Thank you for trying Sticky AMP!!

ইসরায়েলে হামলার পর তেহরানে রাস্তায় নেমে আসে ইরানের জনতা

মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতের হিসাব-নিকাশ বদলে যাচ্ছে

‘আমরা একটি নতুন সমীকরণ দাঁড় করিয়েছি। এখন থেকে আমাদের জনগণ, সম্পত্তি বা স্বার্থের ওপর আসা (ইসরায়েলের) যেকোনো আঘাতকে ইসলামি প্রজাতান্ত্রিক ইরানের ভেতর থেকে সমান প্রত্যাঘাতে প্রতিহত করা হবে।’ গত সপ্তাহে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড কর্পসের প্রধান অধিনায়ক হোসেইন সালামি এই ঘোষণা দিয়েছেন।

ইরান ইসরায়েলের ওপর প্রথমবারের মতো সরাসরি আক্রমণ শুরু করার পরে তাঁর এই মন্তব্য এসেছে। ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা, আক্রমণের তীব্রতা, পরিমাপ এবং প্রভাব বিবেচনায় ইরানের এই আক্রমণ যে নজিরবিহীন ছিল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

চলতি মাসের শুরুতে দামেস্কে ইসরায়েল ইরানের জ্যেষ্ঠ কমান্ডারদের হত্যা করার পর তার প্রতিশোধ হিসেবে ইরান তার পশ্চিম সীমান্তের শেষ মাথা থেকে এক হাজার কিলোমিটারের বেশি দূরের নেগেভ (নাকাব) মরুভূমিতে অবস্থিত দুটি ইসরায়েলি বিমানঘাঁটিতে এবং ‘বন্ধুতাহীন’ এলাকাজুড়ে রকেট হামলা চালায়।

Also Read: ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ উত্তেজনায় কে জিতল, কে হারল

ইসরায়েলের বড় বিমানঘাঁটিগুলোর একটা হলো নেভাটিম বিমানঘাঁটি। ঐতিহাসিক বিরশেবা এলাকার ঠিক পূর্ব দিকে অবস্থিত এই ঘাঁটিতে এফ ৩৫১ অডির জঙ্গি বিমান মোতায়েন করা থাকে। এসব বিমান দিয়েই ১ এপ্রিল দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে বোমা হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিরশেবার দক্ষিণে অবস্থিত রামোন বিমানঘাঁটিতেও ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আঘাত করেছে। এই রামোন ঘাঁটিতে এফ-১৬১ সুফা মাল্টিরোল ফাইটার এবং এএইচ-৬৪ এ/ডি অ্যাপাচি অ্যাটাক হেলিকপ্টারের বেশ কয়েকটি স্কোয়াড্রন রয়েছে।

তীব্রতার দিক থেকেও ইরানের এই আক্রমণ নজিরবিহীন ছিল। এটি শুধু ইসরায়েলের ইতিহাসেই নজিরবিহীন ঘটনা নয়, ড্রোন যুদ্ধের সাম্প্রতিক ইতিহাসেও এটি প্রথম ঘটনা। ইরান প্রায় ১৭০টি আত্মঘাতী ড্রোন, ৩০টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ১২০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ তিন শর বেশি বায়ুবাহিত যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে।

একক বহরে ড্রোনের সংখ্যাও এত বেশি ছিল যে তা নতুন রেকর্ড গড়েছে। ইরানের পাঠানো ড্রোনের ঝাঁক মসুলের যুদ্ধের সময় ইসলামিক স্টেটের পাঠানো ড্রোন ঝড় (যার মধ্যে একযোগে প্রায় ৭০টি অস্ত্রবাহী ড্রোন ছাড়া হয়েছিল) এবং ইউক্রেনে একই ধরনের রাশিয়ান ড্রোন ঝড়কে ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

ইসরায়েলে হামলায় ব্যবহৃত ইরানের তৈরি শাহেদ-১৩৬ যুদ্ধাস্ত্রগুলো ধীরগতির এবং অধিক আওয়াজপূর্ণ। এসব কারণে সেগুলোকে শনাক্ত করা এবং ধ্বংস করা তুলনামূলকভাবে সহজ। কিন্তু পরিমাণগত আধিক্যের নিজস্ব একটা গুণ আছে।

ইরানের এসব ড্রোনের ঝাঁক এবং অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র ইসরায়েলের বহুস্তরবিশিষ্ট সমন্বিত বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে যথেষ্ট ধাঁধায় ফেলেছিল। প্রায় সব ক্ষেপণাস্ত্রকে ঠেকাতে পারলেও কয়েকটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তাদের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পেরেছে।

ইরান এবং তার হামলায় সহায়তা করা মিত্রদের জোটের মাত্রা ও পরিধিও আরেকটি ‘প্রথম’কে আমাদের সামনে এনেছে। ইয়েমেন থেকে হুতিরা দীর্ঘ ও মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে; দক্ষিণ লেবানন থেকে হিজবুল্লাহ তাদের ‘আদিম’ আমলের ১২২ এমএম গ্র্যান্ড রকেট ছুড়েছে; এ ছাড়া ইরাকি মিলিশিয়ারাও গোলাবারুদ ছুড়েছে। ইরানের সঙ্গে সমন্বয় করে তারা একযোগে এই হামলা চালিয়েছে।

ইসরায়েলের যৌথ প্রতিরক্ষা জোটও ছিল নজিরবিহীন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জর্ডান এবং অন্যান্য আরব দেশ ইসরায়েলের আকাশসীমা রক্ষায় একযোগে কাজ করেছে। স্থলযুদ্ধ এবং সামরিক গোয়েন্দা কার্যক্রমে ইসরায়েল ও কতিপয় আরব রাষ্ট্রের মধ্যকার কৌশলগত এবং অভিযানভিত্তিক জোট নতুন কিছু না। কিন্তু ইসরায়েলের আকাশসীমা রক্ষায় এক বা একাধিক আরব রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সহায়তা দেওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম রেকর্ড।

Also Read: মধ্যপ্রাচ্য কি বিস্ফোরিত হওয়ার অপেক্ষায়

অন্যদিকে, ইরান যে একটি উন্নত ও বহুস্তরবিশিষ্ট ইসরায়েলি সমন্বিত আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে (যাকে ব্যাপকভাবে বিমান প্রতিরক্ষার শীর্ষ স্তর হিসেবে বিবেচনা করা হয়) ভেদ করতে পারে, সেটিও এই ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে।

ইরানি কনস্যুলেটে বোমা হামলা ঠিক কোন জায়গা থেকে শুরু হয়েছিল, তা জানার এবং কীভাবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলা চালাতে হয়, তা ঠিক করার সক্ষমতা যে ইরানের আছে তা–ও এ ঘটনায় পরিষ্কার হয়েছে।

দাবার ঘুঁটি যে বদলে যাচ্ছে, তা বোঝার জন্য এগুলোকে সূচক হিসেবে ধরা যেতে পারে। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা যে একটি নতুন আদল পাচ্ছে, তা ধরে নেওয়া যায়।

● ড. ওমর আশুর দোহা ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের ক্রিটিক্যাল সিকিউরিটি স্টাডিজ প্রোগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার মিডল ইস্ট আই থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্ত আকারে অনূদিত