Thank you for trying Sticky AMP!!

সিরিয়া বোল্টনের প্রথম পরীক্ষা

গত সোমবার ওয়াশিংটনে ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের এক অত্যাসন্ন মার্কিন সামরিক জবাবের বিষয়ে সতর্কবাণী উচ্চারণ করছিলেন, তখন তাঁর ঠিক পেছনেই বসে ছিলেন তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা দলের নতুন প্রধান জন বোল্টন। বোল্টনের খাড়া খাড়া সাদা গোঁফ দেখে অতীতের আমেরিকান যুদ্ধগুলোর কথা মনে পড়ে যায়।
যে কজন উগ্র ব্যক্তি বুশ প্রশাসনকে আফগানিস্তান ও ইরাকে আক্রমণ চালাতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, জন বোল্টন তাঁদের একজন। এর এক দশক পরেও যখন ওই দুটি দেশে সংঘাত অব্যাহত, তখন তিনি আবার মধ্যমঞ্চে ফিরে এলেন। ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে তাঁর প্রথম কর্মদিবসটিতে মনোযোগের কেন্দ্রে ছিল যুদ্ধের এক নতুন ফ্রন্ট। সিরিয়ার দামেস্কের কাছে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত এক ছিটমহলে বিষাক্ত রাসায়নিক গ্যাস ব্যবহারের জন্য বাশার সরকার ও তার মদদদাতাদের কীভাবে শাস্তি দেওয়া যায়।
এ বিষয়ে আলোচনার জন্য সোমবার সন্ধ্যায় আমেরিকান জেনারেলদের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এক বৈঠকেও বোল্টন তাঁর সঙ্গে ছিলেন। সেখানে ট্রাম্প জেনারেলদের বলেন, ‘তিনি (বোল্টন) আজকের দিনটাকেই তাঁর প্রথম কর্মদিবস হিসেবে বেছে নিয়েছেন। জেনারেলগণ, আমি মনে করি তিনি ঠিকই করেছেন। আপনারা খুবই উত্তেজনাময় সময়ের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন।’
আইনজীবী থেকে পররাষ্ট্রনীতি-বিষয়ক অ্যাকটিভিস্ট হয়ে ওঠা জন বোল্টন তাঁর
পেশাজীবনের পুরোটাই নিরবচ্ছিন্নভাবে মার্কিন সামরিক শক্তি ব্যবহারের পক্ষে কথা বলে
এসেছেন। এখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পাশে তাঁর উপস্থিতির মধ্যে ট্রাম্পের প্রবণতাগুলোরই প্রতিধ্বনি শোনা যাবে বলে অনেক মানুষ মনে করছেন; গত বছরের এপ্রিলে সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন বিমান হামলার ঘটনায় যেমনটা দেখা গিয়েছিল।
ওবামা আমলের মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের একজন জ্যেষ্ঠ সদস্য এবং এখন সেন্টার ফর আ নিউ আমেরিকান সিকিউরিটির ট্রান্স-আটলান্টিক সিকিউরিটি প্রোগ্রামের পরিচালক জুলিয়ান স্মিথ বলেন, ‘এটা ঠিক, সামরিক শক্তি ব্যবহারে বোল্টন দ্বিধা করেন না। প্রশ্ন হচ্ছে, সিরিয়া, রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপের পথে তিনি প্রেসিডেন্টকে কত দূর পর্যন্ত ঠেলে নিয়ে যেতে চান? প্রেসিডেন্ট দেখাতে চাইছেন যে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের জবাব দেওয়া হবে, কিন্তু সিরিয়ার ব্যাপারে তিনি ১০ বছর মেয়াদি অঙ্গীকার করতে চান না। বোল্টন নিজের ও প্রেসিডেন্টের অবস্থানের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করবেন। সিরিয়ার ব্যাপারে দুজনেরই কোনো রাজনৈতিক পরিকল্পনাও নেই।’
সিরিয়ার বিষয়ে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত ছাড়াও উত্তর কোরিয়া ও ইরানের ব্যাপারে নীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে বোল্টনের প্রভাব কী হবে, সে বিষয়ে আরও বড় অনিশ্চয়তা ও শঙ্কা রয়েছে। এ দুই ক্ষেত্রেই তিনি কূটনৈতিক আপসের ঘোর বিরোধী। তিনি ইরানের সঙ্গে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত এক পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন; ট্রাম্প এটা আগামী মাসে করবেন বলে হুমকি দিয়েছেন। বোল্টন জোর দিয়ে বলছেন, মে মাসে কিম জং–উনের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকে ট্রাম্পের উচিত হবে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু প্রকল্প অবিলম্বে ও সম্পূর্ণভাবে বাতিল করার দাবি তোলা।
উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারে বোল্টনের মনোভাব ট্রাম্পের চেয়েও বেশি উগ্র। ট্রাম্প মাঝে মাঝে
এমন আভাস দিয়েছেন যে তিনি কিছু ছাড় দিতে রাজি। হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেমস কারাফানো বলেন, বোল্টনের পূর্বসূরি এইচ আর ম্যাকমাস্টার প্রেসিডেন্টের অবস্থান থেকে সরে গিয়ে যে ভুল করেছিলেন, বোল্টন সেই একই ভুল করবেন না।
ঐতিহাসিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা প্রশাসনের অভ্যন্তরে পরস্পরবিরোধী মতামতগুলোর সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করে আসছেন। কিন্তু পররাষ্ট্র বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা এবং বর্তমানে আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান টমাস কান্টিম্যান বলেন, বুশ প্রশাসনে বোল্টনের ভূমিকার অভিজ্ঞতা থেকে এমন একটা প্রশ্ন উঠেছে যে মানসিকতার দিক থেকে তিনি এই পদের জন্য কতটা উপযুক্ত। তিনি ভিন্নমত সহ্য করতে পারেন না। কিউবা ও ইরানের ব্যাপারে যেসব বিশ্লেষক তাঁর সঙ্গে একমত হননি, তিনি তাঁদের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
বোল্টন আসার কিছু আগে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র মাইকেল অ্যান্টন পদত্যাগ করেছেন। কাউন্সিলের আরেক জ্যেষ্ঠ সদস্য ও প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলের প্রধান রচয়িতা নাদিয়া শাদলোভও পদত্যাগ করার পরিকল্পনা করছেন। বোল্টনের অধীনে আরও অনেকেই চাকরি করতে চাইছেন না বলে ওয়াশিংটনের ফরেন পলিসির সঙ্গে সম্পৃক্ত ওপর মহলের লোকজনের সূত্রে জানা গেছে। এ-ও জানা গেছে যে বোল্টন নিজেই নিরাপত্তা কাউন্সিলের কর্মকর্তাদের মধ্যে একটা ছাঁটাই অভিযানের কথা ভাবছেন। এ বিষয়ে কাউন্সিলের সাবেক কর্মকর্তা লরেন ডি শুলম্যান বলেন, এ ধরনের পদক্ষেপ ক্ষতিকর হবে।

যুক্তরাজ্যের দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

জুলিয়ান বরগার দ্য গার্ডিয়ান-এর আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক