Thank you for trying Sticky AMP!!

ঈদে গণপরিবহন

বাংলাদেশে গণপরিবহন, বিশেষ করে সড়কপথে যাত্রীদের চলাচল যে কতটা নিরাপত্তাহীন, প্রতিদিন হতাহতের সংখ্যা থেকে সেটি অনুমান করা কঠিন নয়। যাত্রীকল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী গত তিন ঈদে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৮০০ মানুষ। এর মধ্যে ২০১৮ সালে ঈদুল ফিতরে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ৩৩৯ জন।

বিশেষজ্ঞরা সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে চালকের অদক্ষতা ও বেপরোয়া যানবাহন চালানোর পাশাপাশি ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, সড়ক ও সেতুর নাজুক অবস্থাকেও চিহ্নিত করেছেন। গত শনিবার বাগেরহাটে চাকা ফেটে একটি বাস দুর্ঘটনায় পড়লে ছয়জন যাত্রী মারা যান। যানবাহন সড়কে বের করার আগে চাকা বা ইঞ্জিন ঠিক আছে কি না, সেটা পরীক্ষা করা যে বাধ্যতামূলক, তা অনেক পরিবহন সংস্থা ও চালকই মানেন না। ঈদের সময় সড়কে নৈরাজ্য আরও বেড়ে যায়। অধিক মুনাফার লোভে পরিবহন সংস্থাগুলো চালকদের অনেক বেশি কর্মঘণ্টা কাজ করতে বাধ্য করে। এ ছাড়া এ সময়ে ফিটনেসবিহীন যানবাহনও বেশি সড়কে নামানো হয়।

ঈদ বা অন্য কোনো পার্বণে স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে যে কয়েক গুণ বেশি মানুষ চলাচল করেন, তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে কর্তৃপক্ষ ভাবিত বলে মনে হয় না। ঈদের আগে কিছু ট্রেনের বগি বাড়িয়ে, কিছু ভাঙা সড়কে চুনকাম করে, মহাসড়কে যান চলাচলের বিষয়ে কিছু নির্দেশনা দিয়েই তারা দায়িত্ব শেষ করে। ফলে ঈদের সময়ে যাত্রীসাধারণ শুধু অবর্ণনীয় দুর্ভোগেরই শিকার হন না, বহু পরিবারে ঈদের আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়।

বাংলাদেশে তিনটি প্রধান গণপরিবহন যথাক্রমে সড়ক, ট্রেন ও নৌপথেই বেশি মানুষ চলাচল করে। এবার ঈদ উপলক্ষে ইতিমধ্যে বাস ও লঞ্চের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হবে ২২ মে থেকে। প্রথম আলোর প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রথম দিনই এসি বাসের টিকিট না পেয়ে অনেক যাত্রী ফিরে গেছেন।

প্রায় সব পরিবহন সংস্থা যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। অন্যান্য দেশে উৎসব-পার্বণে যাত্রী ও ক্রেতাদের বিশেষ ছাড় দেওয়া
হয়। আর আমাদের এখানে উল্টো তাদের কাছ থেকে বাড়তি পয়সা নেওয়া হয়। এটি দুঃখজনক।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, ঈদুল ফিতরের আগে তিন দিন সড়ক-মহাসড়কে ট্রাক, লরি ও কাভার্ড ভ্যান চলাচল বন্ধ থাকবে। সড়ক ও মহাসড়ক ও সেতু বিভাগের সচিব জানিয়েছেন, জনগণের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সব শ্রেণির মহাসড়কের চলমান মেরামতকাজ ঈদের সাত দিন আগে শেষ করা হবে। এ ছাড়া সড়ক-মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল বন্ধে বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করবে।

বাস্তবতা হলো প্রতিবছর ঈদের আগে এ ধরনের ঘোষণা দেওয়া হলেও দুর্ঘটনা রদ হয় না। ঈদের সময়ে যে কয়েক গুণ যাত্রী চলাচল বেড়ে যাবে, তাদের সামাল দিতে প্রয়োজন টেকসই ও কার্যকর পদক্ষেপ। বর্ধিত যাত্রীদের কথা মাথায় রেখে বাস, ট্রেন ও লঞ্চের সংখ্যা বাড়াতে হবে, তাই বলে ফিটনেসহীন যানবাহন সড়কে নামানো যাবে না। ঈদের সময় পরিবহনমালিকদের মধ্যে যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা দেখা যায়, তা–ও বন্ধ করতে হবে। এ বিষয়ে যাত্রীকল্যাণ সমিতি যে ২০ দফা প্রস্তাব দিয়েছে, সেটি আমলে নিলে সড়কের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা অসম্ভব নয়।

এবার ঈদের সময় কালবৈশাখীর আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই লঞ্চ, স্টিমার ও ফেরি চলাচলের ক্ষেত্রে বাড়তি সাবধানতা প্রয়োজন। বর্ষার প্রকোপ কম থাকায় সড়কপথে ঝুঁকি কম থাকবে। তারপরও যাত্রীদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।