Thank you for trying Sticky AMP!!

অবৈধ বিদেশি শ্রমিক

সম্পাদকীয়

বাংলাদেশে বিশ্বের যেসব দেশ থেকে যঁারাই অর্থনৈতিক কারণে অভিবাসী হয়ে এসেছেন, তাঁদের রাষ্ট্র সহানুভূতির সঙ্গে দেখবে, সেটা একটা স্বাভাবিক প্রত্যাশা। বিশ্বের বহু দেশে বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিকেরা বিধিসম্মত কাগজপত্র ছাড়াই অনেক সময় অবস্থান করেন। তাঁদের প্রতি বাংলাদেশ সর্বদা মানবিক বিবেচনা আশা করে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে রেমিট্যান্স খাতের বিরাট ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাই এ রাষ্ট্রের তরফে অবৈধ বিদেশি শ্রমিকদের প্রতি একটি মানবিক প্রত্যাবাসন নীতি এবং অবকাঠামো তৈরি অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।

কারণ, এ আশঙ্কা অমূলক নয় যে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের ওপর অব্যাহত ঢিলেঢালা নজরদারির ফলে বাংলাদেশকে খেসারত দিতে হতে পারে। ২ নভেম্বর প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকারি নথিমতে বৈধভাবে ঢুকে অবৈধ হয়ে পড়া ১০৮টি দেশের ১২ হাজার বিদেশির (৯ হাজারই ভারতীয়) ওপর সরকারের নিবিড় নজরদারি নেই। আইন অনুযায়ী, এ নজরদারির দায়িত্ব স্পেশাল ব্রাঞ্চের। কিন্তু তাদের যুক্তি হলো তারা এর বিপদ সম্পর্কে সচেতন। কিন্তু প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকার কারণে তাঁরা অবৈধ শ্রমিকদের প্রত্যাবাসনে নিস্পৃহ থাকছেন।

এটা অপ্রিয় বাস্তবতা যে বিদেশি শ্রমিকদের জন্য বৈধকরণ প্রক্রিয়া চালু এবং প্রয়োজনে তঁাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়ার বিষয়ে প্রথমেই দরকার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এটা ঠিক হলেই উপযুক্ত আইনকানুন তৈরি বা হালনাগাদ করে নেওয়াসহ অবকাঠামো তৈরি করা সম্ভব।

অবৈধ অবস্থানের কারণে বিদেশি শ্রমিকদের গ্রেপ্তার দেশের ‘বৃহত্তর স্বার্থে’ অনেক সময় এড়িয়ে চলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। কারণ, তারা জানে গ্রেপ্তার করা হলেই তাঁদের আদালতে সোপর্দ করতে হবে। এবং তখন তাঁরা একটি আইনি ব্যবস্থার মধ্যে চলে যাবেন। অনেকেই জামিন নিয়ে মামলা চালানোর দীর্ঘমেয়াদি পথ বেছে নেন। সে কারণে অবৈধ বিদেশিদের গ্রেপ্তারে এসবিসহ সব সংস্থাই শিথিল মনোভাব দেখিয়ে চলাকে মন্দের ভালো মনে করছে। কিন্তু এটা চলতে পারে না। কে নাশকতাকারী আর কে নিরেট অর্থনৈতিক অভিবাসী, সেটা তো কারও গায়ে লেখা থাকে না। সুতরাং নজরদারিতে গলদ রাখলে তা বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।

অবৈধ বিদেশি শ্রমিকদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের জন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা রয়েছে। তাঁদের নিরাপত্তা হেফাজতে নিয়ে সাধারণত সেফ হোমে রাখা হয়। অনেক দেশে এর নাম ডিটেনশন সেন্টার। বাংলাদেশ অবশ্যই সম্মানজনক ‘সেফ হোম’ পরিভাষাটি ব্যবহার করতে পারে। কারণ প্রকৃত অর্থে বৈধতার যত প্রশ্নই থাকুক, শ্রমিকেরা অর্থনৈতিক অভিবাসী, অনেক সময় তঁারা অর্থনৈতিক উদ্বাস্তু। তাই তঁাদের সাধারণ ফৌজদারি অপরাধের সঙ্গে যুক্ত করে দেখা সমীচীন নয়। তবে প্রতীয়মান হয় যে অবৈধ মানব পাচারকারী বা অন্যান্য সন্দেহজনক গোষ্ঠীর লোকেরা বাংলাদেশের এ দুর্বলতা ও ফাঁকফোকরের অপব্যবহার করতে পারে। ব্যাংক কার্ড জালিয়াতি, জাল মুদ্রা, তথ্যপ্রযুক্তি, চুক্তিভিত্তিক বিয়েসহ নানা প্রতারণার দায়ে আফ্রিকার আটটি দেশের অর্ধশতাধিক লোকের গ্রেপ্তার নির্দেশ করে যে বিদেশি নাগরিকদের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি কঠোর করার সময় এসেছে।

এর বাইরে যেমন ভারত সরকারই বলেছে, তাদের দেশে রেমিট্যান্স প্রেরণকারী শীর্ষ পাঁচ দেশের অন্যতম বাংলাদেশ। যেসব দেশের
নাগরিকেরা বৈধভাবে থেকে উপার্জন করছেন, তাঁরা কর ফাঁকি দিচ্ছেন কি না, সেটা ভালোভাবে খতিয়ে দেখা এবং তঁাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

১৯৫১ সালের বিদেশি আদেশ অনুযায়ী, আটকের পর থেকে প্রত্যাবাসনের আগ পর্যন্ত অবৈধ অভিবাসী ‘সেফ হোমে’ অন্তরীণ থাকবেন। বিমানের টিকিটসহ প্রত্যাবাসন কাজের ব্যয় বহন করার জন্য অভিবাসন পুলিশের কাছে বরাদ্দ থাকবে। কিন্তু এত দিনেও এ বিধানের যে প্রতিপালন নেই, সেই বাস্তবতা বিস্ময়কর। এ অবহেলার অবসান হোক।