Thank you for trying Sticky AMP!!

আমি ‘শনিবার বিকেল’ দেখেছি

পাঠক, আপনাদের কি মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর শনিবার বিকেল ছবিটার কথা মনে আছে? অনেকের হয়তো মনে আছে, অনেকেই হয়তো ভুলে গেছেন। ভুলে যাওয়ারই কথা। কারণ, ছবিটি তিনি নির্মাণ করেছিলেন প্রায় চার বছর আগে। এরপর আর ছবিটা আলোর মুখ দেখেনি। সেন্সর বোর্ড প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে ছবিটি আটকে রেখেছে। কিন্তু কেন?

বিভিন্ন সুত্রে আমরা শুনতে পারছি, সরকারের ভয়, ছবিটা মুক্তি পেলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হবে এবং বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। কী অদ্ভুত ভ্রান্ত ধারণা!

এ ছবিতে বাংলাদেশ এবং এ দেশের মানুষের মানবিক গুণাবলিকে করা হয়েছে মহিমান্বিত। হোলি আর্টিজানের সেই নৃশংস ঘটনা আমাদের সবার ব্যক্তিজীবনে যে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছিল, এই ছবি আমাদের সেই ক্ষত উপশমে এবং বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলেই আমার বিশ্বাস।

ছবিটা আমি দেখেছি। একটা ব্যক্তিগত প্রদর্শনীতে ফারুকী আমাকে ছবিটা দেখিয়েছেন। তা–ও প্রায় তিন বছর আগে। ছবিটা দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। পুরো ছবিটা এক শটে নির্মিত। অর্থাৎ, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ক্যামেরা বন্ধ হয়নি। কী পরিমাণ দক্ষতা অর্জন করলে, একজন পরিচালক এমন একটি ঘটনাবহুল ছবি এক শটে নির্মাণ করতে পারেন! ফারুকী অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে সেই দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন। একটা মাত্র শটে টান টান উত্তেজনায় ঘটনাবহুল একটি গল্প বলেছেন।

ছবিটা সরাসরি কোনো সত্য ঘটনা নিয়ে নির্মিত না হলেও ছবিটা দেখলে অনেকেরই ঢাকায় ঘটে যাওয়া একটা সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার কথা মনে পড়তে পারে। খুবই সংবেদনশীল একটা বিষয়। কিন্তু স্পর্শকাতর বিষয়টি ফারুকী খুবই সতর্কতার সঙ্গে পরিপূর্ণ দায়িত্ববোধের সঙ্গে ছবিতে তুলে ধরেছেন। ছবিটির প্রতিটি ঘটনা, প্রত্যেকটি চরিত্র এতটাই নিপুণতার সঙ্গে এবং মানবিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে, যা দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে। প্রত্যেকটি চরিত্রের মধ্যে নানা রকম ডাইমেনশন আছে, এমনকি ধর্মের নামে যারা চূড়ান্ত নিষ্ঠুরতার পথ বেছে নেয়, সেই চরিত্রগুলোও একেবারে সাদাকালো নয়। এখানেও ফারুকী দক্ষতা ও পরিপক্বতার পরিচয় দিয়েছেন, দিয়েছেন পরিমিতিবোধের পরিচয়ও।

Also Read: ‘শনিবার বিকেল’ আটকে লাভটা কার

ছবিতে বাংলাদেশ এবং এ দেশের মানুষের মানবিক গুণাবলিকে করা হয়েছে মহিমান্বিত। হোলি আর্টিজানের নৃশংস ঘটনা আমাদের সবার ব্যক্তিজীবনে যে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছিল, এই ছবি আমাদের সেই ক্ষত উপশমে এবং বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলেই আমার বিশ্বাস। আমার দীর্ঘ ৪০ বছরের চলচ্চিত্র জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে আমি এ কথা জোর দিয়েই সরকারকে বলতে চাই।

কিছু মৌলবাদী গোষ্ঠী ছবিটি নিয়ে অপপ্রচার চালিয়েছে। তারা বলতে চেয়েছে ছবিটিতে ইসলাম ধর্মের অবমাননা করা হয়েছে। ছবিটি না দেখেই যারা এ ধরনের কথা বলতে পারে, তারা যে কতটা পশ্চাৎপদ তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। ছবিতে বরং ইসলাম ধর্মের অন্তর্নিহিত শক্তির কথা খুবই ইতিবাচকভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

আমার বিবেচনায় শনিবার বিকেল মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর অন্যতম সেরা ছবি। শুধু ফারুকীরই নয়, বাংলাদেশের সেরা ছবিগুলোর একটি বলেই বিবেচিত হবে বলে আমার বিশ্বাস। অথচ দুর্ভাগ্য যে ছবিটি দর্শক দেখতে পাচ্ছে না। কেউ হয়তো বলতে পারেন, যা ঘটেছিল ২০১৬ সালের ১ জুলাই, সেই নিষ্ঠুর ঘটনার মুখোমুখি করে দেওয়া বা এখন আবার মনে করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন কি? প্রয়োজন এই জন্যই যে (যদিও এটা একটা ফিকশন, সত্য ঘটনার চিত্রায়ণ নয়) আবার আমরা দাঁড়াতে চাই সেই গভীর ক্ষত ও বেদনা থেকে মুক্তি পেতে, ইসলাম ধর্ম এবং বাংলাদেশের মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তিকে জানতে।

যেকোনো মহৎ শিল্পের কাজই হচ্ছে সমাজের নির্মম বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করা, কঠিন সত্যের মুখোমুখি হয়ে সেই সত্যকে জয় করা।

শনিবার বিকেল সেই কাজটি করেছে। আশা করি, সরকার ছবিটির অন্তর্নিহিত শক্তির কথাটি উপলব্ধি করে মুক্তি দেবে।

  • মোরশেদুল ইসলাম চলচ্চিত্র নির্মাতা