Thank you for trying Sticky AMP!!

আবারও প্রশ্নবিদ্ধ দুদক

দুর্নীতি দমনে দেশে একটি কমিশন আছে, সেটির কথা মানুষ ভুলতে বসেছে। দুর্নীতি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মানুষের অভিযোগ কমে গেছে, প্রতিষ্ঠানটির দুর্নীতিবিরোধী অভিযানও কমেছে। এর মধ্য দিয়ে নিজেদের কার্যক্রম নিয়ে আবারও প্রশ্নবিদ্ধ হলো প্রতিষ্ঠানটি। গত বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় অন্যের দুর্নীতি চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার আগে নিজেদের অনিয়ম ও অসততা দূর করতে দুদকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন থেকে আমরা জানতে পারছি, ২০২০ সালে দুদকে মোট জমা হওয়া অভিযোগের সংখ্যা ছিল ১৮ হাজার ৪৮৯টি। এ বছর অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে অভিযোগ জমা পড়েছে মোট ১১ হাজার ৮২৮টি। আগের বছরে দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ৪৮৭টি অভিযান পরিচালনা করে। চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে সংখ্যাটি নেমেছে ১১১–তে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে দুদককে নখদন্তহীন বাঘ বলেছিলেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। দুদকের পরিসংখ্যানও সেটি প্রমাণ করল।

দুর্নীতি নিয়ে সাধারণ মানুষের অভিযোগ কমে যাওয়ার কোনো বাস্তব কারণ থাকতে পারে না। দেশে দুর্নীতি কমে গেছে, তাই হয়তো অভিযোগও আসছে না, অভিযানও কমে গেছে—এমন চিন্তাও অমূলক হবে। যদিও বিধিনিষেধ ও নতুন কমিশন আসার পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধান ও তদন্ত বিলম্বিত হয়েছে বলে দোহাই দিয়েছেন দুদকের সচিব মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। বর্তমান কমিশন অনিষ্পন্ন অনুসন্ধান ও তদন্ত শেষ করার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে বলা হলেও বেসিক ব্যাংক, হল-মার্ক ও স্বাস্থ্য খাতের আলোচিত দুর্নীতির অনেক মামলার তদন্তই বছরের পর বছর ধরে ঝুলে আছে। মেয়াদোত্তীর্ণ অনুসন্ধান ও মামলার সংখ্যাই মোট অনুসন্ধান ও মামলার এক-চতুর্থাংশ।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, এত অনুসন্ধান ও মামলা মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার প্রধান কারণ দুদকের সক্ষমতার ঘাটতি। তদুপরি দুদকের একশ্রেণির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও মামলার তদন্তকে নিজেদের সুবিধা অর্জনের উপায় হিসেবে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগকারীরা প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রতিকার পাচ্ছেন না, অভিযোগ কমার এটাও কারণ হতে পারে।

করোনাকালে শুধু স্বাস্থ্য খাতেই দুর্নীতির অভিযোগের শেষ নেই। আর্থিক ও ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম তো আছেই। থেমে নেই অর্থ পাচারের স্রোত। সংসদ অধিবেশনে এ নিয়ে কম তর্কবিতর্কও হয়নি। অন্যদিকে দিনের পর দিন ঝিমিয়ে পড়ছে দুদক। গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ পাচারের তদন্তের বিষয়ে দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলছেন, তদন্ত অনুসন্ধানের জন্য তাঁদের নির্ভরশীল থাকতে হয় বিভিন্ন সংস্থার ওপর। তারা সময়মতো ও যথাযথ চাহিদা অনুযায়ী কাগজপত্র সরবরাহ করে না। যার কারণে দুদকের এ দীর্ঘসূত্রতা।

দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্তে বছরের পর বছর কেটে যাওয়া নিয়ে সম্প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন হাইকোর্টও। আদালত অর্থ পাচার রোধে প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট আইন সংস্কারের কথা বললেও এ নিয়ে দুদকের কোনো উদ্যোগ নেই। দুদক সরকারের অধীন কোনো প্রতিষ্ঠান না হলেও ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে যুক্ত ও আশীর্বাদপুষ্ট ব্যক্তিদের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত আয়ের বিরুদ্ধেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না। তাদের এ ধীরগতি বা নিষ্ক্রিয়তা দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদেরও সুযোগ করে দিচ্ছে। ফলে দুর্নীতি দমনে দুদকের পদক্ষেপ নিয়ে মানুষের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। সেটি ঘোচাতে দুদককেই উদ্যোগী হতে হবে। টিআইয়ের দুর্নীতির ধারণা সূচকে ২০২০ সালের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থান দুই ধাপ নেমে গেছে। এখন দুদক যদি সক্রিয় না হয়, দুর্নীতিবাজদের থামাতে সক্ষম না হয়, সামনের প্রতিবেদনে আরও লজ্জা যুক্ত হতে পারে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশের জন্য এর চেয়ে বড় কালিমা কী হতে পারে।