Thank you for trying Sticky AMP!!

'কৃষ্ণবিবর পুরোপুরি কৃষ্ণ নয়'

স্টিফেন হকিং

তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান অধিকাংশ সময় লোকচক্ষুর অন্তরালে বাস করে। এ বিষয় নিয়ে যাঁরা গবেষণা করেন, তাঁরা ঠিক সেভাবে পরিচিতি পান না। অল্প দু-একজন গবেষক বা বিজ্ঞানী এই ব্যাপারে সফলতা পান। প্রায় ১০০ বছর আগে আইনস্টাইন পেয়েছিলেন সাধারণ মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা। আর সাম্প্রতিক কালে পেয়েছেন বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং। আজ তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর জনপ্রিয়তার মাত্রা সারা বিশ্ব দেখতে পেল। একই মানের সমসাময়িক অন্য তাত্ত্বিক পদার্থবিদেরা মানুষের এত কাছে পৌঁছাতে পারেননি।

তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে আমি পৃথিবীর বহু দেশে অনেক সম্মেলন ও কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্য, স্টিফেন হকিংয়ের সঙ্গে কোথাও দেখা হয়নি। আমার গবেষণা সহকর্মী ও বন্ধু ড. তীব্র আলীর কাছে বেশ কিছু গল্প শুনেছি, কিন্তু নিজে কখনো কথা বলতে পারিনি। সে জন্য এই বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানীকে নিয়ে আমার ব্যক্তিগত কোনো গল্প নেই। আজ তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর গবেষণার মূল বিষয়টি নিয়ে মানুষ বিভিন্ন উৎস থেকে মোটামুটি ধারণা পেয়েছে। সেদিক থেকে এ বিষয়েও নতুন তেমন কিছু যোগ করার নেই। কাকতালীয়ভাবে আমার সর্বশেষ গবেষণাপত্র, যেটি মাত্র গত মাসে প্রকাশিত হয়েছে, স্টিফেন হকিংয়ের একটি বিখ্যাত কাজ ‘সিঙ্গুলারিটি থিওরেম’-এর (Singularity Theorem) সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। আমরা এই ‘সিঙ্গুলারিটি থিওরেম’কে এখনকার সবচেয়ে আলোচিত তত্ত্ব ‘স্ট্রিং থিওরি’ (String Theory) থেকে পর্যালোচনা করেছি।

পদার্থবিজ্ঞানে প্ল্যাঙ্ক স্কেল বা একক বলে একটা ব্যাপার আছে। খুব বেশি শক্তি বা খুব ছোট দৈর্ঘ্যের জন্য এই এককটি ব্যবহার করা হয়। যেমন: এক প্ল্যাঙ্ক দৈর্ঘ্য হচ্ছে ১ সেন্টিমিটার/১০...০ সমান (৩৩টি শূন্য)।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, প্রকৃতি সব সময় এই প্রচণ্ড শক্তির স্কেলে কী হচ্ছে, সেটা আমাদের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে চায়। এই স্কেলের খুব সহজ উপস্থিতি দেখা যায় দুটো ক্ষেত্রে—
১. কৃষ্ণবিবরের ইভেন্ট হরাইজনের (Event Horizon) ভেতর।
২. বৃহৎ বিস্ফোরণ (BIG Bang) সিঙ্গুলারিটিতে (বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড ও সৃষ্টির শুরু অবস্থা)।

কৃষ্ণবিবরের ইভেন্ট হরাইজনের ভেতর কী হচ্ছে, প্রকৃতি তা আমাদের জানতে দেয় না। একইভাবে মনে হয় যেন, এই মহাবিশ্বের শুরুতে কী হয়েছে, প্রকৃতি সেটা গোপন করার জন্য সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে মহাবিশ্বকে অবিশ্বাস্য গতিতে সম্প্রসারণ করেছে। এই ব্যাপারকে আমরা পদার্থবিজ্ঞানে ইনফ্লেশন বলি। এই জটিল বিষয়গুলো নিয়েই স্টিফেন হকিং তাঁর বিখ্যাত গবেষণাপত্রগুলো লিখেছেন।

আর একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে, কৃষ্ণবিবরের ভেতরের রহস্য ভেদ করতে গিয়ে স্টিফেন হকিং আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে যে গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন, যেটি পৃথিবীর তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানীদের একটা চিন্তা কৃষ্ণবিবরের ভেতর ফেলে রেখেছে ৫০ বছর ধরে। তাঁর ‘কৃষ্ণবিবর পুরোপুরি কৃষ্ণও না’—এই আবিষ্কার জন্ম দিয়েছে পদার্থবিজ্ঞানের সম্ভবত সবচেয়ে আলোচিত ‘ইনফরমেশন প্যারাডক্স’-এর (information Paradox ) (ড. তীব্র আলী যেটাকে কূটাভাস বলেছেন)।

ভবিষ্যতের মানুষ ও পদার্থবিজ্ঞান স্টিফেন হকিংকে ঠিক কোন আসনে রাখবে, সেটা বলা মুশকিল। তাঁর অসাধারণ গবেষণা জটিল পদার্থবিজ্ঞানকে মানুষের ঘরে পৌঁছে দেওয়া এবং সর্বোপরি তাঁর শারীরিক সীমাবদ্ধতাকে জয় করার গল্প তাঁকে যে ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় করে রাখবে, তাতে সন্দেহ নেই।

ড. সাজিদ হক, শিক্ষক, তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান, ইউনিভার্সিটি অব উইন্ডসর, কানাডা।