Thank you for trying Sticky AMP!!

এড়িয়ে গেলে জনগণ ভুল বার্তা পাবে

সম্পাদকীয়

কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরা গত সোমবার বাংলাদেশ নিয়ে যে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তার বিষয়বস্তু এখন আর কোনো গোপনীয় ব্যাপার নয়। সংবাদমাধ্যমটি আগাম ঘোষণা দিয়ে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ শিরোনামের ভিডিও প্রতিবেদনটি প্রচার করেছে এবং এটি সম্প্রচারে কোনো নিষেধাজ্ঞা বা কারিগরি বাধা সৃষ্টি না করায় জনগণ তা দেখতে পেরেছে। সংগত কারণেই এ প্রতিবেদন নিয়ে নানা মহলে নানা আলোচনা হচ্ছে এবং জনমনে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে এ নিয়ে রাখঢাক রয়েছে এবং সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা হচ্ছে আকারে–ইঙ্গিতে। এ ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি স্বাভাবিক বাক্‌স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের পরিবেশের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।

দেশের সংবাদমাধ্যমসহ সব মহলের মধ্যে যে একধরনের সেলফ সেন্সরশিপ বা স্ব আরোপিত বিধিনিষেধ কাজ করছে সেটা স্পষ্ট এবং এর কারণও আমাদের সবার জানা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের গণতান্ত্রিক পরিসর সংকুচিত হয়েছে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর ক্রমাগত আঘাত এসেছে এবং সংবাদমাধ্যমসহ দেশের মানুষের ওপর ঝুলছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ নানা নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা। সবকিছু মিলিয়ে যে ভয়ের সংস্কৃতি বিরাজ করছে, আল–জাজিরার প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু নিয়ে সব মহলের সেলফ সেন্সরশিপে তারই প্রতিফলন ঘটেছে।

আল–জাজিরার প্রতিবেদন নিয়ে সরকার ও সেনাবাহিনীর তরফে দুটি প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে আল–জাজিরার প্রতিবেদনের তীব্র নিন্দা করা হয়েছে। আইএসপিআরের তরফে বলা হয়েছে, মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা এ প্রতিবেদন কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের দেশকে অস্থিতিশীল করার ধারাবাহিক প্রচেষ্টার অপপ্রয়াস মাত্র।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া অপর বিবৃতিতে আল–জাজিরার প্রতিবেদনকে প্রত্যাখ্যান করে একে লন্ডন ও অন্যান্য জায়গায় সক্রিয় উগ্রপন্থী ও তাদের সহযোগীদের উসকানিতে বেপরোয়া ও নোংরা অপপ্রচার বলে উল্লেখ করা হয়। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে জামায়াতে ইসলামীর মদদপুষ্ট কিছু সাজাপ্রাপ্ত পলাতক অপরাধী এবং কুখ্যাত ব্যক্তি তাদের চিরাচরিত ছকে যে ধরনের বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার চালায়, এ রিপোর্টও সেই শ্রেণির। এরা বিভিন্ন উগ্রপন্থী আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী ও সংবাদমাধ্যম, বিশেষ করে আল–জাজিরার সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিভিন্ন সময় ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।

এ দুটি প্রতিবাদ ও প্রতিক্রিয়ায় আল–জাজিরার প্রতিবেদনকে প্রত্যাখ্যান করা হলেও সেখানে যেসব প্রসঙ্গ ও বিষয় উঠে এসেছে, সেগুলোর কোনো সরাসরি ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। অথচ প্রতিবেদনে অর্থ পাচার, জাল পাসপোর্ট তৈরিসহ দুর্নীতি–অনিয়মের নানা প্রসঙ্গ রয়েছে। তবে ইসরায়েল থেকে ইন্টারনেট ও মোবাইল মনিটরিং সামগ্রী কেনা–সংক্রান্ত অংশ সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে আইএসপিআরের বিবৃতিতে তা অস্বীকার করা হয়েছে। বলা হয়েছে, হাঙ্গেরি থেকে কেনা সামগ্রীকে ইসরায়েলের সামগ্রী বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকায় ইসরায়েল থেকে তা কেনার কোনো সুযোগ নেই।

আমরা মনে করি, আল–জাজিরার প্রতিবেদনটিতে আরও যেসব প্রসঙ্গ রয়েছে, সেগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া হলে তা জনগণকে ভুল বার্তা দেবে। জনগণ যেহেতু প্রতিবেদনটি দেখেছে, তাই তাদের কাছে প্রতিটি প্রসঙ্গ পরিষ্কার করা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, প্রতিবেদনে স্থান পাওয়া বিষয়গুলোর অনেক কিছু আগে থেকেই বিভিন্ন মহলে আলোচনায় ছিল।

আল–জাজিরা একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এবং প্রতিবেদনটি ইংরেজি ভাষায় সম্প্রচারিত হওয়ায় শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দর্শকের কাছে তা পৌঁছেছে। এর একটি আন্তর্জাতিক দিক রয়েছে। ফলে আল–জাজিরার প্রতিবেদনটিকে এককথায় প্রত্যাখ্যান করার কৌশল নেওয়ার চেয়ে উত্থাপিত বিষয়গুলোর যৌক্তিক ও বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা তুলে ধরা বেশি জরুরি।