Thank you for trying Sticky AMP!!

অভয়ারণ্যে ইলিশ শিকার

ইলিশ মাছের ডিম ছাড়ার মৌসুম পেরিয়ে গেছে; এখন ছোট ইলিশের বেড়ে ওঠার সময়। এই সময়ে মাছ ধরা উচিত নয়। কিন্তু এই ঔচিত্যবোধ জেলেদের মধ্যে কাজ করে না, এ বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণাও কাজে আসে না। তাই তাঁদের ছোট মাছ ধরা থেকে বিরত রাখতে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হয়। সেই পদক্ষেপের একটা অংশ হলো ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ইলিশের অভয়ারণ্য হিসেবে চিহ্নিত অংশগুলোতে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা অত্যন্ত দুরূহ।

১১ মার্চ প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের খবর হলো, শরীয়তপুরে পদ্মা নদীর ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ইলিশের অভয়ারণ্যে সরকারি নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে ইলিশ শিকার চলছে। মৎস্য বিভাগ ইতিমধ্যে অভিযান চালিয়েছে; ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৪৪ জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া একটি স্পিডবোট, চারটি নৌকা এবং ১ লাখ ২০ হাজার মিটার জাল জব্দ করা হয়েছে। তবু মাছ ধরা বন্ধ হচ্ছে না।

তাহলে উপায় কী? বোঝাই যাচ্ছে কারাদণ্ড দিয়ে বা জাল জব্দ করে জেলেদের মাছ ধরা থেকে বিরত রাখা যাবে না। কারণ, জেলেদের বেশির ভাগই দরিদ্র এবং তাঁরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। জীবনের তাগিদেই তাঁরা নিষেধাজ্ঞার সময়ও মাছ শিকার করেন। যদিও বলা হয়, ইলিশ ধরা বন্ধ মৌসুমে সরকার জেলেদের আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা হলো, নানা রকম অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে জেলেরা ঠিকমতো সহায়তা পান না।

কোথাও দেখা যায় ত্রাণের চাল পৌঁছায়নি, কোথাও জেলেদের সংখ্যার চেয়ে কম পরিমাণ চাল দেওয়া হয়েছে, কোথাও আবার চাল পৌঁছালেও জেলে পরিবারগুলোর কাছে চাল বিতরণ করা হয় না। এ অসংগতিগুলো বিবেচনায় নিয়ে প্রশাসনের সচেষ্ট হওয়া জরুরি। সরকারি সহায়তা পাওয়ার পরও যদি জেলেরা নিষেধাজ্ঞার সময়ে মাছ ধরেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। অভিযানের কৌশলেও পরিবর্তন আনতে হবে। দেখা যায়, মৎস্য বিভাগের লোকজন সাধারণত রাতে অভিযান চালান। তাঁদের অভিযান শেষ হওয়ার পর জেলেরা নদীতে নামেন মাছ ধরতে। মাছ ধরা বন্ধের মৌসুমে তাই সার্বক্ষণিক পাহারার বিকল্প নেই।

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, পদ্মা নদীর তীরবর্তী পাইকারি মাছ বাজারের আড়তের মালিকেরা জেলেদের নৌকা ও জাল সরবরাহ করেন। এর বিনিময়ে শিকার করা মাছের একটি অংশ পান তাঁরা। আড়তের মালিকেরা ও ব্যবসায়ীরা যাতে জেলেদের মাছ ধরতে উৎসাহিত করতে না পারেন, সেদিকেও নজর দেওয়া জরুরি। ইলিশের ওপর বহু মানুষের জীবিকা নির্ভর করার পাশাপাশি অর্থনীতিতেও এটি বড় অবদান রাখছে। তাই জাতীয় স্বার্থেই ইলিশের উৎপাদন নির্বিঘ্ন করতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।