Thank you for trying Sticky AMP!!

অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ

দুর্বল গণতন্ত্র, সুশাসনের অভাব, ত্রুটিপূর্ণ ও দুর্নীতিগ্রস্ত আর্থিক ব্যবস্থাপনা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, স্বল্প বিনিয়োগ ইত্যাদি গুরুতর সমস্যা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উচ্চ হারে প্রবৃদ্ধি ঘটে চলেছে। দেশি–বিদেশি অর্থনীতিবিদেরা এত দিন এই ‘প্যারাডক্স’ বা স্ববিরোধকে বাংলাদেশের অর্থনীতির ‘মিরাকুলাস’ বা জাদুকরি শক্তি বলে বর্ণনা করে মুগ্ধ বিস্ময় প্রকাশ করে এসেছেন। কিন্তু অনেক সময় পেরিয়ে গেছে; বিশেষজ্ঞরা এখন বলছেন বিদ্যমান সমস্যাগুলো অব্যাহত থাকলে অর্থনৈতিক অগ্রগতির এই সুখপ্রদ পর্ব আর বেশি দিন স্থায়ী হবে না। বস্তুত কোনো স্ববিরোধেরই চূড়ান্ত পরিণতি স্থায়ী সুফল বয়ে আনতে পারে না।

গত সোমবার রাজধানীর লেকশোর হোটেলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) ২০১৮ সালের রিসার্চ অ্যালম্যানাকের সমাপনী দিনে আলোচকেরা আমাদের অর্থনীতির টেকসই অগ্রগতির পথের বহুল আলোচিত প্রতিবন্ধকতাগুলোর কথা আবারও স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন, অর্থনীতি ও রাজনীতি যেভাবে চলছে, সেভাবে আর চলতে পারে না। অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, কম বিনিয়োগ থেকে বেশি সুফল পাওয়ার দিন শেষ হয়ে আসছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ যেসব খাতে উন্নতি হয়েছে, সেগুলোর উন্নতি বজায় রাখতে হলে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আমরা দেখছি, শিল্প–বাণিজ্যসহ অন্যান্য খাতেও দেশি–বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে না, ব্যবসা–বাণিজ্যের পরিবেশও উন্নত হচ্ছে না। ইজ অব ডুয়িং বিজনেস বা সহজে ব্যবসা করার বৈশ্বিক সূচকে আমরা দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছি; এমনকি যুদ্ধবিগ্রহের দেশ আফগানিস্তানও আমাদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। কিন্তু অন্যদিকে আলট্রা রিচ বা অতি ধনী ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আমরা বিশ্বের সব দেশকে ছাড়িয়ে গেছি। মূলত অনৈতিক পন্থায় অর্জিত লাখ লাখ কোটি টাকার পুঁজি বিদেশে পাচার করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ইতিমধ্যে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশের স্তরে উন্নীত হয়েছে। সেই সঙ্গে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এখন জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনায় রেখে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ যথার্থই বলেছেন যে এখন আমাদের শ্রমশক্তির উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। মাথাপিছু আয় ও জিডিপি বাড়লেই নতুন বাস্তবতায় দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব হবে না, যদি উৎপাদনশীলতা নিম্ন পর্যায়েই থেকে যায়। তাই দক্ষ জনবল সৃষ্টি, অধিকতর বিনিয়োগ, অবকাঠামো উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন এবং সর্বোপরি সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার মান উন্নয়নের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।

এ দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে রাজনীতির প্রাধান্য অতিমাত্রায় বেশি এবং সেই রাজনীতিতে সততা–নৈতিকতার অভাব অত্যন্ত প্রকট—এই গোড়ার সমস্যাটি নিয়ে গুরুত্বসহকারে আলোচনা কম করা হয়। সরকারগুলো পৃষ্ঠপোষকতার রাজনৈতিক সংস্কৃতি দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে; লাগামহীন দুর্নীতি, পুঁজি পাচার, ঋণখেলাপসহ গুরুতর নানা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে পৃষ্ঠপোষকতার রাজনীতির সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। এটা চিরতরে বন্ধ করতে হবে।