Thank you for trying Sticky AMP!!

কবিরহাটে গণধর্ষণ

১৮ জানুয়ারি দিবাগত রাতে নোয়াখালীর কবিরহাটে অস্ত্রের মুখে মা ও সন্তানদের জিম্মি করে ২৯ বছর বয়সী এক গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড ২৩ জানুয়ারি জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। এটা দুঃখজনক খবর, কেননা এতে অপরাধ প্রমাণ করা ও অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া কষ্টসাধ্য হতে পারে।

কিন্তু এটা বিস্ময়কর নয়, কারণ এই দেশে ধর্ষণ মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে এটা একটা সাধারণ চিত্র। ধর্ষণের শিকার নারীর দৃশ্যমান শারীরিক দুর্দশা ও মানসিক বিপর্যয় সত্ত্বেও তদন্তকারীরা ধর্ষণের আলামত খুঁজে পান না। বিশেষত ধর্ষণের শিকার নারী যদি হন দরিদ্র, ক্ষমতাহীন, প্রভাব–প্রতিপত্তিহীন, আর ধর্ষকেরা হন ধনী, ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী। কবিরহাটে গণধর্ষণের শিকার নারী একজন দরিদ্র নির্মাণশ্রমিকের স্ত্রী, আর তাঁকে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি জাকের হোসেন ওরফে জহির কবিরহাটের ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের নেতা হিসেবে পরিচিত; অবশ্য স্থানীয় আওয়ামী লীগ বলছে, তিনি ওই দলের কেউ নন। এটাও একটা সাধারণ প্রবণতা যে ক্ষমতাসীন দল ও তার অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের কারও বিরুদ্ধে খুন–ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধের অভিযোগ উঠলে যদি প্রবল জনপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এবং সংবাদমাধ্যমে শোরগোল ওঠে তাহলে বলা হয়, তিনি দলের কেউ নন। তবে অভিযুক্ত ব্যক্তি ক্ষমতাসীন মহলের রুই–কাতলাদের আশীর্বাদপুষ্ট হলে এমনটা ঘটে না; বরং সে ক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্ধে স্বাভাবিক আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করা হয়।

যাহোক, কবিরহাটের গণধর্ষণের ক্ষেত্রে এটা ভালো হয়েছে যে অভিযুক্ত ধর্ষকদের দলনেতাকে রক্ষা করতে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় শাখা এগিয়ে আসেনি; বরং সম্পর্কই ছিন্ন করেছে। পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে এবং তিনি ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে অপরাধ স্বীকার করে বলেছেন, ওই নারীকে ধর্ষণের সঙ্গে পাঁচ ব্যক্তি জড়িত ছিলেন। পুলিশ বৃহস্পতিবার তাঁদের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। আইন প্রয়োগের এই তৎপরতা উৎসাহব্যঞ্জক, কিন্তু সমস্যা হলো পুলিশ এই মামলার প্রধান আসামির জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে ধর্ষণের শিকার নারীর দেবরসহ তিন আত্মীয়কেও গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছে। কিন্তু ধর্ষণের শিকার নারী বা তাঁর স্বামী তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি; বরং তাঁরা বলেছেন, তাঁদের পরিবারের ভেতরে কলহ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে মামলার প্রধান আসামি তাঁর জবানবন্দিতে ধর্ষণের শিকার নারীর দেবরসহ তিন আত্মীয়ের নাম বলেছেন।

মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে পুলিশের উচিত ধর্ষণের শিকার নারী ও তাঁর স্বামীর বক্তব্যের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়া এবং প্রধান আসামির দুরভিসন্ধিমূলক বক্তব্যকে সন্দেহ করা। আর ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত না পাওয়ার বিষয়টি যেহেতু গ্রহণযোগ্য নয়, তাই আবারও পরীক্ষা করা উচিত। ধর্ষণের শিকার নারীর অসুস্থতা ও আনুষঙ্গিক নানা আলামত যথাযথভাবে আমলে নেওয়া হোক।