Thank you for trying Sticky AMP!!

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা

কেমন চলছে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা, গবেষণার ফলাফলে যা দেখা গেল

বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে এবং করোনা মহামারি পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) পরামর্শে এবং নির্দেশনায় ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য মিজানুর রহমান ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে ২২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে দেশে প্রথমবারের মতো সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা (জিএসটি) অনুষ্ঠিত হয়।

এরপর করোনা মহামারির প্রকোপ কমতে শুরু করলেও এই পরীক্ষাপদ্ধতি সমান্তরালেই চলছে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাতন্ত্র্য, সুবিধা-অসুবিধা, বৈচিত্র্য, শিক্ষক সমিতি এবং সাধারণ শিক্ষকদের উদ্বেগ থাকা সত্ত্বেও দেশে এ বছর (২০২৩-২৪) ২৭ এপ্রিল এ ইউনিটের (বিজ্ঞান) পরীক্ষা গ্রহণের মধ্য দিয়ে চতুর্থবারের মতো পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ বছর তিনটি গুচ্ছে বিভক্ত হয়ে মোট ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয় এতে অংশ নিয়েছে বলে এখন পর্যন্ত আমরা জানতে পেরেছি। এরই মধ্যে ২২ ফেব্রুয়ারি সমকাল গুচ্ছ পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ এনে একটি প্রতিবেদন ছেপেছে। সমকাল-এর ওই প্রতিবেদন থেকে এই পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কারও কারও আর্থিক লেনদেনের অনিয়মের কথা উঠে এসেছে, যেটি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। এই পরিপ্রেক্ষিতে আজকের এই গবেষণালব্ধ লেখাটি আমরা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছি।

গুচ্ছ পরীক্ষায় অনিয়ম ও ব্যত্যয় ঘটে থাকলে সেই কারণগুলো অনুসন্ধানের জন্য লেখাটি নয়। বরং বিগত বছরগুলোয় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা জানার মাধ্যমে আমরা কিছু প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব। আরও সহজ করে বললে বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে যে কারণগুলো দেখিয়ে ইউজিসি এ পরীক্ষা পদ্ধতি মেনে নিতে রাজি করাল সেই সমস্যাগুলোই-বা কতটুকু উত্তরণ করা গেল কিংবা কোথায় কোথায় এখনো উন্নতির দরকার বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছে, সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে দেখব।

এই প্রশ্নগুলো সামনে রেখেই ২০২২ সালের মার্চ মাসে আমার দুই সহকর্মী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের দুই শিক্ষক আইরিন পারভীন ও আবুল কালামকে নিয়ে যৌথভাবে একটি গবেষণা শুরু করি। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে গবেষণার জন্য আমাদের ডেটা সংগ্রহের কাজ শেষ হয়। গবেষণাটি শুরু করার সময় থেকেই আমরা বিভিন্ন স্তরে সামাজিক বিজ্ঞানের প্রচলিত গুণগত (কোয়ালিটেটিভ) এবং পরিমাণগত (কোয়ান্টিটেটিভ) পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করেই গবেষণাটি করতে চেষ্টা করেছি। আমরা গবেষণার জন্য উপযুক্ত ফিল্ড হিসেবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে বাছাই করি। একটি বিভাগীয় শহর এবং একটি জেলা শহরের বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই করার কারণে সামগ্রিক চিত্র বোঝা সহজতর হবে।

পরীক্ষাপদ্ধতির ব্যবস্থাপনা নিয়ে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে এই গবেষণায় যাঁদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে, তাঁরা প্রান্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে কেন্দ্র এবং প্রান্তিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা পর্যবেক্ষণ করেছেন বলে সবাই একবাক্যে স্বীকার করেছেন।

