Thank you for trying Sticky AMP!!

যোগাযোগের দুনিয়ায় শক্তিশালী হয়ে উঠছে ‘মিম’

বিশ্বায়নের কল্যাণে মানুষে মানুষে যোগাযোগের প্রক্রিয়া ভিন্ন মাত্রা পাচ্ছে। ‘মিম’ তৈরি ও ছড়িয়ে দেওয়া খুবই সহজ বলে তরুণ প্রজন্মের কাছে এটি যোগাযোগের কার্যকর মাধ্যম।

‘ফেসবুক ইদানীং একদমই ভালো লাগে না, ফেসবুকে আসি শুধু “মিম” দেখতে।’ জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রায়ই কারও কারও পোস্টে এমন লেখা দেখা যায়, বিশেষত তরুণেরা এমন লিখে থাকেন। অন্যদিকে একটু বেশি বয়সী অনেকেই ‘মিম’ বিষয়টা কী, তা জানেন না।

এমনকি বয়স্ক বা তরুণ, যাঁরা বিষয়টি জানেন, তাঁদের কাছেও ‘মিম’ শব্দটা নেহাত হাসি–ঠাট্টা আর খেলো ব্যাপার। তবে ‘মিম’ নিয়ে যাঁরা গবেষণা করছেন, তাঁরা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই যুগে ‘মিম’ হতে যাচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী যোগাযোগমাধ্যম। ‘মিম’ এমন এক ভাষা তৈরি করছে যা সংস্কৃতি, রাজনীতি আর গণযোগাযোগে নতুন মাত্রা নিয়ে আসছে।

‘মিম’ শব্দটা এসেছে গ্রিক শব্দ ‘মিমেমা’ থেকে, যার অর্থ এমন কিছু, যাকে অনুকরণ করা হয়। ১৯৭৬ সালে বিজ্ঞানী রিচার্ড ডকিন্স তাঁর সেলফিশ জিন বইয়ে ‘মিম’ শব্দের উল্লেখ করেন। ডকিন্স আবার পরিষ্কার করে বলেন, ‘মিম’ শব্দটির উচ্চারণ হবে ‘ক্রিম’ শব্দের মতো।

ডকিন্সের মতে, ‘মিম’ হচ্ছে এমন একটি ধারণা, আচরণ বা শৈলী যা অনুকরণের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে সামাজিক রীতিনীতি, পরিবেশ, ঐতিহ্য ইত্যাদি ভূমিকা রাখে। আর যেসব ‘মিম’ উপযুক্ত পরিবেশ পায়, সেগুলো ছড়িয়ে পড়ে ও টিকে থাকে। অর্থাৎ, ডকিন্স জীবের সামাজিক বা সাংস্কৃতিক বিবর্তনের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ‘মিম’ শব্দটি ব্যবহার করেন।

কিন্তু ইন্টারনেট, বিশেষত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিপুল প্রসারে ‘মিম’ কেবল জীববিজ্ঞানে সীমাবদ্ধ থাকে না, তা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় সামাজিক, বিশেষত সাংস্কৃতিক পাঠেও।

জীবের শরীরের জিনের মতো ইন্টারনেটে থাকা কনটেন্ট বা উপাদানের ছড়িয়ে পড়াকে একইভাবে ব্যাখ্যা দেওয়া যায়।

‘মিম’–বিশেষজ্ঞ মিশেল নোবেল ও কলনি ল্যাঙ্কাশায়েরের (২০০৭) মতে, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা ‘মিম’ শব্দটা ব্যবহার করেন এমন কিছু বোঝাতে, যাতে কোনো ‘নির্দিষ্ট ধারণা’ তথা কোনো লেখা, ছবি, ভাষা ‘মুভ’ অথবা অন্য কোনো ধরনের কৌশলে ছড়িয়ে যায়। আরেকজন বিশ্বখ্যাত ‘মিম’–বিশেষজ্ঞ লিমোর শিফম্যান বলেন, ‘ইন্টারনেটে এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তিতে ঠাট্টা, গুজব, ভিডিও, ছবি, লেখা ছড়িয়ে যায় আর এসব উপাদানকেই আমরা “মিম” বলতে পারি।’

নিঃসন্দেহে বলা যায়, ভবিষ্যতে মূল ধারার রাজনীতিতে ‘মিম’ আরও বেশি ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে। একই কথা প্রযোজ্য বাণিজ্যিক ক্ষেত্রেও। বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনে এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তো বটেই, এর বাইরেও মিমের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি আমরা দেখেছি, দেশের জনপ্রিয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকি তাদের প্রচারে মিমের ব্যবহারকে গুরুত্ব দিয়েছে। চরকির রেকর্ড গড়া ওয়েব সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’–এর বিজ্ঞাপনের অধিকাংশই ‘মিম’ আকারে প্রচারিত হচ্ছে। দর্শক এসব ‘মিম’ ছড়িয়ে দিচ্ছেন। নিজেরাও বানাচ্ছেন।

