Thank you for trying Sticky AMP!!

সৌদির পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগ

রিয়াদের উপকণ্ঠে একটি ভবন খুব দ্রুত সৌদি আরবের পারমাণবিক শক্তির জন্মস্থানে পরিণত হতে যাচ্ছে। এটি এমন একটি উদ্যোগ, যা মার্কিন কংগ্রেসে উদ্বেগের ও তেহরানে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক আণবিক সংস্থার (আইএইএ) পরমাণু পরিদর্শন বিভাগের সাবেক পরিচালক রবার্ট কেলির মতে, স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া নতুন ছবিতে দেখা গেছে, পরীক্ষামূলক পারমাণবিক চুল্লির নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। অথচ মাত্র তিন মাস আগে সৌদি আরব এই পারমাণবিক চুল্লি তৈরির ঘোষণা দেয়।

কেলির ধারণা, আগামী ৯ মাসের মধ্যে এই পারমাণবিক চুল্লি তৈরির কাজ শেষ হবে।

সৌদি আরব তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পর্কে সবকিছু আইএইএকে অবহিত করেছে। আইএইএ গত বছরের জুলাই মাসে তার একটি প্রতিনিধিদলকে এই ভবন পরিদর্শনে পাঠিয়েছিল। সৌদি আরব বারবার বলেছে, তাদের এই পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। কিন্তু যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কথায় তা মনে হচ্ছে না। তিনি গত বছর বলেছিলেন, কোনো সন্দেহ নেই যে ইরান যদি পারমাণবিক বোমা তৈরি করে থাকে, তাহলে আমরাও তাদের অনুসরণ করব। কঠিন শর্তের অধীনে অন্য দেশ থেকে আমদানি করার পরিবর্তে তাদের নিজেদের পারমাণবিক জ্বালানি নিজেদের মতো করে উৎপাদন করতে দেওয়া উচিত—সৌদি আরবের এমন মন্তব্যে শিল্পবিশেষজ্ঞ এবং মার্কিন কংগ্রেসের কিছু অংশের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

গত বছর একটি সাক্ষাৎকারে সৌদি জ্বালানিমন্ত্রী খালিদ আল ফালিহ দেশটির ইউরেনিয়ামের রিজার্ভ সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমাদের চুল্লির জন্য বিদেশ থেকে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম আনাটা আমাদের জন্য স্বাভাবিক নয়।’ সৌদি আরব ৯ বছর আগে তার পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার কথা প্রকাশ করেছিল, কিন্তু এটা এখন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ‘ভিশন ২০৩০’-এর একটি অংশ।শুধু তেলের ওপর দেশটির নির্ভরশীলতা কমাতে তিনি এই উদ্যোগ নেন।

সৌদি আরবের লক্ষ্য হচ্ছে ২০৪০ সালের মধ্যে ১৭ গিগাওয়াট পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জন করা। এটা ছাড়া আরও দুটি বাণিজ্যিক পারমাণবিক চুল্লি তৈরির পরিকল্পনা সৌদি আরবের রয়েছে। সৌদি আরব বলেছে, এসব পারমাণবিক চুল্লি তৈরির ব্যাপারে তাদের যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্টিংহাউস এবং চীন, রাশিয়া, ফ্রান্স ও দক্ষিণ কোরিয়ার কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে কথা হয়েছে। সৌদি আরবে ইউরেনিয়ামের খনির সন্ধানে দেশটি চায়না ন্যাশনাল নিউক্লিয়ার করপোরেশনের সঙ্গে একটি চুক্তিও করেছে।

গত বছর তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যা করার পর সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বস্ত সহযোগী হতে পারে কি না, তা নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসের সন্দেহ রয়েছে। কংগ্রেস এখন সৌদি আরবের পারমাণবিক কর্মসূচি সমালোচকের দৃষ্টিতে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নিরীক্ষণ করছে। বিশেষ করে ট্রাম্প প্রশাসন পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধে যথেষ্ট করছে কি না, তা তারা দেখছে।

গত সপ্তাহে সিবিএস টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও স্পষ্ট ভাষায় জানতে চান, সৌদি আরব পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবে আবির্ভূত হবে, এটা গ্রহণযোগ্য কি না। তিনি বলেন, ‘আমরা তা হতে দিতে পারি না। প্রেসিডেন্ট পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তারের
হুমকি বোঝেন। আমরা সৌদিদের কাছে হস্তান্তরের জন্য কখনোই ১৫০ মিলিয়ন ডলারের চেক লিখব না এবং ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি দেওয়ার ক্ষমতা তাদের হাতে তুলে দেব না।’

মার্কিন জ্বালানিমন্ত্রী রিক পেরি এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যদি সহযোগিতা না করে, তাহলে পারমাণবিক শিল্প গড়ে তোলার জন্য সৌদি আরব চীন বা রাশিয়ার দিকে নজর দেবে। আমি আপনাদের এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি যে ওই দুটি দেশ পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তারের বিষয়টির বিন্দুমাত্র পরোয়া করে না।’ তবে পেরি জানিয়েছেন, সৌদি আরবে পারমাণবিক শক্তি প্রযুক্তি ও সহায়তা বিক্রি করার জন্য মার্কিন কোম্পানিগুলোর কয়েকটি আবেদন তাঁর দপ্তর অনুমোদন করেছে। কিন্তু তাঁর দপ্তর পারমাণবিক উপাদান, সরঞ্জাম বা উপকরণ স্থানান্তর করার অনুমতি দেয়নি।

এদিকে ইরান দাবি করছে যে ট্রাম্প প্রশাসন পর্যাপ্ত রক্ষাকবচ ছাড়াই সৌদি আরবের কাছে পারমাণবিক প্রযুক্তি বিক্রি করার পরিকল্পনা করছে। ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সেক্রেটারি আলী শামখানি গত মার্চ মাসে বলেছেন, ‘সৌদি আরব যদি তার পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যায়, তাহলে তা আমাদের প্রতিরক্ষা কৌশল পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করবে।’

সৌদি আরবের জ্বালানিকৌশল যা-ই হোক না কেন এবং পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কোনো ইচ্ছা নেই বলে দেশটি যতই চেঁচাক না কেন, সেখানকার পারমাণবিক কর্মসূচির অস্তিত্ব উপসাগরীয় অঞ্চলে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে বাধ্য এবং তা-ই হয়েছে।

সিএনএন থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

টিম লিস্টার ও তামারা কিবলায়ি সিএনএনের সাংবাদিক