Thank you for trying Sticky AMP!!

সাংসদ ও ‘ডায়নামিক’ ওসি হওয়ার সহজ পাঠ

সাংসদ শাহীন চাকলাদার

বাংলাদেশে পুলিশের থানার সংখ্যা কত? উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী ৬৪৯টি। পুলিশের জনসংযোগ বিভাগে কাজ করেন এমন একজনকে ফোন করে জানা গেল সংখ্যাটি ‘প্লাস-মাইনাস’ তাই হবে। ধরে নিতে পারি বাংলাদেশে সাড়ে ৬০০–এর মতো ওসি রয়েছেন। এই হিসাব-নিকাশ খোঁজ করার কারণ একজন সাংসদের সঙ্গে একজন ওসির টেলিফোন আলাপ। এই আলাপটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বের হয়েছে। সেখানে একজন ওসিকে কতটা ‘ডায়নামিক’ হতে হয় এবং সে জন্য কী কী করতে হয়, তার কিছু ‘সহজ পাঠ’ দিয়েছেন সাংসদ। ‘ডায়নামিক’ ওসির যে ধারণা সাংসদ দিয়েছেন, দেশের বাকি ওসিরা তাকে কীভাবে নিচ্ছেন, সেটা সত্যিই এক কৌতূহলের বিষয়।    

যে টেলিফোন আলাপটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তা অনেকেই শুনেছেন। যাঁরা শোনেননি, তাঁদের জন্য সংক্ষেপে এই আলাপের বিষয়টি তুলে ধরছি; একজন সাংসদ ফোন করে ‘সাতবাড়িয়ার সাইফুল্লাকে’ মামলা দিয়ে ফাঁসানোর জন্য একজন ওসিকে ‘নির্দেশ’ দিচ্ছেন। ওসির প্রতি সাংসদের পরামর্শ হচ্ছে, থানায় বোমা মেরে অথবা সিভিল পোশাকের পুলিশকে দিয়ে কোনো ইটভাটায় হামলা করে যেন সাইফুল্লার বিরুদ্ধে ডাকাতির উদ্দেশ্যে হামলার মামলা করা হয়। এবং ওসির উদ্দেশে তিনি বলেছেন, এটা করতেই হবে, কারণ কেউ ওসি হলে তাঁকে ডায়নামিক হতে হয়। (‘ওসি হলি, ওসি কিন্তু ডায়নামিক হইতে অয়।’)

যে সাংসদ ও ওসির মধ্যে এই আলাপ হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ ও সংবাদমাধ্যমে ধরে নেওয়া হয়েছে, তাঁরা দুজন অবশ্য বিষয়টি স্বীকার করেননি। এই দুজনের একজন, যশোর ৬ (কেশবপুর) আসনের সাংসদ শাহীন চাকলাদার এই টেলিফোন আলাপকে ‘টেম্পারিং’ করে বানানো বলে দাবি করেছেন। শাহীন চাকলাদারের বক্তব্য হচ্ছে, তিনি যে এলাকার সাংসদ তা জামায়াত অধ্যুষিত। কেউ টেম্পারিং করে এই টেলিফোন সংলাপটি বানিয়েছে। ওসির সঙ্গে তাঁর এ ধরনের কোনো কথা হয়নি।

আর অন্যজন, কেশবপুর থানার ওসি জসিম উদ্দিন তাঁর এলাকার স্থানীয় সাংসদের সঙ্গে এ ধরনের কোনো টেলিফোন আলাপের কথা ‘স্মরণ’ করতে পারেননি। আমরা ওসির বাস্তব পরিস্থিতির কথা বিবেচনায় নিতে পারি। স্থানীয় সাংসদ যখন টেলিফোন আলাপের কথা অস্বীকার করেন, তখন ওসির যে তা মনে থাকবে না, এটাই তো স্বাভাবিক!

সাংসদ হিসেবে তিনি যে দায়মুক্তি পান, এই টেলিফোন আলাপের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। কিন্তু এ জন্য তিনি কোনো শাস্তি পাবেন, এমন আশা কি আমরা করতে পারি?

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, সাংসদ যাঁর বিরুদ্ধে মামলা করতে বলেছেন, সেই সাইফুল্লাহ ওই এলাকার একজন পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী। পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) সঙ্গে তিনি কাজ করেন। সম্প্রতি ওই এলাকায় ‘মেসার্স সুপার ব্রিকস’ নামে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা একটি ইটভাটার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করেন সাইফুল্লাহ। আদালত ভাটা বন্ধের নির্দেশনাও দেন। আর এতেই ক্ষিপ্ত হন সাংসদ শাহীন চাকলাদার। (প্রথম আলো, ৩০ জানুয়ারি)

সাংসদ ও ওসির টেলিফোন আলাপ মানে একজন আইনপ্রণেতার সঙ্গে একজন আইন প্রয়োগকারীর আলাপ। এমন একটি আলাপে আইনপ্রণেতা শেখাচ্ছেন একজন আইন প্রয়োগকারী কীভাবে ‘ডায়নামিক’ হতে পারেন এবং এর একটি সহজ পথ হচ্ছে, আইনপ্রণেতার কথা মেনে থানায় বোমা মেরে অথবা কোথাও হামলা করে কাউকে মামলা দিয়ে ফাঁসানো!

এই আইনপ্রণেতা নিজে যে অনেক ‘ডায়নামিক’ তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ, তিনি জানেন কীভাবে তা হতে হয় এবং সেই শিক্ষাই তিনি থানার একজন ওসিকে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। একজন ওসিকে ফোন করে সাংসদ যা বলেছেন, তাকে গুরুতর অসদাচরণ বলে মনে করেন সংসদ ও আইন বিষয়ের গবেষকেরা। সাংসদ হিসেবে তিনি যে দায়মুক্তি পান, এই টেলিফোন আলাপের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। কিন্তু এ জন্য তিনি কোনো শাস্তি পাবেন, এমন আশা কি আমরা করতে পারি? তিনি যে কত বড় ‘ডায়নামিক’ সাংসদ তার প্রমাণ হয়তো সামনে মিলবে যখন দেখা যাবে যে ‘গুরুতর অসদাচরণ’ করেও তিনি বহাল তবিয়তেই আছেন।

পুলিশ বিভাগের একজন সদস্য, যিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হন, তিনি নিশ্চয়ই চৌকস ও উদ্যমী। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই আরও উন্নতির সুযোগ থাকে। এটা এক অব্যাহত প্রক্রিয়া। আর কাজের ক্ষেত্রে বা পেশাগত জীবনে উন্নতি ও সাফল্য তো আমরা সবাই চাই এবং সে জন্য পথের সন্ধান ও ‘সহজ পাঠ’ খুঁজি। এখন বাংলাদেশের ওসিরা যদি সাংসদের দেখানো পথে ‘ডায়নামিক’ হওয়ার চেষ্টা শুরু করেন, তবে পরিস্থিতি কী দাঁড়াতে পারে!

এ কে এম জাকারিয়া প্রথম আলোর উপসম্পাদক

akm.zakaria@prothomalo.com