Thank you for trying Sticky AMP!!

সালমানকে সহজে ছেড়ে দেওয়া হবে না

সাংবাদিক জামাল খাসোগি ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান

তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটে নিহত হওয়া সৌদি ভিন্নমতাবলম্বী ও ওয়াশিংটন পোস্ট–এর কলাম লেখক জামাল খাসোগি এবং তাঁর বাগদত্তা হাতিস সেনগিজের গড়ে তোলা মানবাধিকার সংগঠন ডেমোক্রেসি ফর দ্য আরব ওয়ার্ল্ড নাউ (ডিএডব্লিউএন, সংক্ষেপে ‘ডন’) গত সপ্তাহে ওয়াশিংটন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এবং ২৮ জন ঊর্ধ্বতন সৌদি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জামাল খাসোগিকে হত্যার অভিযোগ করে একটি মামলা করেছে। ২০১৮ সালে ইস্তাম্বুলে খাসোগিকে হত্যার মূল হোতা মোহাম্মদ বিন সালমান বিচারের নামে একটি প্রহসন পাতিয়ে তাঁর নিজের আটজন কর্মকর্তাকে ফাঁসিয়ে নিজে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকেছেন। সালমান ও আসল অপরাধীদের যাতে যুক্তরাষ্ট্রে এনে বিচারের মুখোমুখি করা যায়, সে জন্য আমরা এ মামলা করেছি।

কনস্যুলেট ভবনের মধ্যে তুর্কি গোয়েন্দাদের পেতে রাখা রেকর্ডিং ডিভাইস, নজরদারি ক্যামেরার ভিডিও চিত্র, মোবাইল কথোপকথনের রেকর্ড, ফ্লাইট রেকর্ড, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এবং আমাদের সিআইএসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এটি দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটেই খাসোগিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। অসংখ্য অকাট্য প্রমাণের মুখে সৌদি সরকার একপর্যায়ে গিয়ে খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছে বলে স্বীকার করলেও তাঁর দেহাবশেষ কোথায় রাখা হয়েছে, তা স্বীকার করেনি। এ হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা ও পরিকল্পক যে মোহাম্মদ বিন সালমান ও তাঁর জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা সাউদ আল কাহতানি, সে কথাও সরকারের তরফ থেকে স্বীকার করা হয়নি।

খাসোগি হত্যাকাণ্ড হাতিস সেনগিজের কাছ থেকে চিরতরে এমন একজন মানুষকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে, যাঁকে নিয়ে সেনগিজ বাকি জীবন কাটাতে চেয়েছিলেন। এ হত্যাকাণ্ড সেনগিজের জীবন ওলট–পালট করে দিয়েছে। খাসোগির প্রতিষ্ঠিত সংগঠন ‘ডন’ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালককে এবং তাঁর নিজের গড়ে তোলা সমর্থকদের একটি নেটওয়ার্ককে হারিয়েছি। হত্যাকাণ্ডের পর সংগঠনটির সব কার্যক্রম বন্ধ ছিল। গত ২৯ সেপ্টেম্বর প্রায় দুই বছর পর ডন আনুষ্ঠানিকভাবে আবার কার্যক্রম পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছে। আরব বিশ্বে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী যাঁরা, তাঁদের মুখোশ উন্মোচন খাসোগির মিশন ছিল। আমরা তাঁর সেই অসমাপ্ত মিশন শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে আবার কাজ শুরু করেছি। সেই মিশনের অংশ হিসেবেই আমরা খাসোগির হত্যাকারীদের আদালতের কাঠগড়ায় হাজির করতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি, খাসোগির হত্যাকারীদের জবাবদিহির জন্য যুক্তরাষ্ট্রই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ফোরাম। সৌদি ভিন্নমতাবলম্বী খাসোগিকে যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছিল, তাই এ হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বিশেষ আন্তরিকতা দেখানো হবে। এ ছাড়া খাসোগির তিন ছেলে আমেরিকার নাগরিকত্ব নিয়ে বড় হয়ে উঠছে এবং তিনি আমেরিকায় ডনের মতো একটি মানবাধিকার সংস্থা গড়ে তুলেছিলেন। তাই বলা যায়, খাসোগি হত্যার যথার্থ বিচারে যুক্তরাষ্ট্র আগ্রহ দেখাবে।

খাসোগি হত্যার পরের এক মাস ধরে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে লেখালেখি হয়েছে। যুবরাজ সালমান ব্যাপক চাপের মুখে রীতিমতো অন্তরীণে চলে গিয়েছিলেন। বহু সরকারের পক্ষ থেকে খাসোগি হত্যার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছিল। অনেক দেশ সৌদি সরকারের জবাবদিহি দাবি করেছিল এবং সন্দেহভাজন হত্যাকারীদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। মার্কিন কংগ্রেস সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি নিষিদ্ধ করতে দু–দুবার বিল উত্থাপন করেছিল, যা ট্রাম্প অনুমোদন না করায় আলোর মুখ দেখতে পায়নি।

আজ দুই বছর পরও মোহাম্মাদ বিন সালমান এ হত্যাকাণ্ডের কারণে নষ্ট হওয়া তাঁর ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সৌদি আরব যেহেতু এখনো ১ নম্বর তেল উৎপাদনকারী দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় অস্ত্র ক্রেতা দেশ, সে কারণে এখনো অনেক পশ্চিমা নেতার চাপ থেকে তিনি মুক্ত রয়েছেন। তবে লস অ্যাঞ্জেলেস, নিউইয়র্ক ও প্যারিসের মেয়ররা খাসোগি হত্যার প্রতিবাদে এখনো সোচ্চার আছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে আগামী নভেম্বরে সৌদি আরবে জি–২০ সম্মেলনের ভার্চ্যুয়াল বৈঠক থেকে তাঁরা নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

খাসোগি হত্যার বিচার শুধু ডনের পক্ষ থেকে চাওয়া হচ্ছে না; বহু মানবাধিকার সংস্থাও মোহাম্মদ বিন সালমানকে আদালতে তোলার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছে। এ মামলার মধ্য দিয়ে আমরা বিশ্বের সব সাংবাদিকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে চাই। আমরা এর মাধ্যমে মোহাম্মদ বিন সালমানকে বুঝিয়ে দিতে চাই, যে যত বড় ক্ষমতাবান হোক না কেন আমরা উচ্চকিত হতে ভয় পাই না। আমরা তাঁকে এ বার্তা দিতে চাই যে একজন নিরস্ত্র সাংবাদিককে হত্যা করে সহজে পার পাওয়া যাবে না।

আল–জাজিরা থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

মাইকেল এজিনার: ডেমোক্রেসি ফর দ্য আরব ওয়ার্ল্ড নাউ–এর প্রধান আইন কর্মকর্তা এবং সারাহ লিয়াহ হোয়াইটসন, ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য