Thank you for trying Sticky AMP!!

মোদির ফিলিস্তিন–নীতি ভারতীয় চেতনাবিরোধী

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ইসরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তেল আবিবে ২০১৭ সালের ৪ জুলাই

ভারত ও ফিলিস্তিনের মধ্যে অনেক মিল আছে। উভয় দেশেরই পরাধীনতায় মোড়ানো একটি ঔপনিবেশিক ইতিহাস আছে। দুই দেশেরই ভাগ হয়ে যাওয়ার রক্তাক্ত অভিজ্ঞতা আছে। উভয় দেশই একাধিক এমন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের আবাসস্থল, যাদের মধ্যে জাতীয়তাভিত্তিক অনেক জটিল অনুভূতি কাজ করে। হয়তো এ কারণেই স্বাধীনতার পর কয়েক দশক ধরে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে ভারত ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন দিয়ে এসেছে। 

ভারতের উপনিবেশবিরোধী সংগ্রামের নেতারা ইহুদিদের বসতি প্রতিষ্ঠার জন্য ফিলিস্তিনের ভূমি জোর করে দখলের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। মহাত্মা গান্ধী লিখেছিলেন, ‘আরবদের ওপর ইহুদিদের চাপিয়ে দেওয়া অন্যায় ও অমানবিক। ফিলিস্তিনে যা চলছে, তা কোনো নৈতিক আচরণবিধির মাপকাঠিতে ন্যায়সংগত হতে পারে না।’ ঠিক একই সুরে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু বলেছিলেন, ‘ফিলিস্তিন মূলত একটি আরব দেশ এবং তাকে আরব দেশ হিসেবেই থাকতে দিতে হবে’ এবং ‘ইহুদিদের স্বদেশের অধিকার ফিলিস্তিনের স্বদেশ থেকে বিতাড়নের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না।’

ভারতে যখন ইসলামবিদ্বেষ দুঃখজনকভাবে সাধারণ ঘটনা হয়ে উঠেছে, তখন ফিলিস্তিনিরা প্রধানত মুসলিম হওয়ায় তাদের অধিকারকে উপেক্ষা করা মোদি সরকারের পক্ষে সুবিধাজনক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু শুধু ভারত নয়, গোটা বিশ্বকে স্বীকার করতেই হবে, কোনো ভূখণ্ডের মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে তাদের অধিকার প্রশ্নে ‘কেউ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবে না’ নীতি থেকে সরে আসার সুযোগ নেই।

১৯৪৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ অধিবেশন প্রস্তাবের (ইউএনজিএ) সময় ভারত যে প্রস্তাব পেশ করে, তাতে বলা হয়, ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ প্রশ্নে যেকোনো পরিকল্পনা গ্রহণের প্রাথমিক লক্ষ্য হতে হবে তাদের স্বাধীনতা। যে দেশগুলো ফিলিস্তিনকে প্রথম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল, ভারত তাদের অন্যতম। ১৯৯৮ সালে ইউএনজিএ-তে ভারত ‘ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার’বিষয়ক খসড়া প্রস্তাবের সহ-স্পনসর ছিল। 

কিন্তু এখন ভারত ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি নৃশংসতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। গাজায় মানবাধিকার লঙ্ঘন না দেখার ভান করে ভারত ২০১৫ সালে একবার এবং ২০২১ সালে আরেকবার জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে যুদ্ধাপরাধ এবং সহিংসতা–সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলোতে সমর্থন দেওয়া থেকে বিরত থাকে। শুধু তা–ই নয়, ভারতের এই ফিলিস্তিনবিরোধিতার খোলামেলা ঘোষণা দিতে ২০১৭ সালে নরেন্দ্র মোদি ইসরায়েল সফর করেছিলেন। মোদিই প্রথম কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী, যিনি ইসরায়েল সফর করেছেন এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কারও সঙ্গে কোনো রকম দেখা করেননি। 

তবে ফিলিস্তিনের প্রতি ভারতের সমর্থন এখনো বেশ কিছু ভারতীয় নাগরিক সমাজ এবং শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের কাজে প্রতিফলিত হয়। ইসরায়েলকে সাংস্কৃতিক ও একাডেমিকভাবে বর্জন করার ডাক দিয়ে ‘ইন্ডিয়ান ক্যাম্পেইন ফর দ্য কালচারাল অ্যান্ড একাডেমিক বয়কট’ শীর্ষক যে প্রচারাভিযান জারি আছে, তার মূল কথা হলো, ইসরায়েলের মতো একটি সহিংস দখলদার এবং বর্ণবাদী রাষ্ট্রের সঙ্গে জ্ঞান এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা গভীরভাবে অন্যায্য এবং নৈতিকতাবিরোধী। ইসরায়েলের প্রতি (বয়কট) বর্জন, (ডাইভেস্টমেন্ট) বাদ দেওয়া এবং (স্যাংশন) নিষেধাজ্ঞার (সংক্ষেপে ‘বিডিএস’) এই পদক্ষেপ ও অবস্থানের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সমর্থন জানানো সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমর্থনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। 

Also Read: ভারত-ইসরায়েল এত মাখামাখি কেন?

ভারতে যখন ইসলামবিদ্বেষ দুঃখজনকভাবে সাধারণ ঘটনা হয়ে উঠেছে, তখন ফিলিস্তিনিরা প্রধানত মুসলিম হওয়ায় তাদের অধিকারকে উপেক্ষা করা মোদি সরকারের পক্ষে সুবিধাজনক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু শুধু ভারত নয়, গোটা বিশ্বকে স্বীকার করতেই হবে, কোনো ভূখণ্ডের মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে তাদের অধিকার প্রশ্নে ‘কেউ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবে না’ নীতি থেকে সরে আসার সুযোগ নেই। ইসরায়েলি ইতিহাসবিদ ইলান পাপ্পের ভাষায়, ‘ইসরায়েলের কাছে বৈশ্বিক সমর্থন পাওয়ার আর কোনো নৈতিক মাত্রা নেই’ এবং সেই দিক বিবেচনায় রেখে ভারতকেও সহিংস ইসরায়েলি দখলদারির মুখে ভারত-ইসরায়েল সম্পর্ক জোরদার করার নৈতিক সমস্যাগুলো স্বীকার করা উচিত। 

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ২০২১ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েল তার নিয়ন্ত্রণ করা অঞ্চলজুড়ে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইহুদি আধিপত্য বজায় রাখার অভিপ্রায় জারি রেখেছে।’ ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াতে ভারতের অনীহা এই কারণে পরিতাপের বিষয় যে এই অবস্থান আমাদের উপনিবেশবিরোধী মানবতাবাদের নিজস্ব ইতিহাস থেকে অনেক দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়।

 ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত 

মনোজ কুমার ঝা ভারতের রাষ্ট্রীয় জনতা দলের জাতীয় মুখপাত্র