Thank you for trying Sticky AMP!!

অনিরাপদ দুধ

আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখতে পেয়েছেন, দেশের বাজারে প্যাকেটজাত যত দুধ পাওয়া যায়, তার ৭৫ শতাংশেই মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থাকে। এটা উদ্বেগজনক খবর, কারণ কারখানায় প্যাকেটজাত তরল দুধ পাস্তুরিত; সুষ্ঠু প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে তাতে ক্ষতিকর জীবাণু থাকার কথা নয়। এই গবেষণার ফলাফল গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্বাস্থ্য সাময়িকী ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ফুড মাইক্রোবায়োলজিতে প্রকাশিত হয়েছে। আইসিডিডিআরবি গবেষণার এই ফলকে ‘অপ্রীতিকর’ বলে বর্ণনা করেছে; কিন্তু আমরা বলি, এটা উদ্বেগজনক। কারণ, প্যাকেটজাত দুধকে ব্যাকটেরিয়ামুক্ত ও নিরাপদ বলে মনে করা হয় এবং এ দেশে অনেকে, বিশেষত কিশোর-তরুণেরা তা না ফুটিয়েই পান করে। অর্থাৎ আমরা পাস্তুরিত দুধ নিয়েও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির মধ্যে আছি।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য হলো, আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানীরা উত্তরাঞ্চলের ৭টি জেলার ১৮টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে দুধের ৪৩৮টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেন। কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি সংগৃহীত নমুনার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি—৩৮৭। তাঁরা পরীক্ষা করে দেখতে পেয়েছেন, এসব দুধেই ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ ও ধরন সবচেয়ে বেশি; এমন ব্যাকটেরিয়াও কিছু নমুনায় পাওয়া গেছে, যা থাকে গরুর মলে। অর্থাৎ কৃষক বা খামার পর্যায়ে গরুর দুধ সংগ্রহ করার প্রক্রিয়ায় গাভির ওলান, যিনি দুধ দোহন করেন তাঁর হাত, যে স্থানে ও পাত্রে দুধ সংগ্রহ করা হয় তার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা নেই বললেই চলে। তবে গ্রামেগঞ্জে বা হাটেবাজারে বিক্রি হওয়া খোলা দুধ সাধারণত ফুটিয়ে পান করা হয় বলে ঝুঁকি কমে যায়।

সমস্যা হলো পাস্তুরিত প্যাকেটজাত দুধ নিয়ে, যা উৎপাদিত হয় আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে। ডেইরিশিল্প একটা বাণিজ্যিক শিল্প, যার উৎপাদিত পণ্য হতে হবে মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে সম্পূর্ণ নিরাপদ। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে প্যাকেটজাত দুধ সরাসরি পান করা হয়, ফুটিয়ে পান করার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু আমাদের বিজ্ঞানীদের জনগণের উদ্দেশে প্যাকেটজাত দুধ ফুটিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দিতে হচ্ছে, কারণ তা অনিরাপদ।

দুধ সংগ্রহ করা থেকে শুরু করে তার পাস্তুরিকরণ ও ভোক্তার কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখা প্রয়োজন: কোন পর্যায়ে ও কীভাবে চার ধরনের ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। কৃষক, খামার ও আড়ত থেকে সংগৃহীত দুধে যদি ব্যাকটেরিয়া থেকে থাকে, পাস্তুরিকরণের প্রক্রিয়ায় তা ধ্বংস হওয়ার কথা। তা কি হচ্ছে? পাস্তুরিত দুধের শীতলীকরণ এবং তা নিরবচ্ছিন্নভাবে শীতল রাখার পদ্ধতি কি অনুসরণ করা হচ্ছে? এসব ক্ষেত্রে কি সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষের নজরদারি আছে? আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো বিষয়টি গুরুত্বসহ বিবেচনায় নেবে, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আর সবাইকে প্যাকেটজাত দুধও ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কমপক্ষে ১৫ মিনিট ফুটিয়ে পান করতে হবে।