Thank you for trying Sticky AMP!!

ঈদের দিনক্ষণ বিভ্রাট

জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনক্ষণ ঘোষণা নিয়ে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। গত মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে 

ঈদের দিন বৃহস্পতিবার ঘোষণা করার দুই ঘণ্টা পর ঈদের দিন বুধবার পুনর্নির্ধারণ করা হয়। এর ফলে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।

ওই রাতে তারাবিহর নামাজ আদায় ও সাহ্‌রি খাওয়া নিয়ে দ্বিধায় পড়েছিল দেশের মানুষ। সাহ্‌রির জন্য রান্না করা, মাছ-মাংস রেফ্রিজারেটরে তুলে আবার বের করা, গৃহকর্মীদের বিদায় দিয়ে পুনরায় ডেকে আনার মতো জটিলতা সামাল দিতে গিয়ে গৃহিণীরা হিমশিম খান। এ ছাড়া বিউটি পারলারে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল করা, কেনাকাটা, দোকানকর্মীদের পরিকল্পনায় দ্বন্দ্ব তৈরি হওয়া এবং আগে ঘুমিয়ে পড়া বহু মানুষ সাহ্‌রি খেয়ে সকালে ঈদের খবর জানা—এমন বহু ধরনের বিপত্তি ঘটেছে। এই নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। অথচ কমিটি শুধু তারিখ পুনঃপরিবর্তন করেই নির্বিকার থাকে। কমিটির কোনো সদস্য বা সরকারের পক্ষে কেউ এত বড় একটা ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেনি।

ঈদুল ফিতর মুসলমানদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। এর দিনক্ষণ ঘোষণা অত্যন্ত স্পর্শকাতর বলেই কমিটির সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে ব্যাপকতর ও বহুস্তরবিশিষ্ট করা হয়েছিল। এবার কমিটি যা করল তাতে প্রতীয়মান হচ্ছে, বিদ্যমান ব্যবস্থা দুর্বল ছিল। এর দায় অবশ্যই কমিটির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের ওপর পড়ে। আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করি, চাঁদ দেখা কমিটি জনগণের আবেগ-অনুভূতি এবং স্বাভাবিক কৌতূহলকে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে নিতান্ত যান্ত্রিকভাবে রাত ১১টার দিকে পরিবর্তিত সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করে। সিদ্ধান্ত নিতে কেন বিলম্ব হলো, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয়নি মন্ত্রণালয়।

দেশে যখন ডিজিটাল ব্যবস্থা বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছিল না, তখনো চাঁদ দেখা কমিটি সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে গেছে। অথচ এখন যখন সারা দেশের প্রশাসন ও নাগরিক সমাজ প্রতি মুহূর্ত অনলাইন নেটওয়ার্কে সক্রিয় থাকে, তখন এ রকম একটি ঘটনা ঘটল। বোঝা গেল, চাঁদ দেখা কমিটি এসব নতুন যোগাযোগব্যবস্থা ও প্রযুক্তির সুফল পুরোপুরি নিতে পারেনি।

দেশের কোথাও চাঁদ দেখা গেলে সেটি স্থানীয় প্রশাসন কিংবা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মাধ্যমে জেলা কমিটির কাছে পৌঁছায়। পাশাপাশি, আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেশজুড়ে যে ৭৪টি স্টেশন আছে, সেখান থেকেও তথ্য নেয় চাঁদ দেখা কমিটি। জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও আবহাওয়া অধিদপ্তরকে এ বিষয়ে নিজ নিজ অবস্থানের ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত। সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিদ্যমান প্রক্রিয়াও খতিয়ে দেখতে হবে। ভূরুঙ্গামারী, নাগেশ্বরী কিংবা লালমনিরহাটের মানুষেরা যথাসময়েই চাঁদ দেখেছিলেন। সুতরাং চাঁদ দেখা কমিটির সঙ্গে জেলা প্রশাসনগুলোর যে সমন্বয় ছিল না, সেটা বলাই যায়।

উপরন্তু মুঠোফোনের জমানায় এ রকম একটি ভুল শুধরে নিতে চাঁদ দেখা কমিটিকে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় নিতে হয়েছে, যা সার্বিকভাবে কমিটির অদক্ষতা ও দায়সারা ভাবকেই তুলে ধরে।

আমরা আশা করব, ঈদের দিনক্ষণ স্থির করা নিয়ে জনমনে চাঁদ দেখা কমিটির দক্ষতা ও কার্যকরতা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, তার আলোকে কমিটির খোলনলচে বদলে ফেলা এবং একে যুগোপযোগী করা জরুরি হয়ে পড়েছে।