সহজ করে বললে ‘মিম’ হচ্ছে এমন একধরনের কনটেন্ট, যা অন্য কনটেন্টকে হালকা পরিবর্তন করে বানানো হয়। সবচেয়ে প্রচলিত ও সহজবোধ্য ‘মিম’ হচ্ছে টেক্সট ওভার ইমেজ। সাধারণত পরিচিত কোনো একটা ছবির ওপর ভিন্ন ধরনের কথা দিয়ে এই ‘মিম’ বানানো হয়।

উদাহরণস্বরূপ, কিছুদিন আগে সিলেটি এক ভদ্রলোক ‘শাহীন, ন...র পোলাকে ধরে ফ্যাল’ বলে দুপাশে দুজনকে জাপটে ধরে দেখান। এই ভিডিও ও ছবি ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়, অর্থাৎ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। দেখা গেল, কেউ একজন ওই ছবি ফেসবুকে দিয়ে ওই ভদ্রলোককে আমজনতা এবং পাশের দুজনকে দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ ও আমলা হিসেবে চিহ্নিত করে ক্যাপশন দিলেন, ‘শাহীন, ন...র পোলাকে ধরে ফ্যাল’। ব্যাস! হয়ে গেল মিম!

এই যে জনপ্রিয় ছবি, সেটাকে মিমের ভাষায় বলে টেমপ্লেট। এই টেমপ্লেটে ইচ্ছেমতো ক্যাপশন বদলে মিম বানানো হয়। যেমন সেই ‘শাহীন’ টেমপ্লেটে ফুটবল খেলোয়াড়, পাড়ার মাস্তান, প্রতারক প্রেমিক, ঘুষখোর কর্মকর্তাসহ সমাজের অগণিত উপাদানকে বসিয়ে দেওয়া যায়। সংখ্যা বা অক্ষর দিয়ে যেমন অসংখ্য শব্দ তৈরি করা যায়, একটি মিম টেমপ্লেট দিয়েও তৈরি করা যায় অগুনতি ‘মিম’।

সুতরাং যেকোনো ইন্টারনেট কনটেন্টই ‘মিম’ হতে পারে। যেমন ফটোশপ করা ছবি, ভিডিও, গানের ভিডিওতে মূল কথা বদলে ‘মিসহার্ড’ লিরিক ইত্যাদি।

বলে রাখা জরুরি, যেসব মিম হুবহু শেয়ার করা হয়, সেগুলো কেবল প্রতিলিপি, নতুন ‘মিম’ নয়। এগুলো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে তাকে ভাইরাল বলা হয়।

তবে ভাষা ও যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে মিমের শক্তি অন্য জায়গায়। ‘মিম’ তৈরি করা সহজ এবং ইন্টারনেটের কল্যাণে ছড়িয়ে দেওয়াও সহজ। একটি পেইন্টিং বা কার্টুন তৈরিতে দক্ষতা লাগলেও ‘মিম’ তৈরিতে দক্ষতা লাগে না। যে কেউ একটি ছবি বা কার্টুনের ওপর কয়েকটা শব্দ জুড়ে বানিয়ে ফেলতে পারেন ‘মিম’।

কেন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে

বিষয়টি বুঝতে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা দরকার। যেমন বিশ্বায়ন, মানুষের ফোকাস স্প্যান কমে যাওয়া, অ্যাটেনশন ইকোনমি, ফিয়ার অব মিসিং আউট থিওরি এবং ইনকনগ্রুইটি তত্ত্ব।

বিশ্বায়নের কল্যাণে মানুষে মানুষে যোগাযোগের মাত্রাটা ভিন্ন হয়ে উঠছে। ইন্টারনেট স্থানিক বাধা কমিয়ে আনায় নতুন প্রজন্ম নিজেদের মতো যোগাযোগ করছে এবং বিশ্ব–সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। ‘মিম’ তৈরি করা ও ছড়িয়ে দেওয়া খুবই সহজ হওয়ায় বিশ্ব–সম্প্রদায়ের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যমে হিসেবে এটি কার্যকর। সবচেয়ে বড় কথা, মিম ভাষার ফারাক অনেকটাই দূর করে দেয়। কিছুটা প্রযুক্তি, সঙ্গে বুদ্ধিমত্তা এবং অল্প সময়ে যোগাযোগের সুবিধার কারণে ‘মিম’ নতুন প্রজন্মের কাছে আদরণীয়।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, এই সময়ে মানুষের নিবিষ্টভাবে মনোযোগ দেওয়ার গড় সময় এখন ৮ দশমিক ২৫ সেকেন্ড, অথচ গোল্ডফিশের বেলায় তা ৯ সেকেন্ড। জেনারেশন জেড অর্থাৎ ১৯৯৭ সালের পর জন্ম নেওয়া প্রজন্মের মধ্যে এই হার আরও কম। এই শতাব্দীর শুরুতেও মানুষের মনোযোগ দেওয়ার গড় সময় ছিল ১২ সেকেন্ড।

নানা কারণেই মানুষের মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা কমে এসেছে। ইন্টারনেটের যুগে মুঠোফোন ও কনটেন্টের সহজলভ্যতার কারণে আমাদের মনোযোগ নড়ে যায়। বই দূরের কথা, একটু বড় লেখা পড়ায়ও আমাদের মনোযোগ থাকছে না। ক্ষণস্থায়ী মনোযোগীদের কাছে তাই লেখার চেয়ে ‘মিম’ বেশি আকর্ষণীয়। একটা মিমের দিকে তাকিয়ে একলহমায় আমরা নির্মাতার বার্তা পাচ্ছি।

ইন্টারনেট, বিশেষত ফেসবুকের মতো মাধ্যম একই সঙ্গে ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক। এখানে ব্যক্তি নিজেকে নানাভাবে প্রকাশে একান্ত একটা স্থান পান, যেটা তিনি নিজেই নিয়ন্ত্রণ করেন। একই সঙ্গে তিনি বাকি নেটিজেনদের সঙ্গেও যুক্ত হতে চান। আদতে নিওলিবারেল (নব্য উদার) ব্যবস্থা আমাদের নানাভাবে এতে উদ্বুদ্ধ করে। এতে প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে শেখানো হয় এবং সামাজিক যূথবদ্ধতার গুরুত্ব কমিয়ে দেওয়া হয়। এতে, একদিকে আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছি, অন্যদিকে চাইছি, আমাদের যেন মূল্যায়ন করা হয়। বাকিদের মনোযোগ কীভাবে আকর্ষণ করা যায়, সেটাই যেন আমাদের আকাঙ্ক্ষা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এই ব্যবস্থায় ‘মিম’ খুব কার্যকর একটি হাতিয়ার।

সমাজবিজ্ঞানী রোজারিও কন্টে বলেন, ব্যক্তি কেবল তাঁর সংস্কৃতির ধারক হয়েই থাকতে চান না, এতে তিনি সক্রিয় ভূমিকাও রাখতে চান। মিমস ইন ডিজিটাল কালচার বইয়ের লেখিকা লিমোর শিফম্যান বলেন, ‘ইন্টারনেট মিমকে উত্তর–আধুনিক যুগের লোকগাথা হিসেবে আখ্যা দেওয়া যায়, যাতে ফটোশপ, ভিডিও সম্পাদনাসহ নানা বিষয়ের মাধ্যমে সমষ্টিগত বিশ্বাস, অবিশ্বাস, মূল্যবোধ ইত্যাদি ছড়িয়ে দেওয়া হয়।’ প্রথাগতভাবে কৌতুক, বাগধারা ইত্যাদির মাধ্যমে আগে এ কাজ করা হতো।

Also Read: শাহিইইন…ভাইরাল দুনিয়া কেন ভরসা হয়ে ওঠে

অধিকাংশ মিমই আসলে হাস্যরস উৎপাদন করতে চায়। তামাশা নিয়ে শত শত বছর ধরে যাঁরা গবেষণা করছেন, তাঁদের মতে, হাসি–ঠাট্টার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে ইনকনগ্রুইটি বা অসংগতি। লাখো কৌতুক পর্যালোচনা করলে আমরা দেখব, অসংগতি তুলে ধরেই এগুলো আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।

পাঞ্চলাইন বা শেষ বাক্যে এমন একটা কিছু বলা হয় যা শ্রোতা একদমই আশা করেননি। ‘মিম’ ঠিক এই কাজই করে। হলিউডের কোনো এক বিখ্যাত নায়কের সংলাপ পরিবর্তন করে সেখানে ভূরুঙ্গামারীর কুদ্দুসের গল্প বলা হলে দর্শক আমোদিত হন, বিস্মিত হন।

মিমের আরেকটা অসামান্য বৈশিষ্ট্য এর অসম্পূর্ণতা। শিফম্যানের ভাষায়, মিম যেহেতু কোনো চিত্রকর্ম নয়, এতে আরও অনেক কিছু যোগ করার থাকে। এভাবে মিম দর্শকদের উদ্বুদ্ধ করে। নিজের বক্তব্য যোগ করে আরও অসংখ্য মিম বানাতে উৎসাহিত করে। এই বৈশিষ্ট্যের কারণে মিম আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ে। মিমকে বলা যায় সবচেয়ে গণতান্ত্রিক ও গণ–অংশগ্রহণের মাধ্যম।

মিমের আর্থ–রাজনীতিক ব্যবহার

অবধারিতভাবেই এই বিপুল শক্তি রাজনীতি ও বাণিজ্যের প্রচারে খুবই কার্যকর হয়ে উঠছে।

সমাজবিজ্ঞানী অ্যান্ড্রু এস রস ও ড্যামিয়েন জে রিভার্স বলেন, মিমের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যার মাধ্যমে নাগরিকেরা ‘প্রাকৃতিক’ উপায়ে প্রায় তাৎক্ষণিকভাবে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বিষয়াবলি নিয়ে নিজেদের মতামত দিতে পারে। এতে বিলম্বের বা মূল ধারার গণমাধ্যমের সেন্সরশিপের ভয় নেই। মিম তাই শুধু রাজনৈতিক হাতিয়ার নয়, জনতার প্রতিক্রিয়া বোঝার সবচেয়ে উপযুক্ত মাধ্যম।

এই হাতিয়ারের ব্যবহার আমরা দেখি ২০১৮ সালে ব্রাজিলের নির্বাচনে। সেখানে মিমকে কাজে লাগিয়ে তাক লাগিয়ে দেন ডানপন্থী জইর বলসোনারো। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারেও মিমের বড় ভূমিকা ছিল। এমনকি আমাদের পাশের দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নির্বাচনেও আমরা দেখি বাংলাদেশ থেকেই ভাইরাল হওয়া মিম ‘খেলা হবে’।

বাংলাদেশের বেলায় আমরা দেখি ভ্যাটবিরোধী, নিরাপদ সড়ক আর কোটাবিরোধী আন্দোলনে ‘মিম’ একদিকে যেমন আন্দোলনকারীদের যোগাযোগের মাধ্যম ছিল, তেমনি নিরাপদ সড়কের আন্দোলনেও প্রভাব ফেলেছে।

একটা কথা অবশ্য মনে রাখা দরকার, ‘মিম’ যে কেবল জনতা ব্যবহার করে তা নয়, শাসকগোষ্ঠী বিশেষ করে আন্দোলন দমাতেও এটিকে কাজে লাগায়। আমরা ক্রমেই দেখতে পাচ্ছি, দুনিয়াজুড়ে সরকারি উদ্যোগে আন্দোলনকারীদের খাটো করতে, আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পাল্টা ‘মিম’ হচ্ছে। অকুপাই ওয়াল স্ট্রিটের ‘উই আর ৯৯%’–এর বিরুদ্ধে তৈরি হচ্ছে ‘উই আর ৫৫%’–এর মতো স্লোগান এবং এ নিয়ে হাজার হাজার মিম।

নিঃসন্দেহে বলা যায়, ভবিষ্যতে মূল ধারার রাজনীতিতে ‘মিম’ আরও বেশি ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে। একই কথা প্রযোজ্য বাণিজ্যিক ক্ষেত্রেও। বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনে এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তো বটেই, এর বাইরেও মিমের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি আমরা দেখেছি, দেশের জনপ্রিয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকি তাদের প্রচারে মিমের ব্যবহারকে গুরুত্ব দিয়েছে। চরকির রেকর্ড গড়া ওয়েব সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’–এর বিজ্ঞাপনের অধিকাংশই ‘মিম’ আকারে প্রচারিত হচ্ছে। দর্শক এসব ‘মিম’ ছড়িয়ে দিচ্ছেন। নিজেরাও বানাচ্ছেন।

Also Read: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কি গণমাধ্যমের জন্য হুমকি

আমরা দেখছি, দেশি–বিদেশি নানা জনসচেতনতা বৃদ্ধির প্রচারণায় মিমের ব্যবহার হচ্ছে। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ, ট্রাফিক আইন মেনে চলার গুরুত্ব, পরিবেশ রক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে দিন দিন মিমের ব্যবহার বাড়ছে। বাংলাদেশের জনপ্রিয় ‘মিম’ পেজ ‘ই–আরকি’র সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তরুণদের এসবে আকৃষ্ট করতে প্রথাগত যোগাযোগের মাধ্যমের পাশাপাশি মিমকেও ব্যবহার করা হচ্ছে।

তা হওয়ারই কথা। এতে জনসম্পৃক্ত হাতিয়ার আরও শাণিত হবে। শুরুতেই বলেছিলাম, তরুণ প্রজন্ম ‘মিম’ বাদে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুব কম বিষয়েই আগ্রহ পায়। এই অনাগ্রহ যেন প্রায় প্রত্যেক তরুণকে মিমার বানিয়ে তোলে।

শাহ আবদুল করিম স্বপ্ন দেখতেন, একদিন পৃথিবীটা বাউলের হবে। সামনের দিনে যোগাযোগের দুনিয়াটা হয়তো ‘মিমার’দের হবে।

  • সৈয়দ ফায়েজ আহমেদ প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক