Thank you for trying Sticky AMP!!

মামলায় জর্জরিত ট্রাম্পের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী

ডোনাল্ড ট্রাম্প

হলিউডের কোনো লেখকের মতো করেই যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ কৌঁসুলি জ্যাক স্মিথ বাস্তবেও আকস্মিক নাটকীয়তা উপহার দিলেন। গত মঙ্গলবার বিকেলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তিনি ৪৫ পৃষ্ঠার একটা অভিযোগপত্র দিয়েছেন। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলে হস্তক্ষেপ প্রচেষ্টার জন্য ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। অজ্ঞাতপরিচয় আরও ছয়জন ষড়যন্ত্রকারীর কথা বলা আছে অভিযোগপত্রে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ‘হেরে যাওয়া সত্ত্বেও আসামি ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার পণ করেছিলেন। সে কারণে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার দুই মাসের বেশি সময় পর আসামি মিথ্যা ছড়িয়েছেন এই বলে যে নির্বাচনে আসলে তাঁর জিতে যাওয়া সত্ত্বেও জালিয়াতি করে তাঁকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই দাবি ছিল মিথ্যা এবং আসামিও জানতেন তিনি মিথ্যা বলছেন।’

Also Read: ট্রাম্পের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে কি গৃহযুদ্ধ বেধে যাবে?

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা এ অভিযোগ যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে ৭৭ বছর বয়সী সাবেক প্রেসিডেন্টের কয়েক বছরের সাজা হতে পারে। এমন সম্ভাবনাও আছে যে আমৃত্যু তাঁকে কারাগারে কাটাতে হতে পারে। কিন্তু আমাদের আগে থেকেই এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া ঠিক হবে না।

সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থনে এবারও রিপাবলিকানদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে পারেন ট্রাম্প। শিক্ষিত কিংবা শ্রমজীবী রিপাবলিকান হোক, তাতে খুব একটা পার্থক্য তৈরি করবে না। রিপাবলিকান পার্টি ট্রাম্পকে ধারণ করে। এর আগে তাঁর বিরুদ্ধে দুটি মামলা হওয়ার পরও তাঁর জনপ্রিয়তা একচুল পরিমাণও কমেনি। বরং রিপাবলিকান পার্টিতে তাঁর মুঠো আরও শক্ত হয়েছে। যদি দোষী সাব্যস্ত হন, তারপরও নির্বাচনী দৌড়ে তিনি থাকবেন—সেই অঙ্গীকার করেছেন ট্রাম্প।

সেই সম্ভাবনা বাস্তবেও অনিবার্য হয়ে উঠেছে। কেননা প্রার্থিতার দৌড়ে ট্রাম্প তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রন ডিস্যান্টিসের চেয়ে ৩৭ পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন। ফ্লোরিডার গভর্নর ডিস্যান্টিস তাঁর প্রচারাভিযানে কাঁড়ি কঁাড়ি ডলার ব্যয় করলেও বাস্তবে সেটা কাজে আসেনি।

Also Read: ট্রাম্প যদি আবার প্রেসিডেন্ট হন তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের কী হবে?

এরপরও বলা যায়, এখন ট্রাম্পের সামনে যে আইনি বাধা আসবে, তাতে তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ও জীবন জটিল হয়ে উঠবে। সর্বশেষ অভিযোগপত্র দেওয়ার আগে নথি মামলায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নতুন একগুচ্ছ অভিযোগ আনা হয়েছে।

ফেডারেল আইনজীবীরা জানিয়েছেন, ট্রাম্প ও তাঁর দুজন সহযোগী স্মিথ যাতে তদন্ত করতে না পারেন, সে জন্য নিরাপত্তা ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ মুছে ফেলেছেন। এতে ট্রাম্পের জন্য ভালো কিছু হচ্ছে না, তা বলা বাহুল্য। টেক্সাসের রিপাবলিকানদের সাবেক কংগ্রেসম্যান উইল হার্ড বলেছেন, ‘কারও কর্মচারী যদি নিরাপত্তা ক্যামেরার ফুটেজ মুছে ফেলে, সে ক্ষেত্রে দায়টা তাঁর ওপরেও বর্তায়।’ নিউ জার্সির সাবেক গভর্নর ও ফেডারেল আইনজীবী ক্রিস ক্রিস্টি ট্রাম্পকে ‘অপরাধের স্রোতোধারা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁরা দুজন মন্তব্য করলেও ট্রাম্পের অভিযোগপত্রের ব্যাপারে পুরো রিপাবলিকান শিবির নিশ্চুপ। ট্রাম্পের অভিযোগপত্রের বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি ডিস্যান্টিস।

Also Read: বিচারের মুখে ট্রাম্প, স্বৈরতন্ত্রকে যে বার্তা দিল

সর্বশেষ অভিযোগের কারণে ট্রাম্পকে ব্যাপক আইনি দুর্ভোগের মুখে পড়তে হবে। একদিকে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে নিজ দলের মধ্যে মনোনয়নের প্রতিযোগিতা, অন্যদিকে আইনি দৌড়—এই দুইয়ের মধ্যে পড়ে ট্রাম্পের জারিজুরি প্রায় শেষের পথে। মামলার খরচ জোগাতে এরই মধ্যে তাঁর রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গঠিত সেভ আমেরিকা কমিটির তহবিলে টান পড়েছে, যা আয় হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। তাঁর বিরুদ্ধে পুরোদমে বিচারিক প্রক্রিয়া তো এখনো শুরুই হয়নি। ট্রাম্পের সংস্থা ও তাঁর বিরুদ্ধে নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেলের করা ২৫০ মিলিয়ন ডলারের দেওয়ানি মামলার বিচার অক্টোবর মাসে শুরু হবে। এ ছাড়া ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে তাঁর বিরুদ্ধে করা মানহানি মামলার বিচার শুরু হবে।

ট্রাম্পের সাজা হলে তাতে রিপাবলিকান শিবির কী ধরনের প্রতিক্রিয়া জানাবে, তার ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ। দক্ষিণ ক্যারোলাইনার সিনেটর টিম স্কট এখন রিপাবলিকানদের মধ্যে যথেষ্ট মনোযোগ তৈরি করতে পেরেছেন। ট্রাম্প ও ডিস্যান্টিসের বিপরীতে তিনি সংযত ও পরিমিতি বোধসম্পন্ন ব্যক্তি। জনঘনিষ্ঠ একজন মানুষও। যদিও এখন পর্যন্ত রিপাবলিকান দাতা গোষ্ঠীর মধ্যে তাঁর আবেদন সেভাবে তৈরি হয়নি।

Also Read: পুতিন ও ট্রাম্পের সত্যিই কি বিচার হবে?

২০২০ সালে ক্যাপিটল হিলে তাণ্ডবের সময় ট্রাম্প যেমন করে আওয়াজ তুলেছিলেন ‘তাঁকে লটকে দাও’, সেই একই আওয়াজ আবার তুলেছেন। তিনি এবার আইনজীবীদের দিকে অভিযোগ তুলছেন। কিন্তু এখন ট্রাম্প একজন পুরোদস্তুর আসামি। ২০২৪ সালের নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিশেষভাবে স্মরণীয় নির্বাচন হতে চলেছে। ফলাফল কী হবে, সেটি বিবেচনায় না এনে বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে কখনোই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় না।

দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিতভাবে অনূদিত

  • লয়েড গ্রিন নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি ও যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা