Thank you for trying Sticky AMP!!

ঈদের আগে সড়ক যোগাযোগ

চাকরি বা ব্যবসার সুবাদে যাঁরা শহরে থাকেন, তাঁদের একটা বড় অংশের ঈদে ‘বাড়ি যাওয়া’ বা ‘বাড়ি ফেরা’ সামাজিক রীতিতে পরিণত হয়েছে। এ জন্য দুই ঈদে সড়ক, রেল ও নৌপথের ওপর প্রচণ্ড চাপ পড়ে। ঈদ যেহেতু হুট করে এসে হাজির হয় না, তাই এই বিষয়টি মাথায় রেখে আগে থেকেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এবং সড়ক মেরামতের কাজটি যথাযথভাবে করতে পারলে শেষ মুহূর্তে নির্দেশ দেওয়া কিংবা তামিল করার প্রয়োজন হয় না।

মন্ত্রী মহোদয় ঈদের আগে সড়ক মেরামতের কাজ শেষ করার নির্দেশ জারির পাশাপাশি আরও কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে ঈদের তিন দিন আগে থেকে মহাসড়কে সব রকমের ট্রাক, লরি, কাভার্ড ভ্যান চলাচল বন্ধ রাখা। দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাপনায় যে মহাবিশৃঙ্খলা চলছে, যাত্রীসাধারণ প্রতিনিয়তই তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। মন্ত্রী যেদিন সড়ক ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে নানা উপদেশমূলক বাণী শুনিয়েছেন, সেদিনই সীতাকুণ্ডের বড় দারোগারহাটে ‘এক্সেল কন্ট্রোল লোডস্টেশনে’ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। ওজন নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের লোকজন একজন ট্রাকচালক ও তাঁর সহকারীকে মারধর করলে এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে।

সীতাকুণ্ড থানার ওসি মো. ইফতেখার হাসানের ভাষ্য অনুযায়ী ‘স্কেলের লোকজন সব সময় গাড়িচালকদের ওপর নানাভাবে অত্যাচার করেন এবং তাঁরা অতিরিক্ত অর্থ দাবি করেন। আবার পরিবহনকর্মীরাও অনেক সময় নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনের জন্য জোর করে থাকেন। সমস্যা দুই দিক থেকেই আছে। পরিবহনশ্রমিক ও ওজন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ‘অলিখিত চুক্তির’ কথাও অজানা নয়।

সড়কপথের এসব অনিয়ম–দুর্নীতি বন্ধ করা যাদের দায়িত্ব, সেই হাইওয়ে পুলিশের ব্যর্থতার নজির দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। তারাও ব্যস্ত থাকে বড় বড় চালান নিয়ে, যাত্রীসাধারণের সমস্যা আমলে নেয় না। যানবাহনগুলোর মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণে ঘন ঘন সড়ক দুর্ঘটনা এবং বহু মানুষের জীবনহানি সত্ত্বেও সংশ্লিষ্টদের ঘুম ভেঙেছে বলে মনে হয় না।

মন্ত্রিপরিষদ–শাসিত ব্যবস্থায় মন্ত্রীই মন্ত্রণালয়ের প্রধান। অতএব, সড়কপথের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হলে সেই কৃতিত্ব যেমন মন্ত্রীর, তেমনি ব্যর্থতার দায়ও তাঁকে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে অধস্তনকে তিনি কতবার নির্দেশ বা ধমক দিলেন, সেটি বিবেচ্য বিষয় নয়। বিবেচনার বিষয় হলো, ঠিক সময়ে ঠিক পরিকল্পনা নিয়ে কাজটি শেষ করা গেছে কি না।

প্রতিবছর ঈদের আগে মন্ত্রীকে দৌড়-ঝাঁপ ও অচল সড়ক সচল করার নির্দেশ দিতে দেখি। শেষ সময়ে এ ধরনের উদ্যোগে সড়কে কিছু চুনকাম হলেও সেটি টেকসই হয় না। আগেভাগে সড়ক মেরামতের উদ্যোগ নিলে কাজটি যেমন সহজ হয়, তেমনি শেষ সময় পর্যন্ত অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে হয় না। 

কোনো বিশেষ পরিস্থিতি তাৎক্ষণিক কোনো নির্দেশ দিয়ে সামাল দেওয়া যেতে পারে কিন্তু দেশের সড়ক ব্যবস্থাপনার কাজটি তাৎক্ষণিক নির্দেশ দিয়ে চলতে পারে না। এ জন্য প্রয়োজন হলো সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন। আশা করি, মন্ত্রী মহোদয় এ বছর ঈদে ঘরমুখী মানুষের দুর্ভোগ কমাতে সত্যি সত্যি কিছু করবেন। ফি বছর ঈদে ঘরে ফেরা নিয়ে মানুষ অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে চায় না।

মন্ত্রীর নির্দেশ বা আশ্বাসের চেয়ে দেশের মানুষ কাজই দেখতে যায়।