Thank you for trying Sticky AMP!!

রমজানে নাজাত: পাপের আকর্ষণ থেকে মুক্তি

রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস রমজান। সব ধরনের কলুষতা, মলিনতা ও পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত হওয়াই এ মাসে সিয়াম সাধনার মূল উদ্দেশ্য। নাজাত মানে মুক্তি, মুক্তি পাওয়া, মুক্তি দেওয়া, মুক্ত হওয়া ও মুক্ত করা।

রমজানের নাজাতের অর্থ হলো এ মাসে মানুষ পাপ–পঙ্কিলতা, গুনাহ ও আবিলতা থেকে মুক্ত হবে; জাহান্নাম থেকে মুক্ত হবে; পাপের আকর্ষণ থেকে মুক্ত হবে।

মানুষের কল্যাণপথে রয়েছে তিনটি বাধাদানকারী শক্তি—জিন শয়তান, মানব শয়তান ও নফস শয়তান।

বিষয়টি সম্পর্কে কোরআন করিমে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘বলো, “আশ্রয় নিচ্ছি মানুষের প্রতিপালক, মানুষের মালিক, মানুষের মাবুদের (আল্লাহর) নিকটে প্ররোচনাদাতা খন্নাসের (শয়তানের) অনিষ্ট থেকে; যে মানুষের অন্তরে ওয়াসওয়াসা দেয়। সে জিন হতে এবং মনুষ্য হতে (প্রতিপালকের আশ্রয় নিচ্ছি)।”’ (সুরা-১১৪ নাস, আয়াত: ১-৬)

দুনিয়ার মোহ–মায়া–আকর্ষণ থেকে মুক্ত হওয়ার চমৎকার একটি মাধ্যম হলো ইতিকাফ। এতে বান্দা সবকিছু থেকে মুক্ত হয়ে একাত্মভাবে আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যান। আল্লাহ তাআলা কোরআন করিমে বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর দিকে পালিয়ে আসো।’

‘আর অবশ্যই আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি এবং আমি জানি, তাকে তার নফস যে বিষয়ে প্ররোচনা দেয়।’ (সুরা-৫০ কাফ, আয়াত: ১৬)

সব মানুষের পেছনে শয়তান নিয়োজিত আছে, আর জীবনে, মরণে, ইহকালে, পরকালে একান্ত সঙ্গী হিসেবে নফস রয়েছে। নফস হলো ষড়্‌রিপু, যথা কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য। নবী–রাসুলেরা মাছুম বা নিষ্পাপ হওয়ার কারণে তাঁরা শয়তানি কুমন্ত্রণা ও রিপুর তাড়না থেকে মুক্ত ছিলেন। এ ছাড়া যেসব মুমিন মুসলিম শৈশব থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সব ধরনের পাপ থেকে মুক্ত থাকার সৌভাগ্য লাভ করেন, তাঁদের মাদারজাদ (আজন্ম) ওলি বলা হয়।

জিন শয়তানকে পবিত্র মাহে রমজানে বন্দী করে রাখা হয়। কিন্তু মানুষ শয়তান ও নফস শয়তান তখনো সক্রিয় থাকে। তাই মানুষ পাপাচার থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হতে পারে না। পাপতাপ থেকে পরিপূর্ণভাবে মুক্তির জন্য প্রথমে ষড়্‌রিপুর তাড়না থেকে মুক্ত হয়ে নফস শয়তানকে পরাভূত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, মনুষ্য শয়তানের প্রভাবমুক্ত হওয়ার জন্য অসৎসঙ্গ ত্যাগ করে সৎসঙ্গ অর্জন করতে হবে। এই দুটি সুসম্পন্ন হলেই পরিপূর্ণরূপে শয়তানের প্রভাব থেকে আত্মরক্ষা করা যাবে।

রিপু সমন্বয়ে গঠিত নাফস, তথা মানবসত্তার তিন অবস্থা—নাফসে আম্মারা, নফসে লাউওয়ামা ও নফসে মুতমাইন্না। নফসে আম্মারা ‘পাপাকৃষ্ট সত্তা’, যে পাপে অনুরক্ত ও পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত। নফসে লাউওয়ামা ‘অনুতপ্ত সত্তা’, যে শয়তানের ধোঁকায় বা রিপুর তাড়নায় অথবা পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ও পরিস্থিতির প্রভাবে সাময়িক পাপ করে এবং লজ্জিত, অনুতপ্ত হয়ে তওবাও করে। অর্থাৎ কখনো পাপে অনুরাগ, আবার কখনো তাতে অনুতাপ হয়। নফসে মুতমাইন্না ‘প্রশান্ত আত্মা’, যার পাপের প্রতি বিরাগ এবং নেকির প্রতি অনুরাগ থাকে।

নাজাতের অর্থ হলো সব দোষত্রুটি থেকে নিজেকে মুক্ত করা ও পবিত্র রাখা এবং সদ্‌গুণাবলি অর্জন করে স্থায়ী মুক্তি নিশ্চিত করা, যাতে নফস মুতমাইন্না অবস্থা থেকে পুনরায় লাউওয়ামা বা আম্মারার দিকে ফিরে না যায়।

তওবা ও ইস্তিগফার হলো মোহমুক্তি বা নাজাতের উপায়। তওবা মানে হলো পাপ ছেড়ে পুণ্যে মনোনিবেশ করা। ইস্তিগফার হলো কৃত অপরাধের জন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং পুনরায় ওই অপরাধ বা পাপ না করার অঙ্গীকার করা এবং দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হওয়া।

দুনিয়ার মোহ–মায়া–আকর্ষণ থেকে মুক্ত হওয়ার চমৎকার একটি মাধ্যম হলো ইতিকাফ। এতে বান্দা সবকিছু থেকে মুক্ত হয়ে একাত্মভাবে আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যান। আল্লাহ তাআলা কোরআন করিমে বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর দিকে পালিয়ে আসো।’ (সুরা-৫১ জারিয়াত, আয়াত: ৫০) পাপ থেকে, পাপের অকল্যাণ ও অমঙ্গল থেকে, পাপের ভয়াবহ মন্দ পরিণতি থেকে, সর্বোপরি পাপের আকর্ষণ–মোহ থেকে আত্মরক্ষার জন্য ও মুক্ত হওয়ার জন্যই ইতিকাফ।

  • মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

    যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

    smusmangonee@gmail.com