আমাদের উদ্দেশ্য ছিল ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে যেসব শিক্ষার্থী গুচ্ছ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এ দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি হয়েছেন, তাঁদের গবেষণার বিষয় হিসেবে নির্ধারণ করা।  সেটি করতে গিয়ে দৈবচয়ন পদ্ধতি ব্যবহার করে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া ওই দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ হাজার ৭৩২ জন শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে সামপ্লিং ইকুয়েশন ব্যবহার (considering Marginal error 5 % and Confidence Interval 95%) করে আমরা ৩৩৭ জন শিক্ষার্থীকে নমুনা হিসেবে জরিপের জন্য বাছাই করি। তা ছাড়া ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় যাঁরা গুচ্ছ পরীক্ষার সঙ্গে জড়িত ছিলেন, এ রকম শিক্ষকদের মধ্য থেকে ছয়জন শিক্ষককে তাঁদের সম্মতির ভিত্তিতে সাক্ষাৎকার নিই। এই পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ করতে মাঠপর্যায়ে আরও পাঁচজন গবেষণা সহকারী যুক্ত থেকেছেন।

জরিপে অংশগ্রহণকারীর মধ্যে যথাক্রমে ৫২ ও ৪৮ শতাংশ উত্তরদাতা ছিল পুরুষ ও নারী শিক্ষার্থী। এসব শিক্ষার্থীর অধিকাংশের বসবাস (প্রায় ৫৩ শতাংশ) গ্রামে এবং বাদ বাকি ৪৭ শতাংশ শহরাঞ্চলে বসবাস করেন। তা ছাড়া জরিপে অংশগ্রহণকারীদের সামাজিক-জনমিতি বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রায় ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থীদের পারিবারিক মাসিক আয় ১০ থেকে ২৫ হাজার টাকার মধ্যে। অন্যদিকে প্রায় ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থীদের পারিবারিক মাসিক আয় ১০ হাজার টাকার নিচে, যা বাংলাদেশের মানুষের গড় মাথাপিছু আয় থেকে অনেক কম।

Also Read: দেশে দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা, আমাদের কেন হয় না

পরিমাণগত গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ করে পাওয়া যায়, প্রায় ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন, গুচ্ছ পরীক্ষা পদ্ধতি কার্যকর ছিল। যদিও এর বিপরীতে প্রায় ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন, এই পরীক্ষাপদ্ধতি ততটা কার্যকর ছিল না এবং বাদ বাকি ২৮ শতাংশ উত্তরদাতা এই প্রশ্নের উত্তরে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। অন্যদিকে প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী যদিও মনে করেন, আগের পরীক্ষাপদ্ধতির ব্যয়ভার বেশি ছিল, তথাপি উত্তরদাতাদের মধ্য থেকে প্রায় ৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন, আগের পরীক্ষাপদ্ধতি বেশি কার্যকর ছিল। কেন এ রকম মিশ্র অভিজ্ঞতা হলো, সেটির উত্তর পাওয়া যায় পরীক্ষার্থীদের করা সম্পূরক প্রশ্ন বিশেষ করে আবেদন ফি, পরীক্ষাকেন্দ্রের অভিজ্ঞতা, পরীক্ষার খরচ, প্রশ্নপত্রের মান, ভর্তিসংক্রান্ত অভিজ্ঞতা, এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইগ্রেশন ইত্যাদি বিষয়ে তাঁদের অভিজ্ঞতা জানার মধ্য দিয়ে।

