Thank you for trying Sticky AMP!!

সব দোষ বুদ্ধির!

ছয় বছরের ভাইজিকে ধর্ষণের ঘটনায় আবুল মনসুর গ্রেপ্তার হওয়ার পর পুলিশের কাছে বলেছেন, এ ঘটনার পেছনে তাঁর কোনো হাত ছিল না। সব দোষ তাঁর বুদ্ধির। মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি চেপেছিল বলেই না তিনি ওই খারাপ কাজ করেছেন। তা না হলে কি আর এমন ঘটনা ঘটে?

আবুল মনসুরের বাড়ি কক্সবাজার জেলায়। চকলেট-চিপস কিনে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে গত ২৮ মার্চ তিনি ওই শিশুকে ধর্ষণ করেন। শুধু তা-ই নয়, এ ঘটনা যাতে কাউকে বলে না দেয়, এ জন্য নানা ধরনের ভয়ভীতিও দেখান শিশুটিকে। তার মানে বুদ্ধিটা দুষ্ট হয়ে মাথায় চেপে বসেই ছিল। আর তাই তিনি এসব করেন। ২১ মে প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশ পায় আবুল মনসুরের এই অপকর্মের খবর।

আবুল মনসুরের কথার মানে যা দাঁড়াচ্ছে, দেশে যা কিছু অপকর্ম ঘটে, তা ওই বুদ্ধি দুষ্ট হয়ে ওঠার কারণেই ঘটে। বুদ্ধি দুষ্ট হয়ে উঠলে মানুষের কী করার আছে? সে তো চলে তার বুদ্ধি অনুযায়ী। বাহ্, কী চমৎকার যুক্তি! তার মানে আমাদের দেশের যেসব পুরুষ নারীদের উত্ত্যক্ত করেন, যৌন হয়রানি করেন আর ধর্ষণ করেন, তার জন্য দায়ী হচ্ছে ওই বুদ্ধির দুষ্ট হয়ে মাথায় চেপে বসা।

মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি চেপে বসার কারণেই বোধ হয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী তনুর ধর্ষণকারীরা তাঁকে শুধু ধর্ষণই করেনি, একবারে মেরেই ফেলেছে। এমনিতে তারা তা হলে খুব ভালো মানুষ। দুষ্ট বুদ্ধি চেপেছিল বলেই না খাদিজাকে তাঁর প্রেমিক বদরুল ইচ্ছেমতো কুপিয়েছিল। নইলে তার মতো সোনার ছেলে কয়টা আছে? দুষ্ট বুদ্ধির কারণেই পরিবহনশ্রমিকেরা রূপাকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছে। নইলে তো তারা নিরীহ গরিব মানুষ। তারা কি আর এমন কাজ করতে পারে?

ব্যাপারটা বোধ হয় বেশ ঝুঁকিপূর্ণই হয়ে গেল। কেননা, কখন কার মাথার বুদ্ধি দুষ্ট হয়ে উঠবে, তা কে বলতে পারে। আর দুষ্ট বুদ্ধির কারণে কে, কখন, কী অপকর্ম করে বসে, তারও তো কোনো ঠিক ঠিকানা থাকবে না।

নিজের অপকর্ম ঢাকার জন্য হায়রে কী কুযুক্তি। এ রকম আরও অনেক কুযুক্তি রয়েছে। যেমন কোনো নারী যখন যৌন নিগ্রহ বা ধর্ষণের শিকার হন, তখন অনেকে এই যুক্তি দেন যে মেয়েটি শালীন পোশাক পরা ছিল না, তাই তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বা মেয়েটির আচার-আচরণ আগে থেকেই ভালো নয়, তিনি উসকেছেন বলেই না তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে।

আসলে এটা একটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে যে মেয়েদের সঙ্গে পুরুষেরা যদি কোনো অপকর্ম করে, তার জন্য মেয়েদেরই দায়ী করা। যদি কোনো নারীকে তাঁর স্বামী তালাক দেন, তালাকের জন্য নারীকেই দায়ী করা হয়। কোনো স্বামী যদি পরকীয়ায় লিপ্ত হন, তার জন্যও তাঁর স্ত্রীকে দায়ী করা হয়। বলা হয়, স্বামীকে কষ্ট দেন বলেই স্বামী অন্য নারীর দিকে ঝুঁকেছেন বা স্বামীকে ধরে রাখার গুণ স্ত্রীটির নেই। সন্তানেরা পরীক্ষায় খারাপ করলে বা উচ্ছন্নে গেলে দোষ হয় মায়ের, বাবার নয়। আর দৈবাৎ যদি পুরুষের দোষ প্রমাণিত হয়ে যায়, তাহলে সেই দোষকে লঘু করে দেখা হয়। ব্যাপারটা এমন, পুরুষের দোষ আসলে কোনো দোষ নয়।

আর এখন আবুল মনসুর তো এমন লোকদের জন্য সমাধান বাতলে দিলেন। সব দোষ বুদ্ধির ওপর চাপিয়ে দিলেই ল্যাঠা চুকে যাবে। বুদ্ধি কখন দুষ্ট হয়ে উঠবে, তার ছাইপাঁশ কি আর পুরুষেরা জানে? যখন তাদের বুদ্ধি দুষ্ট হবে, তখন তারা দুষ্ট কাজ করবে। আবার বুদ্ধি যখন লক্ষ্মী হবে, তখন তারাও লক্ষ্মী ছেলে হয়ে যাবে।

এসব কুযুক্তি দেনেওয়ালাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। এদের প্রশ্রয় দেওয়া বন্ধ করতে হবে। আর কোনো আবুল মনসুর যাতে শিশু ধর্ষণ করতে না পারে, তার জন্য এদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা দিতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। সব কুযুক্তি তখন হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে।
রোকেয়া রহমান: সাংবাদিক