Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনাকালে ডেঙ্গুর আশঙ্কা

বাংলাদেশে কোভিড–১৯ মহামারির বিস্তার ঘটে চলেছে অব্যাহতভাবে। প্রতিদিন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে বাড়ছে; গড়ে দৈনিক মারা যাচ্ছে ৪০ জনের বেশি। মোট মৃতের সংখ্যা ইতিমধ্যে এক হাজার পেরিয়ে গেছে। সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতি আরও কত দিন চলবে, সে বিষয়ে এখনো কেউ নিশ্চিত নন। এই গুরুতর সংকটের মধ্যেই চলে এসেছে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাবের মৌসুম, যে রোগ এ দেশে কখনো কখনো প্রায় মহামারির আকার ধারণ করে।

গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন এক লাখের বেশি মানুষ; সরকারি হিসাবে মারা গেছেন ১৭৯ জন, বেসরকারি হিসেবে প্রায় ৩০০ জন। ২০১৮ সালের তুলনায় গত বছরের ডেঙ্গুর প্রকোপ অস্বাভাবিক রকমের বেশি হয়েছিল যেসব কারণে, চলতি বছরের কোভিড–১৯ মহামারিকালেও সেই কারণগুলো রয়ে গেছে। ফলে মড়ার উপর খঁাড়ার ঘায়ের মতো কোভিডের মধ্যে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে জনচিকিৎসাব্যবস্থার চলমান ভগ্নদশায় আমরা কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেব, তা এক গভীর উদ্বেগের বিষয়।

জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত—এই চার মাস বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাবের সময়। অবশ্য এই সময়ের বাইরেও কিছু কিছু মানুষ এই জীবাণুবাহিত রোগে আক্রান্ত হন। এ বছরও ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই কিছু মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত দেশে ৩১১ জন ব্যক্তি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসারত ছিলেন তিনজন। এর মধ্যে খবর বেরিয়েছে, ঢাকা মহানগরের ৬৯ শতাংশ ঘরবাড়ি ও স্থাপনায় ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার বংশবিস্তারের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। অর্থাৎ ওই সব এলাকার বাসিন্দাদের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে।

এই ঝুঁকি অবশ্যই দূর করা প্রয়োজন। কীভাবে তা করতে হবে, তা দুই সিটি করপোরেশনের অজানা নেই। মহানগরের বাসিন্দাদেরও অধিকাংশের তা জানা থাকার কথা। তবে সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব ও সাধারণ মানুষের দায়িত্ব এক রকমের নয়। ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশার বংশবিস্তার রোধ করার জন্য দুই সিটি করপোরেশনের সুনির্দিষ্ট কিছু করণীয় কাজ রয়েছে। তারা তা ঠিকমতো করছে না, এসব দায়িত্ব পালনে তাদের অনেক গাফিলতির অভিযোগ আছে। কোভিড–১৯ মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে মশা নিধন অভিযানে শিথিলতার অভিযোগ সংবাদমাধ্যমে একাধিকবার প্রকাশিত হয়েছে।

আমরা সব সময় বলে আসছি, মশা নিধনকে মৌসুমি কাজ মনে করা চলবে না। মশার লার্ভা ধ্বংসকারী গুণগত মানসম্পন্ন ও কার্যকর ওষুধ সারা বছর ধরে নিয়মিতভাবেই ছিটাতে হবে; নালা-নর্দমাগুলো পরিষ্কার করতে হবে নিয়মিতভাবে, যাতে কোথাও পানি আটকে থেকে মশার বংশবিস্তারের উর্বর ক্ষেত্র তৈরি না হয়।

অন্যদিকে নাগরিক পর্যায়ে নিজ নিজ বাসাবাড়ির ভেতরে, ছাদে, বারান্দায় ফুলের টবে বা অন্য কোনো আধারে এবং সীমানাপ্রাচীরের আশপাশে পরিত্যক্ত পাত্রে বা খানাখন্দে পানি জমে না থাকে, তা নিশ্চিত করার প্রশাসনিক পদক্ষেপ জোরদার করা প্রয়োজন। মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে জরিমানা আদায় করলেই সমস্যার সমাধান হবে না; জরিমানা আদায়ের প্রয়োজন যেন না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

এ বিষয়ে অবশ্যই নাগরিকদের সতর্কতা ও দায়িত্বশীলতা জরুরি বিষয়। অনেক বাসাবাড়ি ও স্থাপনার মালিক বা বাসিন্দা জরিমানার বিষয়টি জানা থাকা সত্ত্বেও এ বিষয়ে অবহেলা করেন। কারণ, এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নিয়মিত নজরদারি নেই। কিন্তু এটা তো জরিমানা দেওয়া বা তা এড়ানোর সুযোগের মতো ব্যক্তিগত বিষয় নয়, সবার স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সুতরাং এ বিষয়ে নাগরিক দায়িত্বশীলতা অবশ্যই আরও বাড়াতে হবে।