উত্তরদাতাদের মধ্য থেকে প্রায় ৬৯ শতাংশ মনে করেন, গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষা তাদের সময় বাঁচিয়েছে। তা ছাড়া ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন, এই পরীক্ষাপদ্ধতি তাঁদের খরচ কমিয়েছে। অন্যদিকে প্রায় কাছাকাছি (৩৮ শতাংশ) সংখ্যক শিক্ষার্থী মনে করেন, এই পরীক্ষাপদ্ধতির কারণে আপাতদৃষ্টে খুব বেশি খরচ কমেনি। গুণগত গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ করে আমরা দেখি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ও এমনটাই মনে করেন। তাঁর মতে, ‘যেসব অভিভাবক অনেক দূর থেকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে এসেছেন, তাঁদের অনেকের সঙ্গেই কথা বলেছি। তাঁরা মনে করেন, এই পরীক্ষাপদ্ধতি চালু করার কারণে তাঁদের খরচ ও দুর্ভোগ দুটোই দ্বিগুণ হয়ে গেছে।’ অন্যদিকে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন শিক্ষক এই মতামতের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন, ‘এই পরীক্ষাপদ্ধতি চালু হওয়ার কারণে শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের মূল্যবান সময় বেঁচে গেছে এবং অভিভাবকদের ভোগান্তি অনেকাংশে কমে গেছে।’ যদিও ওই শিক্ষক মনে করেন, গুচ্ছ পদ্ধতি ত্রুটিযুক্ত রয়ে গেছে।

Also Read: একক ভর্তি পরীক্ষার কাঠামো: কারা সামলাবে, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন হবে কীভাবে

জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মতামত যাচাই করে দেখা যায়, প্রায়  ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী গড়ে ৪ থেকে ৮ হাজার টাকার বেশি আবেদন এবং অন্যান্য ফি বাবদ খরচ করেছে । এ ছাড়া উত্তরদাতাদের মধ্য থেকে শতকরা ৪৫ ভাগ শিক্ষার্থীই আমাদের জানিয়েছেন, গুচ্ছ পরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হওয়ার পরে একেকজন গড়ে ৫-১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেছেন। তাঁদের মধ্যে শতকরা ৪৮ জন শিক্ষার্থীকেই মাইগ্রেশন করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবর্তন করতে হয়েছে এবং ৪৬ শতাংশ শিক্ষার্থী আমাদের আরও জানিয়েছেন, তাঁরা তাঁদের পছন্দের বিষয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। গুণগত গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের মাইগ্রেশন-জটিলতা, পছন্দের বিষয় না পাওয়া, ভর্তিপ্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতাসহ নির্ধারিত সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু করতে না পারাসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়েছে।

ব্যাপারটি বোঝার জন্য ভর্তিপ্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত খুবির একজন কো-ফোকাল পয়েন্টের বক্তব্য আমলে নেওয়া যেতে পারে। ওই শিক্ষকের ভাষায়, ‘গুচ্ছ পদ্ধতির সামগ্রিক অভিজ্ঞতাকে কয়েকটি পর্যায়ে দেখা যায়। যেমন একটি পর্যায় হচ্ছে, পরীক্ষা গ্রহণ, পরীক্ষা গ্রহণ গতানুগতিক। এটি নিয়ে আমাদের সমস্যা হয়নি। কিন্তু সামগ্রিক পরীক্ষা পদ্ধতি এবং পরে ভর্তিপ্রক্রিয়া, আমার মনে হচ্ছে এই জায়গায় আমাদের সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। যেমন এবারের চলমান ভর্তিপ্রক্রিয়ার কথা যদি আমরা বিবেচনা করি, তাহলে দেখা যাবে, ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ, ফলাফল প্রকাশ এবং তার পরে একটা দীর্ঘ সময় লেগে গেছে আবেদনপত্র আহ্বান করা, প্রক্রিয়া করা এবং ভর্তি করা।’

এর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের করা উন্মুক্ত প্রশ্নের উত্তর বিশ্লেষণ করে জানা যায়, শুধু একটি পরীক্ষা দিয়ে ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হবে বলে তাঁরা সব সময় মানসিক উদ্বেগ ও চাপ অনুভব করেছেন। বিশেষ করে কোনো কারণে যদি কোনো শিক্ষার্থী শারীরিক অসুস্থতার কারণে নির্ধারিত দিনে পরীক্ষাকেন্দ্রে উপস্থিত হতে না পারেন, তবে তার জন্য বিকল্প পরীক্ষাপদ্ধতির ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থীদের চরম অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। পরিমাণগত গবেষণার ফলাফলে আমরা দেখি, প্রায় ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, এই পরীক্ষাপদ্ধতির কারণে তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। তবে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরে এই প্রভাব কেমন, তা এই গবেষণা থেকে জানা সম্ভব হয়নি।  

