Thank you for trying Sticky AMP!!

অবিরাম পাহাড় কাটা

জরিমানা দিয়ে আবার একই অপরাধ করার মানে হচ্ছে দেশের প্রচলিত আইন ও বিচারব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো। সুশাসন বা আইনের শাসন থাকা সমাজে এটা সচরাচর ঘটতে পারে না। কিন্তু বাংলাদেশে এমন অনেক দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে, যেখানে জেল থেকে বের হয়ে আবারও একই অপরাধ করা হয় এবং জরিমানা পরিশোধ করে একই অন্যায় বারবার করা হয়।

পাহাড় কাটা বা বনাঞ্চল ধ্বংস করা নিত্যদিনের ঘটনা। তারপরও নতুন সুযোগ এনে দিয়েছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ঘুমধুম রেললাইন। রেললাইনের পথে পাহাড় পড়লে তা নির্ধারিত মাপে কাটার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি রয়েছে। এই সুযোগে যে যেভাবে পারছে, পাহাড় কাটছে। পাহাড় সমতল করে স্থাপনা পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে। কক্সবাজার প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। কিন্তু সেখানকার সরকারি কর্মকর্তারা চাপের মধ্যে থাকার কথা বলেছেন।

গত বছরের ৯ ডিসেম্বর হাইকোর্ট কক্সবাজারের সাতটি উপজেলার পাহাড়, টিলা, পাহাড়ি বন কাটা রোধে এবং সমুদ্রসৈকত রক্ষার বিষয়ে রুল দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে এই অপকর্ম থেমে থাকেনি। পরিবেশ বিধ্বংসী এসব কাজের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বড় একটি অংশ রাজনৈতিক নেতা এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। চকরিয়া এলাকার সাংসদের বিরুদ্ধে পাহাড় কাটায় সম্পৃক্ত থাকা বা এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িতদের প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে, তিনি পরিবেশবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটিরও সদস্য। অভিযোগ সত্য হলে তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এর প্রতিকার করা দরকার।

পাহাড় ও বন কাটার সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের মাঝেমধ্যে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কিন্তু মূল হোতারা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে বা পরিবেশ আদালতে মামলা করেই যেন পরিবেশ অধিদপ্তর দায়িত্ব শেষ। এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা এবং পাহাড় ধ্বংসকারীদের আইনানুগ শাস্তি নিশ্চিত করার দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের। জরিমানা ছাড়াও পাহাড় বেষ্টনী দিয়ে বনায়ন করতে হবে।

সাম্প্রতিক সময়ে যেসব আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে, সেগুলোতে একই অপরাধ বারবার হলে শাস্তির মাত্রা কয়েক গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। পরিবেশ আইনে যদি এমন দুর্বলতা থাকে, তাহলে তা দূর করা এবং আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। প্রয়োজনে শাস্তির মাত্রা বাড়িয়ে পরিবেশ ধ্বংসকারী দুর্বৃত্তদের নিবৃত্ত করতে হবে। অন্যথায় বাংলাদেশ দ্রুতই পাহাড়শূন্য হয়ে যাবে, প্রাকৃতিক বনাঞ্চল বলে কিছু থাকবে না।