Thank you for trying Sticky AMP!!

আশুলিয়ায় বালু উত্তোলন

ঢাকার আশুলিয়ায় অবৈধভাবে নদী দখল করে বালুর ব্যবসা চলছে। এর ফলে বংশী নদীতে বিপর্যয় নেমে এসেছে। প্রতীয়মান হয় যে পুরো ঘটনাই ঘটছে প্রশাসনের জানাশোনার মধ্যে। সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে যঁাদের এসব অনিয়ম প্রতিরোধ করার কথা, তাঁরা নির্বিকার। অভিযোগ রয়েছে, এভাবে নদীর ক্ষতি করে বালু উত্তোলনের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। এ কারণে তাঁরা কার্যত একটা দায়মুক্তি ভোগ করছেন। এ অবৈধ বালু ব্যবসার সঙ্গে অবৈধ অর্থের লেনদেন এবং তার ভাগ-বাঁটোয়ারা বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে।

দেশের নির্মাণ, অবকাঠামো এবং অন্যান্য দরকারি কাজে পরিকল্পিত বালু উত্তোলনের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু দেশে বালু উত্তোলন নিয়ে দুর্নীতি, বিরোধ, বিবাদ বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে ২০১০ সালে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন প্রণীত হয়। এ আইনে প্রতিটি জেলায় নদীর ক্ষতি করে এবং বেআইনি পন্থায় বালু উত্তোলন প্রতিরোধে ডেপুটি কমিশনারদের বিরাট দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বংশী নদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের নদ–নদী থেকে আইনের শর্ত না মেনে নির্বিচারে বালু উত্তোলনের ঘটনা ঘটছে।

সুপরিকল্পিতভাবে বালু তোলার দায়িত্ব ইজারাগ্রহীতার। ২৬ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, আশুলিয়ার নয়াহাট এলাকায় বংশী নদী ও তার তীরে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। দুই কিলোমিটারের মধ্যে নদীতীরে প্রায় ৫০টি বালুর গদি (স্তূপ করা বালু যেখান থেকে ট্রাকে করে বিক্রি হয়) বসেছে। সুতরাং দুই ধরনের দণ্ডনীয় অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। নদী হত্যায় লিপ্ত হয়ে নদীর সম্পত্তি গ্রাস এবং বেআইনিভাবে বালুর ব্যবসা করা। এর ফলে রাষ্ট্র এবং জনস্বার্থ ভয়ানকভাবে বিপন্ন হচ্ছে।

এটা ধরে নেওয়া অমূলক নয় যে এ নৈরাজ্য জেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের প্রশ্রয়ে ঘটছে। এটা প্রকারান্তরে একধরনের প্রকাশ্য ডাকাতির শামিল। আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে ওই এলাকায় যাঁরা প্রকাশ্য ডাকাতি করছেন, তাঁরা কেউ ইজারাদার নন। নদী সুরক্ষায় আইন বলেছে, ইজারাদারকেও শর্ত মেনে বালু তুলতে হবে। অন্যথায় ডিসির দায়িত্ব ইজারাদারের চুক্তিপত্র বাতিল করা। তাঁর জামানত বাজেয়াপ্ত করা। বালু ব্যবস্থাপনা দেখভালের জন্য প্রতিটি জেলায় বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি থাকার কথা।

অবৈধভাবে বালু তোলার শাস্তি দুই বছর পর্যন্ত জেল এবং অনধিক ১০ লাখ টাকা জরিমানা। আইনে পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা নিষিদ্ধ। আইন বলছে, নদীর তলদেশ থেকে বালু বা মাটি তোলার ক্ষেত্রে যথাযথ ঢাল সংরক্ষণ সাপেক্ষে, সুইং করে নদীর তলদেশ সুষম স্তরে খনন করা যায়, এরূপ ড্রেজার ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু বংশী নদীর ‘দুর্বৃত্তরা’ বেপরোয়া। তাঁরা মুনাফা লুটছেন।

উল্লিখিত অপরাধের বিচারের ভার শুধু নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নন, আইনে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদেরও এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করব, ডিসি ত্বরিত ব্যবস্থা নেবেন এবং ম্যাজিস্ট্রেটরা অবৈধ দখলদারদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করবেন।