'টিম মোদি'র লক্ষ্যেই এই রদবদল
লোকসভার আগামী নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর মন্ত্রিসভার তৃতীয় যে রদবদলটি ঘটালেন, তার প্রধান চমকের নাম নির্মলা সীতারামণ। ৫৮ বছরের এই তামিল রাজনীতিক হলেন ভারতের দ্বিতীয় নারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন ভারতের প্রথম প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
আজ রোববার সকালের এই রদবদলে পুরোনো প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে চারজনের পদোন্নতি ঘটিয়ে পূর্ণমন্ত্রী করা হলো, নতুন মন্ত্রী করা হলো ৯ জনকে। নির্মলা সীতারামণ ছাড়া বাকি তিন নতুন পূর্ণমন্ত্রীর মধ্যে রয়েছেন ধর্মেন্দ্র প্রধান, যিনি পেট্রোলিয়াম ও রসায়ন মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি ‘স্কিল উন্নয়ন’ মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্ব পালন করবেন। রয়েছেন পীযূষ গোয়েল, যাঁর হাতে মোদি তুলে দিলেন রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। বিদায়ী রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু এখন থেকে পালন করবেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। চতুর্থ পূর্ণমন্ত্রী করা হলো মুক্তার আব্বাস নাকভিকে। তাঁর হাতেই থাকছে সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রিসভার রদবদলের পর এ দিন বিকেলে প্রধানমন্ত্রী মোদি ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে চীন রওনা হন। চীন সফর শেষ করে মিয়ানমার হয়ে তিনি দেশে ফিরবেন।
মনোহর পারিকর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ছেড়ে বিধানসভা ভোটের আগে গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী হয়ে চলে যান। সেই থেকে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির হাতে ছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। ডোকলামের ঘটনা যখন ঘটে, তখনো দেশে কোনো পূর্ণ সময়ের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন না। অবশেষে বিবিসি ওয়ার্ল্ডের সাবেক সাংবাদিক নির্মলার হাতে সেই দায়িত্ব তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। তবে এ দিনই জাপান রওনা হলেন অরুণ জেটলি। সেখানে নিরাপত্তা-সংক্রান্ত দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় তিনিই অংশ নেবেন।
পরপর দুটি ট্রেন দুর্ঘটনার পর রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব ছেড়ে দেন সুরেশ প্রভু। তাঁর জায়গায় রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিলেন পীযূষ গোয়েল। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে অপরিবর্তিত থাকলেন সুষমা স্বরাজও। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ দায়িত্ব পেলেন স্মৃতি ইরানি। পানিসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী ছিলেন উমা ভারতী। তাঁর কাছ থেকে সেই দায়িত্ব নিয়ে দেওয়া হলো সড়ক পরিবহনমন্ত্রী নিতিন গড়কড়িকে। উমাকে দেওয়া হলো পানীয় জল ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা-স্বচ্ছতার (স্যানিটেশন) দায়িত্ব।
এই রদবদলের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ‘নতুন ভারত’ গড়ে তোলার স্বপ্ন সাকার করতে চলেছেন। সেই অর্থে এটা সম্পূর্ণভাবেই নতুন ‘টিম মোদি’। এই নতুন ভারতের লক্ষ্য একটাই, ‘প্রোগ্রেস’ বা উন্নয়ন। সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে প্রধানমন্ত্রী চার ‘পি’-এর ওপর জোর দিয়েছেন। ‘প্রোফিসিয়েন্সি’ বা কর্মদক্ষতা, ‘পলিটিক্যাল অ্যাকুমেন’ বা রাজনৈতিক বোধশক্তি, ‘প্রোফেশনালিজম’ বা পেশাদারি এবং ‘প্যাশন’ বা আবেগ।
এই লক্ষ্য পূরণে মোদি বেছে নিয়েছেন নতুন ৯ জনকে। তাঁদের মধ্যে দুজন সাবেক আমলা, একজন সাবেক কূটনীতিক ও একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্তা। সাবেক আমলারা হলেন সচিব রাজ কুমার সিং ও আলফোন্স কান্নানথানম। রাজকুমার সিং ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব, আলফোন্সের পরিচিতি দিল্লির জবরদখল উচ্ছেদকারী বা ‘ডেমোলিশন ম্যান’ হিসেবে। তাঁরা পেলেন যথাক্রমে বিদ্যুৎ ও পর্যটনের স্বাধীন দায়িত্ব। সাবেক কূটনীতিক হরদীপ সিং পুরী ছিলেন জাতিসংঘে ভারতের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ও সাবেক পুলিশ কর্তা সত্যপাল সিং ছিলেন মুম্বাইয়ের পুলিশ কমিশনার। তাঁরা পেলেন যথাক্রমে নগরোন্নয়ন মন্ত্রক ও মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। রাজকুমার সিং ও সত্যপাল গত নির্বাচনে যথাক্রমে বিহারের আরা ও উত্তর প্রদেশের বাগপত থেকে নির্বাচিত হন। হরদীপ পুরী ও আলফোন্সকে ছয় মাসের মধ্যে সংসদের যেকোনো কক্ষের সদস্য হতে হবে। অন্য প্রতিমন্ত্রীরা হলেন কর্ণাটক থেকে লোকসভা সদস্য অনন্ত কুমার হেগড়ে, রাজস্থানের লোকসভা সদস্য গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত, উত্তর প্রদেশের সাংসদ শিবপ্রতাপ শুক্লা, বিহারের সাংসদ অশ্বিনী কুমার চৌবে ও মধ্যপ্রদেশের সাংসদ বীরেন্দ্র কুমার।
আজকের এই রদবদল কিন্তু পুরোটাই বিজেপির। শরিকদের কারও মন্ত্রণালয়ে যেমন হাত দেওয়া হয়নি, তেমনই নেওয়া হয়নি নতুন শরিক সংযুক্ত জনতা দল বা এআইএডিএমকের কাউকে। শিবসেনার কাউকে পূর্ণমন্ত্রী না করায় তারা এ দিনের রদবদলের অনুষ্ঠানে আসেননি। কাজেই মনে করা হচ্ছে, ২০১৯-এর সাধারণ নির্বাচনের আগে এটাই হয়তো শেষ রদবদল নয়।
আরও পড়ুন...