Thank you for trying Sticky AMP!!

আসুন, বুড়িগঙ্গাকে বাঁচাই

গত ২৯ জানুয়ারি শুরু হওয়া বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) অবৈধ উচ্ছেদ অভিযানটি আগের যেকোনো অভিযান থেকে ভিন্ন বলে ধারণা করা যায়। আগের অভিযানগুলো ছিল ক্ষণস্থায়ী। অভিযান শুরুর পর প্রভাবশালী মহলের চাপে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যেত। এবার দেড় মাসের বেশি সময় ধরে চলা এই অভিযানে সংস্থাটি অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিতে পেরেছে। দখলদারিতে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে ছিল রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।

আশার দিক হলো, বিআইডব্লিউটিএ উচ্ছেদ অভিযানে এবার প্রায় সব অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়েছে, যার মধ্যে দোতলা, তিনতলা, চারতলা, পাঁচতলা ভবনও রয়েছে। অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়াকে আমরা স্বাগত জানাই। সেই সঙ্গে প্রশ্ন থেকে যায়, বৈধ কাগজপত্র ছাড়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এসব স্থাপনা কীভাবে তৈরি করলেন? যাঁরা এসব বেআইনি কাজ করেছেন, কেন তঁাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলো না? অতীতে উচ্ছেদ অভিযানের নামে কাউকে কাউকে ছাড় দেওয়ারও ঘটনা ঘটেছে। এর পুনরাবৃত্তি কোনোভাবেই কাম্য নয়।

তবে মনে রাখতে হবে, নদীর দুই পাড় থেকে অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দিলেই নদী উদ্ধার হবে না। নদী উদ্ধার করতে হলে এর তলদেশে যে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য জমা হচ্ছে, তার উৎস বন্ধ করতে হবে। নদীর স্রোত বাধাগ্রস্ত করার পাশাপাশি তলদেশে বর্জ্য ফেলে নদী ভরাট করা হয়। এরপর দুই পাড়ে চলে দখলদারির মহোৎসব। বুড়িগঙ্গা নদীর আদি উৎসমুখ (ধলেশ্বরী থেকে বছিলা পর্যন্ত) কোনো না কোনোভাবে দখল ও ভরাট-প্রক্রিয়া চলমান আছে। ফলে বুড়িগঙ্গার দ্বিতীয় চ্যানেল মৃত্যুমুখে পড়েছে। এখন বুড়িগঙ্গাকে বাঁচিয়ে রাখার উপায় হলো এর স্রোতোধারা বহমান রাখা। যদি নদীর স্রোত মরে যায়, নদীকে বাঁচিয়ে রাখা যায় না।

বুড়িগঙ্গা নদী রক্ষায় সরকার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। বেসরকারি সংস্থাগুলো আন্দোলন করেছে। উচ্চ আদালত বারবার নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু পরিস্থিতির খুব একটা হেরফের হয়নি।

হাজারীবাগের ট্যানারিশিল্প ছাড়া বুড়িগঙ্গার তীরের কোনো কারখানা অপসারণ করা হয়নি। এসব কারখানা ও বসতবাড়ি থেকে যে প্রতিদিন টনকে টন বর্জ্য বুড়িগঙ্গায় পতিত হয়, তা অপসারণের কোনো ব্যবস্থা এখনো হয়নি।

পৃথিবীর খুব কম শহরই আছে, যার চারদিকে নদী। সেদিক থেকে ঢাকা হতে পারত অত্যন্ত পরিবেশবান্ধব শহর। এর চারদিকে রয়েছে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও ধলেশ্বরী। একসময় বুড়িগঙ্গাই ছিল ঢাকার সঙ্গে বাইরের যোগাযোগের প্রধান পথ। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সেই বুড়িগঙ্গা এখন মৃতপ্রায়। তুরাগ, বালু, ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্যাও মুমূর্ষু অবস্থায় আছে। এসব নদী এক দিনে যেমন দখল হয়নি, তেমনি এক দিনে নদীর তলদেশও ভরাট হয়ে যায়নি। দীর্ঘদিনের বেআইনি কর্মকাণ্ড এবং যঁাদের ওপর নদী রক্ষার ভার দেওয়া হয়েছিল, তঁাদের সীমাহীন ব্যর্থতার কারণেই ঢাকার চারপাশের নদীগুলো মরে যাচ্ছে। ঢাকাকে ঘিরে যে ওয়াটার বাস চালু হয়েছিল, তা–ও বন্ধ হয়ে গেছে নদীর নাব্যতার অভাবে। নদীর পানিতে এত বেশি দূষণ ও দুর্গন্ধ যে নৌকা কিংবা লঞ্চযাত্রীদের চলাচলও কঠিন হয়ে পড়েছে।

তবে শুধু আইন করে বুড়িগঙ্গা বা অন্যান্য নদীকে রক্ষা করা যাবে না। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি জনসচেতনতাও বাড়াতে হবে। প্রত্যেক নাগরিককে হতে হবে নদীর রক্ষাকর্তা। এখন কোনোরকমে বুড়িগঙ্গার ওপর দিয়ে লঞ্চ চলাচল করছে। নদীর দূষণ ও ভরাট-প্রক্রিয়া চলতে থাকলে সেটিও বন্ধ হয়ে যাবে। ঢাকা শহরকে জীবন্ত রাখতে, ঢাকার বাসিন্দাদের সুস্থ রাখতে আসুন বুড়িগঙ্গাকে বাঁচাই।