যা সমন্বিত পদক্ষেপ।

বস্তুতপক্ষে আলোচনা যা-ই হোক, যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ নির্বাচনের পূর্বাপর সময়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তবে আমরা মনে করি শঙ্কা ও বিপর্যয়ের যে কথাটি আমরা বলছি, তা থেকে উদ্ধার পাওয়া সম্ভব।

এত সবের মধ্যেও একটি শঙ্কা আছে। রাজনৈতিক দল যারা নির্বাচনের মাঠে আছে, তাদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষ যদি বৃদ্ধি পায়, পরিস্থিতি নাগালের বাইরে যায়, তবে সেই সুযোগ নিতে পারে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি। আগের মতোই সংখ্যালঘুদের টার্গেট করে ঝাঁপিয়ে পড়া অসম্ভব নয়। সিইসি কয়েক দিন আগে যে তৃতীয় শক্তির সন্ধানের কথা উল্লেখ করেছেন, আমরাও তার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে চাই। কারণ, নির্বাচনের সুযোগ নিয়ে একাত্তরের পরাজিত সাম্প্রদায়িক অপশক্তি ও তাদের প্রেতাত্মারা দেশ থেকে সংখ্যালঘুদের বিতাড়নে তাদের ধারাবাহিক নীলনকশার অংশ হিসেবে এই নির্বাচনের সময়টাকে বেছে নিয়েছে।

যদিও আমরা জানি, ভূমি দখল, উপাসনালয়ে হামলা, ধর্ষণ ইত্যাদি স্বাভাবিকভাবে সাংবৎসরিক ঘটনায় রূপান্তরিত হয়েছে। এটার জন্য দায়ী সামাজিক দুর্বৃত্তরা, যারা রাজনৈতিক মহলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকে। তাই আমরা শুধু ইসি বা সরকার নয়, অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে আহ্বান জানাতে চাই, নির্বাচনের পূর্বাপর ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিতকরণে তাদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা, গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি পালন করতে হবে।

ইতিমধ্যে আমরা সাংগঠনিকভাবে কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল গঠন করেছি, হেল্পলাইন চালু করেছি এবং বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষকে বৈঠকে অবহিত করেছি।

আমরা চাই, সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। নির্ভয়ে, নির্বিঘ্নে, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে সর্বস্তরের জনগণ অবাধে তাদের ভোটাধিকার যাতে প্রয়োগ করতে পারে, সে পরিবেশ নিশ্চিত হোক। তবেই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির সোপান আরেক ধাপ উন্নীত হবে বলে আমার বিশ্বাস।

লেখক: সাধারণ সম্পাদক, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