Thank you for trying Sticky AMP!!

আবুসিনা ছাত্রাবাস

সরকার সিলেট শহরে ২৫০ শয্যার একটি নতুন হাসপাতাল নির্মাণের যে প্রকল্প হাতে নিয়েছে, তা নিয়ে সেখানকার কারোরই আপত্তি নেই। সিলেট সদর হাসপাতাল ও ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সঙ্গে আরও একটি হাসপাতাল নির্মিত হলে সিলেটবাসীর স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগ বাড়বে। আপত্তি উঠেছে স্থান নির্ধারণ নিয়ে।

সিলেটবাসীর উদ্বেগের কারণ হলো, প্রকল্পের উদ্যোক্তারা নতুন হাসপাতাল নির্মাণের নামে দেড় শ বছরের পুরোনো ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবুসিনা ছাত্রাবাসটি ভেঙে ফেলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সিলেটের সর্বস্তরের মানুষ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ভবনটি রক্ষায় কিছুদিন ধরেই সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন করে চলেছেন। কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। আয়োজন করেছেন সাইকেলবন্ধন ও আর্ট ক্যাম্পের মতো ব্যতিক্রমী কর্মসূচির। এমনকি আবুসিনা ভবন রক্ষায় সোচ্চার হয়েছেন যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী প্রবাসীরাও।

সিলেটে আরেকটি হাসপাতাল হোক, সেটি সবারই কাম্য। কিন্তু সেই হাসপাতালটি সিলেট শহরের কেন্দ্রস্থলে হতে হবে কেন? চৌহাট্টা নামের এ স্থানটি অত্যন্ত কোলাহলপূর্ণ ও যানজটে আকীর্ণ। সব সময় ভিড় লেগে থাকে। তদুপরি সেখানে সদর হাসপাতাল নামে একটি হাসপাতাল রয়েছে। একই স্থানে দুটি হাসপাতাল থাকারও কোনো যুক্তি নেই। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, যাঁর আমলে প্রকল্পটি গৃহীত হয়েছিল, তিনিও বলেছেন, এখানে হাসপাতাল নির্মিত হতে পারে না। ১৯৬৮ সালের পুরাকীর্তি আইন অনুযায়ী শত বছর বয়সী ভবন ভাঙা বেআইনি।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও এই প্রকল্প বাস্তবায়নকারী গণপূর্ত অধিদপ্তর যুক্তি দেখাচ্ছে, জুনে কাজ শুরু করতে না পারলে বরাদ্দ ফেরত যাবে। তাদের এই যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। কেন বরাদ্দ ফেরত যাবে? যেখানে সিলেটের সব শ্রেণি ও পেশার মানুষ আবুসিনা ভবন রক্ষার দাবিতে এককাট্টা, সেখানে সংশ্লিষ্টরা তাদের আবেগ ও আকাঙ্ক্ষার বিষয়টি কেন সরকারকে বোঝাতে পারবে না? সিলেট শহরে হাসপাতাল নির্মাণের আরও অনেক জায়গা আছে।

আমরা অবিলম্বে আবুসিনা ছাত্রাবাসের ভেতরে পাইলিংয়ের কাজ বন্ধ এবং সেখানে ভবন ভাঙার জন্য যেসব যন্ত্রপাতি নেওয়া হয়েছে, তা সরিয়ে আনার দাবি জানাই। হাসপাতাল নির্মাণ এমন একটি অতিগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প, বাস্তব কারণে নির্ধারিত কাজ শুরু না হলে অর্থ ফেরত যেতে পারে না। এ ছাড়া জুন মাস শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত সময়ও রয়েছে। এর মধ্যে নতুন স্থান নির্ধারণ ও সেখানে হাসপাতাল নির্মাণের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু করতে পারলে সময় নিয়েও দুশ্চিন্তার কিছু থাকবে না।

সিলেটের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে আমরা বলতে চাই, ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতীক আবুসিনা ছাত্রাবাসটি রক্ষা করুন। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ধ্বংস করে হাসপাতাল নির্মাণ বা কোনো উন্নয়নকাজ হতে পারে না।