Thank you for trying Sticky AMP!!

ঈদে সড়ক যোগাযোগ

সারা বছর সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা যত নাজুকই থাকুক না কেন, সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষের ঘুম ভাঙে না। ঈদ কাছাকাছি এলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো তৎপর হয়ে ওঠে। এটি প্রতিবছরের চিত্র। এবারও যে তার ব্যতিক্রম কিছু ঘটেনি, প্রথম আলোসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরই তার প্রমাণ। ঈদের বাকি মাত্র চার দিন। ঈদের আগে গত মঙ্গলবারের মধ্যে মেরামতের কাজ শেষ করার কথা ছিল। সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সে রকম নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রথম আলোর অনুসন্ধান ও প্রতিনিধিদের পাঠানো ছবি ও প্রতিবেদনে দেখা যায়, অনেক সড়ক এখনো বেহাল।

গত সোমবার খুলনা-যশোর সড়কে একটি ফলক টাঙানো ছিল, যাতে লেখা আছে—‘উন্নয়নমূলক কাজ চলমান। সাময়িক অসুবিধার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত’। সওজের কর্মকর্তারা বলছেন, মহাসড়কের যেসব অংশ বেশি নাজুক, সেখানে কোনো না কোনো প্রকল্পের অধীনে কাজ চলছে। সড়কের উন্নয়ন প্রকল্পের কথা শুনলে মানুষ আশাবাদী না হয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। কেননা, কোন প্রকল্পের কাজ কবে শেষ হবে, কেউ নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছে না। প্রকল্পের সময় যত বাড়ানো যায়, খরচের পরিমাণও তত বেড়ে যায়। বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশে সড়ক ও সেতু নির্মাণের ব্যয় অস্বাভাবিক রকমের বেশি। 

 গত কয়েক দিনে সড়কে ইট, বালু ও খোয়া বিছিয়ে যে মেরামতকাজ হয়েছে, তা সামান্য বৃষ্টি পড়লেই ধুয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। তদুপরি ঈদের ছুটিতে যানবাহনের চাপ বেড়ে গেলে সড়ক আবার মেরামতের আগের অবস্থায় ফিরে আসবে। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-যশোর–খুলনা, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহসহ প্রায় সব মহাসড়কে মেরামতকাজ চলছে। কোনো কোনো সড়কে উন্নয়নকাজ চলতে থাকায় যানবাহন চলাচলের জায়গা আরও সরু হয়ে গেছে। সড়ক ও সেতুমন্ত্রী সওজের লোকদের অতিরিক্ত কাজ করে হলেও সড়ক মেরামত করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তাঁর নির্দেশ কতটা পালিত হবে, বলা কঠিন। 

ঢাকা-রংপুর সড়কে বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর পর্যন্ত অসংখ্য গর্ত ছিল। গত কয়েক দিনে এর কিছু কিছু মেরামত হলেও স্থানে স্থানে গর্ত আছে। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে যশোরের পালবাড়ি থেকে অভয়নগরের রাজঘাট পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার মহাসড়ক পুনর্নির্মাণ চলছে। একজন বাসচালক জানিয়েছেন, মহাসড়কের এই অংশে সর্বত্রই খোয়া-বালু-পাথরের ছড়াছড়ি। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী সেতু থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার পথ অত্যন্ত নাজুক। 

এ ছাড়া ঢাকা-মুন্সিগঞ্জের মতো আঞ্চলিক সড়কগুলোর অবস্থা আরও শোচনীয়। অর্থাৎ এবারও সরকার যাত্রীদের ঈদযাত্রার মহাসড়ক, আঞ্চলিক ও স্থানীয় সড়কের মেরামতের কাজটি শেষ করতে পারেনি। মন্ত্রীর আশ্বাস শুধু আশ্বাসেই থেকে গেল। একজন বাসচালক বলেছেন, ‘মহাসড়কের এই অংশে সর্বত্রই খোয়া-বালু-পাথরের ছড়াছড়ি। বৃষ্টিতে পানি জমে যায়। আর অন্য সময় ধুলার রাজ্যে পরিণত হয়।’ সে ক্ষেত্রে এবারও সড়কপথে যাত্রীদের আগের মতোই দুর্ভোগ আর ভোগান্তির শিকার হতে হবে। সংশ্লিষ্টদের তর্জন–গর্জন সকলি গড়ল ভেল। 

ঈদযাত্রার অপর দুটি মাধ্যম ট্রেন ও নৌপথের অবস্থা ভালো, তা–ও বলা যায় না। মানুষ ট্রেনযাত্রাকে অধিকতর নিরাপদ মনে করলেও গত ঈদে ট্রেনের সময়সূচি মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত ছিল। এবার তার পুনরাবৃত্তি যেন না নয়। সড়ক যোগাযোগ বিপর্যস্ত হলে যেমন ট্রেনের ওপর চাপ পড়ে, তেমনি ট্রেন বিপর্যস্ত হলে সড়কপথেও চাপ বাড়ে। গত ঈদে নৌপথ মোটামুটি নির্বিঘ্ন থাকলেও ঝড়বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে এবার বাড়তি সতর্কতা জরুরি। লঞ্চে কোনোভাবে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া যাবে না।