পরীক্ষাপদ্ধতির ব্যবস্থাপনা নিয়ে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে এই গবেষণায় যাঁদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে, তাঁরা প্রান্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে কেন্দ্র এবং প্রান্তিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা পর্যবেক্ষণ করেছেন বলে সবাই একবাক্যে স্বীকার করেছেন।

অধিকাংশ শিক্ষকই আমাদের এই মর্মে জানিয়েছেন, এই পরীক্ষা আয়োজন করা থেকে শুরু করে, প্রশ্নপত্র তৈরি করা, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সব পর্যায়েই তাঁদের কোনো অংশীদারত্ব নেই। অধিকাংশ সিদ্ধান্ত গ্রহণ যেহেতু কোর কমিটি গ্রহণ করে, সে কারণে সাব-কমিটিতে যাঁরা থাকেন, তাঁরা একধরনের বিচ্ছিন্নতা অনুভব করেন।

এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যও বলেছেন, সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়ায় তাঁর অংশগ্রহণ খুবই অনুল্লেখ্য। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির আহ্বায়কও আমাদের একই কথা জানান। তিনি বলেন, ‘ভর্তিপ্রক্রিয়ায় কখন কী করতে হবে, সেটা তো আমরা জানি না। কেননা আমরা সিদ্ধান্ত নিই না। কেন্দ্র থেকে যে সিদ্ধান্ত আসে, তা আমরা অনুসরণ করি। যখন শুধু অনুসরণ করছি, তখন তো কন্ট্রিবিউশন করার জায়গা নেই। এ জায়গাগুলোকে ডিভাইস করতে হবে। এটি পুরোপুরি টপ ডাউন অ্যাপ্রোসে চলছে। এ থেকে কী করে অলটারনেটিভ ওয়ে বের করা যায়, তা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। অবশ্য আমাদের ভেবে লাভ নেই। আমাদের কথা কখনো পৌঁছাবে না।’

উত্তরদাতাদের মধ্য থেকেই প্রায় ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী যদিও মনে করেন ইউজিসি এই পরীক্ষাপদ্ধতি আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমানোর চেষ্টা করেছে, তথাপি ৪৭ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন, গুচ্ছ পদ্ধতির সংস্কার দরকার। সে জন্য প্রশ্নপত্রের ধরনে পরিবর্তন (৬৯ শতাংশ বলেছেন) আনয়নসহ, শুধু লিখিত পরীক্ষার ভিত্তিতে ভর্তির ব্যবস্থা করা (৭৫ শতাংশ মতামত দিয়েছেন), এবং এক ইউনিট থেকে আরেক ইউনিতে ভর্তির (৭৪ শতাংশের মত) উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

অন্যদিকে অপর একটি সম্পূরক প্রশ্নে ৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থী সনাতন কিংবা গুচ্ছ পদ্ধতির বাইরে গিয়ে ইউজিসি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে নতুন পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করা যায় কি না, সেটিও ভেবে দেখার অনুরোধ করেছেন। অপরদিকে এই ভর্তি কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকেরা মনে করছেন, বাংলাদেশের বিবেচনায় এ পরীক্ষাপদ্ধতির সংস্কার করা সাপেক্ষে সেটি ভবিষ্যতে চলতে পারে। কিন্তু সে জন্য তাঁরা মনে করছেন, পরীক্ষা গ্রহণের সব পর্যায়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, কেন্দ্র এবং পেরিফেরির মধ্যকার দূরত্ব ঘোচানো, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সবার অংশীদারত্ব এবং পরীক্ষাপদ্ধতির ত্রুটিগুলো শনাক্ত করে সর্বাগ্রে সেগুলোর সংস্কার সাধন করতে হবে।

  • শামসুল আরেফীন পিএইচডি গবেষক, ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র এবং সহকারী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়