Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনাকালে স্বাস্থ্যসেবা

বিলম্বে হলেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের পরীক্ষা ও চিকিৎসার বিষয়ে তৎপরতা কিছুটা বেড়েছে। তবে করোনা চিকিৎসার প্রাথমিক স্তর পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কিট, আইসিইউর যন্ত্রপাতি এবং সামগ্রিকভাবে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের দরকারি পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্ট বা পিপিই সরবরাহের ক্ষেত্রে এখনো যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে।

এ কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা কাজ করছে। তঁাদের এই নিরাপত্তাহীনতা এতটাই প্রকট যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নন, এমন রোগীরাও হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসাসেবা না পেয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন।

করোনাভাইরাসের যেসব লক্ষণের কথা বলা হচ্ছে অর্থাৎ সর্দি-কাশি, হাঁপানি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ইত্যাদি বাংলাদেশে সব সময়ই ছিল। আমাদের চিকিৎসাসেবাপ্রার্থীদের একটা বড় অংশই এসব রোগের সেবা নিয়ে থাকেন। এসব উপসর্গ করোনাভাইরাসের কারণে হয়েছে নাকি সাধারণ জ্বর, সর্দি-কাশি বা শ্বাসকষ্ট, তা নিশ্চিত করতে পরীক্ষা জরুরি। কিন্তু অধিকাংশ হাসপাতালে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পিপিই ব্যবস্থা না থাকায় তারা এ ধরনের রোগীদের গ্রহণই করছে না। ফলে স্বাস্থ্যসেবাপ্রার্থীরা এক মহা সংকটে পড়েছেন।

 মো. আলমাছ উদ্দিন নামের এক মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসাসেবা না পেয়ে মৃত্যু হওয়ার যে করুণ কাহিনি প্রথম আলোতে ছাপা হয়েছে, তা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ার পর স্বজনেরা তাঁকে একে একে ছয়টি হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। কিন্তু নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ার লক্ষণ থাকায় কোনো হাসপাতাল আলমাছ উদ্দিনকে ভর্তি করতে রাজি হয়নি। আবার কোনো হাসপাতাল ভর্তি করলেও চিকিৎসকেরা সেবা দিতে অপারগতা জানান। ফলে তিনি বিনা চিকিৎসায় মারা যান। করোনা–আতঙ্কে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে এ রকম অসংখ্য রোগীকে চিকিৎসাসেবা না দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

করোনা–সংকট একটা বিশেষ পরিস্থিতি। সেটা সামাল দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, কিন্তু দেখা যাচ্ছে এই পরিস্থিতিতে সাধারণ স্বাস্থ্যসেবাব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। করোনা সংক্রমণ ছাড়াও লোকজন নানা রোগে আক্রান্ত হবে এবং তার জন্য জরুরি স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজন পড়বে। বিষয়টি আগেভাগে বিবেচনায় না নেওয়ায় এবং এ–সংক্রান্ত কোনো গাইডলাইন ঠিক না করায় পরিস্থিতি শোচনীয় হয়ে পড়েছে।

করোনাভাইরাস মোকাবিলার এই জরুরি পরিস্থিতিতে প্রতিদিন যে হাজার হাজার সাধারণ রোগী স্বাস্থ্যসেবা নিতে বিভিন্ন হাসপাতালে যাচ্ছে, তাদের চিকিৎসার বিষয়টিকে কোনোভাবেই হেলাফেলার সুযোগ নেই। কিন্তু এটি চরমভাবে উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তরফে প্রয়োজনীয় নজরদারি ও নির্দেশনার অভাব দেখা যাচ্ছে। হাসপাতাল ফিরিয়ে দিলে রোগীরা যাবে কোথায়—এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা বা এর সমাধানের দায় কি কারও নেই?

আমরা মনে করি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকে এই বাস্তব সমস্যা দূর করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর জন্য এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরি করে দিতে হবে। এই গাইডলাইন ও নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোকে মানতে বাধ্য করতে হবে। কেউ নির্দেশনা না মানলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পিপিই সরবরাহ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ, তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা না গেলে ও তারা অসুস্থ হয়ে পড়লে পুরো ব্যবস্থাই ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে। সবাইকে এটা বুঝতে হবে যে আমরা এক বিশেষ ও ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। সবার সম্মিলিত উদ্যোগ ও চেষ্টা ছাড়া এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়।