Thank you for trying Sticky AMP!!

হংকংয়ে চীনের ঝুঁকিপূর্ণ খেলা

হংকংয়ের পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। রয়টার্স ফাইল ছবি

যদিও হংকংয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া সহিংসতা যথেষ্ট পরিমাণে ভয়াবহ বলে মনে হচ্ছে, তবে পরিস্থিতি মনে হয় আরও খারাপ হতে চলেছে। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) ১৯তম কেন্দ্রীয় কমিটির সদ্য সমাপ্ত চতুর্থ পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে ঘোষিত ইশতেহারে এই ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং যেকোনো মূল্যে সাবেক এই ব্রিটিশ উপনিবেশের ওপর তাঁর মুঠো আরও শক্ত করার পরিকল্পনা করছেন।

এই ইশতেহারে দুটি অশুভ অঙ্গীকার রয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে চীনের কেন্দ্রীয় সরকার সংবিধান ও মৌলিক আইনে (বেসিক ল) অর্পিত সব ক্ষমতা ব্যবহার করে হংকং ও ম্যাকাউ নিয়ন্ত্রণ ও শাসন করবে। এই ‘বেসিক ল’ হচ্ছে একটি মিনি সংবিধান, যেখানে হংকংয়ের মর্যাদাকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। দ্বিতীয় অঙ্গীকার হচ্ছে এটি উভয় বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি আইনি ব্যবস্থা এবং প্রয়োগের কৌশল তৈরি ও উন্নত করবে।

পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের কয়েক দিন পর সিপিসির হংকংয়ের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ চাপানোর পরিকল্পনাটি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যখন কেন্দ্রীয় কমিটি দ্বারা অনুমোদিত প্রস্তাবের সম্পূর্ণ টেক্সটটি প্রকাশিত হয়। চীনের কেন্দ্রীয় সরকার হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী ও প্রধান কর্মকর্তাদের নিয়োগের প্রক্রিয়া পরিবর্তন করতে এবং চায়নিজ ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটি বেসিক ল–কে যেভাবে ব্যাখ্যা করে, সেই অনুযায়ী পরিচালন পদ্ধতিতে সংস্কার আনতে চায়। 

যদিও এই পরিকল্পনা বিশদটি কার্যকর হতে এখনো অনেক দেরি আছে, তবে এটা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে চীনা নেতারা হংকংয়ের প্রধান কর্মকর্তাদের নিয়োগের ওপর আরও সরাসরি নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগ করতে চাইছেন, তাঁরা হংকংয়ের বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে দুর্বল বা নির্মূল করার পাশাপাশি নাগরিক স্বাধীনতা হ্রাস করার এবং রাজনৈতিক মতবিরোধকে দমন করতে চাইছেন। অন্য কথায়, তাঁরা কার্যকরভাবে ‘একটি দেশ, দুটি ব্যবস্থা’ মডেলকে পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা ১৯৯৭ সালে হংকংয়ের চীনের শাসনাধীনে ফিরে আসার পর দেং জিয়াওপিং ৫০ বছর ধরে বহাল রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। 

চীনের নেতাদের অবশ্যই জেনে রাখা উচিত যে তাঁদের শক্ত প্রতিরোধের মধ্যে দৌড়াতে হবে। যদিও বেইজিংয়ে কিছু প্রাথমিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তবে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তো হংকংয়েও বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে এবং সেখানে চলমান বিক্ষোভ থেকে এটা বোঝা যায় যে হংকংয়ের বাসিন্দারা লড়াই ছাড়া নতিস্বীকার করবে না। 

সিপিসি হংকংয়ের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আরোপের যে চেষ্টা চালাচ্ছে, তাতে আরও বেশি বিক্ষোভ এবং আরও বেশি সহিংসতা হতে পারে এবং এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে, তা শাসন করা দুর্দমনীয় হয়ে উঠতে পারে। তবে চীনা নেতারা সম্ভবত যা চাইছেন তা হলো, নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের অজুহাতে শহরটির ওপর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। 

মনে হচ্ছে সি এবং সিপিসি এটা বুঝতে পারছে না যে হংকংয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ তাদের কতটা ক্ষতি করবে। এ কারণে চীন হয়তো বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থায় প্রবেশাধিকার হারাতে পারে। হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকারীদের প্রতি কড়া সমর্থন জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেস। ইতিমধ্যে চীনের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান জানান দিয়ে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পাস করেছে। ওই বিলে হংকংকে বিশেষ বাণিজ্যিক মর্যাদা দেওয়ার ক্ষেত্রে শহরটির স্বায়ত্তশাসন বলবৎ আছে কি না, সে সম্পর্কে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের পর্যালোচনা করার কথা বলা হয়েছে। কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটেও বিলটি পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

দুই বছর আগে সি ঘোষণা করেছিলেন যে ২০৪৯ সালে শতবর্ষ উদ্‌যাপন করার সময় গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের উন্নত অর্থনীতির একটি ‘দুর্দান্ত আধুনিক সমাজতান্ত্রিক দেশ’ হওয়া উচিত। সিপিসির চতুর্থ পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে বিষয়টি পুনরায় ব্যক্ত হয়েছে। তবে যদি চীনের কেন্দ্রীয় সরকার হংকংয়ের প্রতি তার দায়বদ্ধতার বিষয়টি ভঙ্গ করে, তবে এই স্বপ্ন পূরণ হওয়ার চেয়ে পূরণ না হওয়ার আশঙ্কাই বেশি থাকবে।

ইংরেজি থেকে অনূদিত। স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট

মিনসিন পেই চীন প্রজাতন্ত্রের সুশাসন বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