Thank you for trying Sticky AMP!!

সিরিয়ায় আমেরিকার দিন শেষ?

বাশার আল-আসাদ

সাত বছর ধরে চলা গণহত্যা আর ধ্বংসযজ্ঞ গোটা সিরিয়াকে বিধ্বস্ত করে ফেলেছে। এই ধ্বংসযজ্ঞের বেশির ভাগের জন্য দায়ী যুক্তরাষ্ট্র ও তার মধ্যপ্রাচ্যের মিত্ররা। বর্তমানে সিরিয়া তুলনামূলকভাবে বেশ শান্ত। তবে আবার সেখানে বড় ধরনের লড়াই বাধার আশঙ্কা আছে। এ অবস্থায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে নতুন করে রক্তপাত বন্ধে এগিয়ে আসতে হবে। সিরিয়া ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদ যে নতুন কৌশল-নীতি গ্রহণ করেছে, তার ভিত্তিতেই তারা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে। আরব বসন্তের ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালে সিরিয়ায়ও সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। একটি দেশের প্রেসিডেন্টকে অপসারণ করার চেষ্টা আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন হলেও ওই বছর যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, কাতার, তুরস্ক ও ইসরায়েল বাশার আল-আসাদকে টেনে নামানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১২ সালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সিরিয়ার সরকারবিরোধী গ্রুপগুলোকে মদদ দিতে সিআইএকে কাজ শুরুর নির্দেশ দেন। মার্কিন নীতিনির্ধারকেরা আশা করেছিলেন, আরব বসন্তে মিসর ও তিউনিসিয়ায় যেভাবে দ্রুত সরকারের পতন হয়েছে, একইভাবে আসাদও ক্ষমতাচ্যুত হবেন।

সিরিয়ার সংখ্যালঘু আলাবি শিয়া গোষ্ঠীর লোকজন নিয়েই মূলত আসাদ সরকার গঠিত। সে দেশে মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ আলাবি শিয়া, ৭৫ শতাংশ সুন্নি মুসলিম, খ্রিষ্টান ১০ শতাংশ এবং দ্রুজ সম্প্রদায়সহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের ৫ শতাংশ লোক আছে। আসাদ সরকারের পক্ষে রয়েছে ইরান ও রাশিয়া। আসাদকে সরিয়ে আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও রাশিয়ার প্রভাব কমাতে চায়। তুরস্কের লক্ষ্য, তার এই সাবেক অটোমান সাম্রাজ্যভুক্ত এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে চিরশত্রু কুর্দিদের দমন করা। সৌদির উদ্দেশ্য, সিরিয়ায় ইরানের প্রভাব কমিয়ে আনা। ইসরায়েলও চায় ইরানকে এখানকার আধিপত্য থেকে সরিয়ে দিতে, যাতে লেবাননের হিজবুল্লাহকে শায়েস্তা করা সহজ হয়। আর কাতার চায় সিরিয়ায় শিয়া শাসনের পরিবর্তে ইসলামি শক্তির শাসন প্রতিষ্ঠিত হোক। তবে এই সম্মিলিত শক্তি শেষ পর্যন্ত বাশারকে গদি থেকে সরাতে ব্যর্থ হয়েছে। মাঝখান থেকে লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। বহু মানুষ ইউরোপে পালিয়ে গেছে। এতে ইউরোপে অভিবাসন-সংকট তৈরি হয়েছে এবং সেখানে অভিবাসনবিরোধী জনমত জোরালো হয়েছে।

মূলত চারটি কারণে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট শক্তি আসাদকে উচ্ছেদে ব্যর্থ হয়েছে। প্রথমত, শুধু আলাবিরাই নয়, সুন্নি ইসলামপন্থীদের উত্থানের আশঙ্কায় সে দেশের খ্রিষ্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠীও আসাদকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছে। দ্বিতীয়ত, মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট ইরান ও রাশিয়ার ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে পড়েছে। তৃতীয়ত, আইএস থেকে যেসব ছোট ছোট গ্রুপ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, তাদের সামাল দিতে আসাদ উৎখাতে নিয়োজিত রসদ জোট বাহিনীকে আলাদাভাবে খরচ করতে হয়েছে। সর্বশেষ কারণ হলো আসাদবিরোধী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বড় ধরনের কোন্দল রয়েছে। তারা নিজেদের মধ্যে লড়াই করতে গিয়ে আসাদ উৎখাতে সম্মিলিত শক্তি প্রয়োগ করতে পারেনি। এখন বড় ধরনের যুদ্ধ থেমে আছে বটে, তবে রক্তপাতের ঘটনা ঘটেই চলেছে। মার্কিন কর্মকর্তারা প্রথম থেকেই আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদ লঙ্ঘনের বিষয়টি গোপন করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা সেখানে রক্তপাতের জন্য ধারাবাহিকভাবে রাশিয়া ও ইরানকে দোষারোপ করলেও মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট যে সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব এখনো লঙ্ঘন করে চলেছে, তা দিবালোকের মতো স্পষ্ট।

গত বছরের জুলাইয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সিরিয়ার বিদ্রোহীদের সিআইএর সহায়তা দেওয়ার অবসানের ঘোষণা দেন। তবে গত ডিসেম্বরে পেন্টাগনের পক্ষ থেকে বলা হয়, মার্কিন বাহিনী সিরিয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান করবে এবং আসাদবিরোধীদের সহায়তা দিয়ে যাবে। এ কারণে সিরিয়ায় আবার যেকোনো সময় বড় আকারে যুদ্ধ বেধে যাওয়ার ঝুঁকি আছে। সম্প্রতি আসাদ বাহিনী বিদ্রোহীদের ওপর অভিযান চালালে মার্কিন জোট পাল্টা বিমান হামলা চালায় এবং এতে প্রায় এক শ আসাদ অনুগত যোদ্ধা এবং অজ্ঞাত সংখ্যক রুশ সেনা নিহত হয়। এ ছাড়া ইসরায়েল সিরিয়ায় ইরানি অবস্থানে সম্প্রতি হামলা চালিয়েছে। বিষয়টি রাশিয়া ও ইরান ভালোভাবে নেবে না। তারা যেকোনো সময় পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখাবে। এ কারণে জাতিসংঘকে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

সব মিলিয়ে এটি এখন স্পষ্ট, আসাদ সরকার থাকছে এবং ইরান ও রাশিয়া সিরিয়ায় তাদের প্রভাব ধরে রাখবে। কিন্তু মার্কিন নেতারা এখনো অলীক কল্পনার জগতে আছেন। তাঁরা এখনো মনে করছেন, সিরিয়ার গদিতে কে থাকবে, কে থাকবে না তা এখনো তাঁরা নির্ধারণ করার ক্ষমতা রাখেন। তাঁরা বুঝতে পারছেন না সে অবস্থা বহুদূরে চলে গেছে।

ইংরেজি থেকে অনূদিত। স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
জেফরি ডি স্যাক্স কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক