Thank you for trying Sticky AMP!!

শীতলযুদ্ধের কালে তৈরি করা এই ধরনের বাংকার রুশ বাহিনীর আক্রমণ থেকে সাধারণ ইউক্রেনীয়দের জীবন রক্ষা করছে

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের বাংকার খোঁড়ার সময় এসে গেল কি?

ইউরোপে নিরাপত্তা ও সেখানে নিরাপদে বাস করার বিষয়টি ব্যাপক হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে কি? ব্যাপারটিতে ইউরোপীয়দের কতটা উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত? যেভাবে নানা দিক থেকে সতর্কবার্তা আসছে, সে ধরনের কিছু ঘটলে বাস্তব পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।

জার্মানির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি ফাঁস হওয়া নথিতে বলা হচ্ছে, বার্লিন মনে করছে, রাশিয়া ২০২২ সালে ইউক্রেনে যে যুদ্ধ শুরু করেছে, ২০২৫ সাল নাগাদ ইউরোপে সেই যুদ্ধ নিয়ে যেতে চায়। ন্যাটোর সঙ্গে একটা বড় যুদ্ধ শুরু করতে চায় মস্কো। যথেষ্ট উদ্বেগ আছে যে রাশিয়া নতুন করে উত্তেজনার পারদ চড়াতে চায় এবং আক্রমণ করে উদারবাদী রাষ্ট্রগুলোতে হকচকিত করে দিতে চায়। এই আক্রমণের মধ্য দিয়ে ভ্লাদিমির পুতিন নতুন যে বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলতে চান, তার পরম্পরা সৃষ্টি করতে চান।

Also Read: ইউক্রেন যুদ্ধ ন্যাটোকে যেসব খারাপ খবরের আগাম বার্তা দিচ্ছে

সুইডেনের রাজনীতিবিদেরা তাঁদের নাগরিকদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে তাঁরা যেন তাঁদের ভূখণ্ডে সম্ভাব্য একটা যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন। অন্যরা, যেমন নেইল ফার্গুসনের মতো ঐতিহাসিকেরা বলছেন, ‘বিশ্বব্যবস্থাকে উল্টে-পাল্টে দিতে পারে, এমন ভয়াবহ ঘটনার মুখোমুখি হওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে আমাদের।’

সুতরাং বিশ্বজুড়ে বিশৃঙ্খলা ও হানাহানির মতো অভিজ্ঞতার (যে ধরনের অভিজ্ঞতা আমাদের বেশির ভাগেরই নেই) মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে আমাদের কতটা উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত?

একটা বিষয় হলো, যুদ্ধবিষয়ক আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ডেটারেন্স (বিরত রাখা) তত্ত্ব ও এর অনুশীলন। খুব সরলভাবে বললে, অন্য কোনো দেশের চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ ও আগ্রাসন ঠেকানোর উপায় কী, তা নিয়ে আলোচনা করে এই তত্ত্ব।

অনেকে যুক্তি দিতে পারেন, নিজেদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কথা চিন্তা করে পরাশক্তিগুলো একে অপরের সঙ্গে লড়াই করা থেকে বিরত থাকতে পারে। দৃষ্টান্ত হিসেবে তাঁরা বলতে পারেন, পারমাণবিক যুদ্ধ হলে তার যে ভয়াবহ পরিণতি হবে, সে কথা চিন্তা করে বিশ্বের প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিগুলো যুদ্ধে না-ও জড়াতে পারে।

আমাদের সবার সামনে বিশ্বযুদ্ধের যে হুমকি ঝুলছে, তা নিয়ে নানা গল্প ও ঘোষণা আমরা প্রত্যাশা করতে পারি। কিন্তু একটা বিষয় আমাদের জানতে হবে যে এর সবকিছুই তথ্যযুদ্ধের কৌশল। একুশ শতকে সব সংঘাতের ক্ষেত্রে তথ্যযুদ্ধ খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে।

আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার পরিপ্রেক্ষিতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও রয়েছে। সেটি হলো ফাঁদে ফেলে বিরত রাখা। এই ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বন্ধুবেশী প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো একে অপরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত হয়ে পড়ে। যে দেশে নিজেদের ছেলেমেয়েরা পড়ছে কিংবা যে দেশে নিজেদের বিনিয়োগ রয়েছে, সেসব দেশে কেউ হামলা করতে আগ্রহী হবেন না।

কিন্তু এরপরও বিশ্বে এখন পরাশক্তিগুলোর এমন কিছু ভূরাজনৈতিক ও ভূখণ্ডগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে যে তার চড়া মূল্য বিশ্বকে চুকাতে হতে পারে। তাতে বিশ্বযুদ্ধ কিংবা পারমাণবিক যুদ্ধের মতো ভয়াবহ কিছুও ঘটতে পারে। পশ্চিমা বিশ্বের আগের কয়েক প্রজন্মের ক্ষেত্রে নিজেদের ‘ভালো জীবন’ ধ্বংস হয়, এমন কিছু কল্পনা করাও অকল্পনীয় ছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে।

বিশ্বব্যবস্থা উল্টে-পাল্টে দিতে পারে, এমন সব যুদ্ধ এখন একেবারে সন্নিকটে। আর কতিপয় নেতা বিশ্বায়নের ফল ভোগ করার জন্য নিজেদের বিনিয়োগ ও সমৃদ্ধির সম্ভাবনা ধ্বংস করতেও পিছপা হচ্ছেন না।

সংঘাতের ধূসর অঞ্চল

আন্তর্জাতিক সংঘাতের ধরন ও মাত্রাও বদলে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ১৫ বছর ধরে বিশ্বে একটি প্রভাবশালী বিতর্ক হলো, আন্তর্জাতিক সংঘাতে একটা ‘ধূসর এলাকা’ বিরাজ করছে। এর অর্থ এই যে এমন সব পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ ও প্রস্তুতির সন্ধিক্ষণে দেশগুলো দাঁড়িয়ে, যেকোনো মুহূর্তে তারা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে।

অনেক বিশেষজ্ঞ বলেন যে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সম্প্রতি এ রকম একটি সন্ধিক্ষণ তৈরি হয়েছে ইউক্রেন-রাশিয়ার আগ্রাসনকে কেন্দ্র করে। যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্ররা অব্যাহতভাবে এই সংঘাতকে এমনভাবে হাওয়া দিচ্ছে, যেন সেটি রাশিয়ার সঙ্গে ন্যাটোর যুদ্ধে রূপ নেয়।

আমাদের সবার সামনে বিশ্বযুদ্ধের যে হুমকি ঝুলছে, তা নিয়ে নানা গল্প ও ঘোষণা আমরা প্রত্যাশা করতে পারি। কিন্তু একটা বিষয় আমাদের জানতে হবে যে এর সবকিছুই তথ্যযুদ্ধের কৌশল। একুশ শতকে সব সংঘাতের ক্ষেত্রে তথ্যযুদ্ধ খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে।

২০২৩ সালে আমরা দেখতে পেলাম, কীভাবে গুজব, অপতথ্য, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ও সাইবার-অন্তর্ঘাতের মতো ঘটনা জনমনে অনিশ্চয়তা ও দেশে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিতে ব্যবহৃত হয়। সামনের দিনগুলোতে উদারবাদী বিশ্বের প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিনিয়ত সাইবার হামলা মোকাবিলা করতে হবে।

একটা বিষয় হলো, উদারবাদী বিশ্ব নিজেদের মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো বড় কোনো যুদ্ধের পুনরাবৃত্তি ঘটাবে হবে বলে মনে হয় না। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে উদারবাদী বিশ্বের বাইরে থেকে সে ধরনের যুদ্ধ শুরু হতে পারে, যে যুদ্ধ কিনা গত শতকের চেয়ে ভয়াবহ ধ্বংস ও দুর্ভোগ ডেকে আনতে পারে।

তাহলে কি এই দশক শেষ হওয়ার আগেই যে মহাবিশৃঙ্খলা আসতে চলেছে, তা থেকে নিজেদের লুকানোর জন্য এখনই বাংকার খুঁড়তে হবে আমাদের? আমেরিকান মনস্তত্ত্ববিদ স্টিভেন পিংকারের তত্ত্ব উদারবাদী গণতান্ত্রিক দেশগুলোর নাগরিকদের মহাবিশৃঙ্খলা থেকে বাঁচানোর একটা পথ দিতে পারে।

স্টিভেন পিংকারের তত্ত্বের মূল বিষয় হলো, ফাঁদে ফেলে বিরত রাখা। এর মাধ্যমে ইউরোপ ও ইউরোপের বাইরে যুদ্ধের উত্তেজনা কমিয়ে আনা সম্ভব। কিন্তু যুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে আগাম ধারণা সব সময়ই ঝুঁকিপূর্ণ।। আর আমরা এমন একটি ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় আছি, যেখানে আগের সব অনুমান ও প্রত্যাশা বদলে যেতে পারে।

Also Read: সেনাপ্রধানের সঙ্গে জেলেনস্কির বিরোধ, ইউক্রেন যুদ্ধ কোন দিকে গড়াচ্ছে?

বিশ্ব এমন একটি নাটকীয় ও অনিশ্চিত রূপান্তরের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে, যেখানে প্রযুক্তি, ভূরাজনীতি, কৌশল ও নতুন নতুন খেলোয়াড়েরা এসে ভিড় করছেন। এখানে অতীতের যুদ্ধের ইতিহাস ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি থেকে সবটা শিক্ষা নিলে ভুল হবে।

রাজনীতিবিদ ও নীতিনির্ধারকেরা এমন সব ভুল কৌশল নিতে পারেন কিংবা ভুল হিসাব কষতে পারেন, তাতে ভয়াবহ দুর্ভোগ নেমে আসতে পারে।

সুতরাং প্রযুক্তি খাতের শতকোটিপতিরা যদি তাদের অর্থ পানিতে ফেলতে চায়, তাহলে তাদের উচিত বাংকার খুঁড়তে শুরু করা। এরপরও বিশ্বজুড়ে আরেকটি যুদ্ধ বেঁধেই যায়, তাহলে বিশ্ববাসীকে এমন এক প্রলয়ংকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হবে, যেটা তারা কখনোই দেখেনি।

  • মার্ক লেসি, যুক্তরাজ্যের ল্যানকাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি, দর্শ ও ধর্মের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক
    এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত