Thank you for trying Sticky AMP!!

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন

পুতিনের সঙ্গে রাশিয়ার পশ্চিমাপন্থীরা কেন পেরে উঠছেন না

রাশিয়ার হাজার হাজার মানুষ ১ মার্চ মস্কোর একেবারে প্রান্তের বরিসোভস্কি সমাধিস্থলে সমবেত হয়েছিলেন বিরোধী নেতা আলেক্সি নাভালনির প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। রাশিয়ার সরকারি ভাষ্য হচ্ছে, আর্কটিক অঞ্চলের কারাগারে ফেব্রুয়ারি মাসে রক্ত জমাট বেঁধে মারা যান নাভালনি।

রাশিয়ার সাম্প্রতিক ইতিহাসে কোনো জনব্যক্তিত্বের শেষকৃত্যে এত মানুষ সমবেত হয়নি। একমাত্র ব্যতিক্রম হলো, ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত ভিন্নমতাবলম্বী নেতা আন্দ্রে সাখারভের শেষকৃত্য। সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভ ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলেৎসিনের শেষকৃত্যে সাধারণ মানুষের সমাগম হয়েছিল। কিন্তু নাভালনির শেষকৃত্যের চেয়ে সেসব জনসমাগম ছিল অপেক্ষাকৃত ছোট।

নাভানলিন শেষকৃত্যে জনতার ভিড় চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে রাশিয়ার প্রকৃত বিরোধী নেতা কে? প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নাভানলির আন্দোলন গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য হেন প্রচেষ্টা নেই যে করেননি। নাভালনির জীবনের শেষ ১০ বছরের বেশির ভাগ সময় তাঁকে জেলে কাটাতে হয়েছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া হয়েছে। তাঁর সমর্থক, ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন—এমনকি আইনজীবীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং হুমকি দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, নার্ভ এজেন্ট প্রয়োগে হত্যাচেষ্টার পরও বিরলভাবে তিনি বেঁচে যান।

বছর যত গড়িয়েছে, এই পদ্ধতিগত নিপীড়ন ততই প্রকট হয়েছে। ২০১৪-১৫ সালে ইউক্রেন যুদ্ধের বিরুদ্ধে বড় বড় বিক্ষোভ হয়েছে। কিন্তু এখন সেটা কল্পনা করাও অসম্ভব। রাশিয়ার সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডে নিয়ে বিন্দুমাত্র সমালোচনা করলে তাঁকে জেলে পাঠানো হচ্ছে।

আলোচনায় বিষয়টিও উল্লেখ করা প্রয়োজন যে ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে পশ্চিমের সঙ্গে রাশিয়ার সংঘাত তীব্র মাত্রায় পৌঁছানোর পরও রাশিয়ার বিরোধীরা দেশটিতে রাজনৈতিক পরিবর্তনের কোনো চেষ্টা করেনি।

পুতিনের বিরুদ্ধে বিরোধীদের আন্দোলন চূড়ায় ওঠে ২০১১-১২ সালে। সে সময়ে পশ্চিমের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক তুলনামূলকভাবে ভালো ছিল। কিন্তু পুতিন খুব সফলভাবে তার দেশের ভেতরের রাজনৈতিক সংঘাতকে ভূরাজনৈতিক আদল দিতে সক্ষম হন। দুই বছর পর ইউক্রেনে ময়দান বিপ্লব সংঘটিত হয়। এর ফলে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়ার দখল নেয় রাশিয়া।

রাশিয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা দেশগুলোর কৌশলনীতির অস্পষ্টতা, রাশিয়াকে ইউরোপের সঙ্গে একীভূত হতে বাধা দেওয়া, সাবেক সোভিয়েতের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোয় প্রভাব বাড়ানোর কৌশল এবং জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দেওয়া ও পূর্ব ইউরোপ নীতি—এ সবকিছুই পুতিনকে রাশিয়ার জনগণের মধ্যে মেরুকরণ ঘটাতে সহযোগিতা করেছে এবং পশ্চিমাপন্থী বিরোধীদের ওপর দমনপীড়ন চালানোর সুযোগ করে দিয়েছে।

Also Read: ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাজ্য কি এবার সরাসরি জড়িয়ে পড়বে

বছর যত গড়িয়েছে, এই পদ্ধতিগত নিপীড়ন ততই প্রকট হয়েছে। ২০১৪-১৫ সালে ইউক্রেন যুদ্ধের বিরুদ্ধে বড় বড় বিক্ষোভ হয়েছে। কিন্তু এখন সেটা কল্পনা করাও অসম্ভব। রাশিয়ার সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডে নিয়ে বিন্দুমাত্র সমালোচনা করলে তাঁকে জেলে পাঠানো হচ্ছে।

বিরোধী রাজনীতিবিদ, আন্দোলনকর্মী, স্বাধীন সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের একটা বড় অংশ ২০২২ সালের ইউক্রেনে রাশিয়ার সর্বাত্মক আগ্রাসন শুরুর পর দেশ ছেড়ে চলে যায়। জনবিক্ষোভ সংগঠিত করার অভিজ্ঞতা আছে, এমন লোকের সংখ্যা এখন রাশিয়ায় হাতে গোনা।

এরপরও নাভানলিনর শেষকৃত্যে এত বিপুলসংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণের কারণ কী হতে পারে? রাশিয়ার জনসাধারণ মনে করছেন, নাভালনির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে অপেক্ষাকৃত ভালো রাশিয়া একদিন গড়ে উঠবে, তাঁদের সেই স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেল। হতে পারে এই অনুভূতি থেকেই তাঁরা নাভানলির শেষকৃত্যে যোগ দিয়েছেন। রুশ কর্তৃপক্ষ এই জনসমাবেশের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখে এবং পরবর্তী কোনো জনাসমাবেশ হওয়ার সম্ভাবনাকে দমন করে। শেষকৃত্যে অংশ নেওয়া অনেককে মুখ শনাক্তকরণ প্রযুক্তির সহযোগিতায় গ্রেপ্তারও করেছে।

Also Read: পুতিন–সি চিন পিংয়ের গ্লোবাল সাউথ বিস্ময় জাগাচ্ছে

নাভালনির বিধবা স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনি ১৭ মার্চ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিনে প্রতিবাদ বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন। আয়োজকেরা মনে করছেন, পুতিনবিরোধী মনোভাব প্রদর্শন ও নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি করার সুযোগ পাওয়া যাবে।

যাহোক, ভোটের দিন অনেক মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করবেন, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। এর কারণ শুধু প্রতিশোধের ভয় নয়। পশ্চিমের সঙ্গে রাশিয়ার এই সংঘাতে পশ্চিমাপন্থী বিরোধীরা কোনো কৌশলগত বয়ান হাজির করতে পারেনি, যাতে করে কট্টর সমর্থকেরা জ্বলে উঠবে। এর থেকেও বড় কারণ সম্ভবত রাশিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের প্রথাগত ও অরাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি।

রাশিয়ার জনগণ কেবল নিজেদের স্বার্থের বিষয়গুলো নিয়েই মগ্ন। সেটা কেবল এই ঘটনার ক্ষেত্রে সত্য নয়, পশ্চিমা বিশ্ব কিংবা ইউক্রেনের ক্ষেত্রেও সেটা সত্য। তাঁরা মনে করেন, ইউক্রেনীয়দের বিজয় কোনো না কোনোভাবে রাশিয়ার জনগণের জন্য মঙ্গলজনক—এই ধারণা ততক্ষণ পর্যন্ত অর্থহীন, যতক্ষণ পর্যন্ত না রাশিয়াকে ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাঠামোর সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত না করা হয়।

১৯৯০-এর দশকে পশ্চিমাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের সময়কালটাতে রাশিয়ার মানুষেরা চরম মাত্রার অনিরাপত্তা ও অস্থিরতার মুখোমুখি হয়েছিল। পুতিনের শাসনকালে তাঁরা জীবনমানের ব্যাপক উন্নয়ন দেখেছেন। এ কারণে তাঁরা পশ্চিমকে ব্যাপক অবিশ্বাস করেন। তাঁদের মধ্যে এই সন্দেহ অব্যাহত রয়েই গেছে, পশ্চিমারা রাশিয়াকে ইউরোপের দরিদ্র পতিতভূমিতে পরিণত করতে চায়।

ইউক্রেন, জর্জিয়া ও সার্বিয়ার বিপ্লব যেখানে পরিষ্কারভাবে দেখিয়ে দিয়েছে যে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে একীভূত হওয়াটাই পূর্ব ইউরোপের বাস্তব পরিবর্তনের একমাত্র পথ। কিন্তু তাতে স্পষ্টভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এই ব্যর্থতার কারণ কী রাশিয়ার বিরোধীদের তার সন্তোষজনক উত্তর নেই।

  • লিওনিড রাগোজিন লাটভিয়ার ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক

    আল–জাজিরা থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত