Thank you for trying Sticky AMP!!

কৃষকের লাভ সবচেয়ে কম

চিত্রপরিচালকেরা কৃষি নিয়ে একটা ছবি তৈরি করতে পারেন। গল্পটি হবে এমন: একদিকে কৃষিবিজ্ঞানী ও সরকারি কর্মকর্তারা কৃষির সম্ভাবনা নিয়ে অপূর্ব স্বপ্ন দেখাচ্ছেন, অন্যদিকে কৃষক ফসলের উৎপাদন খরচ তুলতে না পেরে চাষবাস ছেড়ে দিচ্ছেন। মঞ্চে যাঁকে আদর করে ‘চাষিভাই’ ডাকা হচ্ছে, মাঠে নামলে তিনিই হয়ে যাচ্ছেন ‘চাষার বাচ্চা চাষা’। ফসল ফলিয়ে বিশ্বায়িত বাজারে জায়গা করে নেওয়ার স্বপ্নপূরণ দূরে থাক, পেটের পীড়ন সামলে টিকে থাকাই চাষির জন্য দুরূহ হয়ে উঠছে।

এমন গল্প নিয়ে চলচ্চিত্র বানান বা না বানান, গল্পটা আছে। সেটা ঘুরে ঘুরে চলতেই থাকবে।

কৃষক ফসল ফলাচ্ছেন। কিন্তু দাম পাচ্ছেন না। লাভের গুড় খেয়ে ফেলছে মধ্যস্বত্বভোগী পিঁপড়ারা। কৃষকের ফলানো কাঁঠাল তাঁরই মাথায় ভেঙে খাচ্ছে ফড়িয়া, আড়তদার, খুচরো বিক্রেতারা। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, কৃষিপণ্য কৃষকের কাছ থেকে ভোক্তার কাছে যেতে অন্তত তিন দফা হাতবদল হয়। এ প্রক্রিয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ী, পাইকারি ব্যবসায়ী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা কৃষকের চেয়ে অনেক বেশি লাভ করেন। চাষির পণ্য বিক্রি করে কয়েক গুণ বেশি লাভ করেন এই মধ্যস্বত্বভোগীরা।

সবজিচাষিরা সবচেয়ে বেশি ঠকছেন। ২০১৭-১৮ সালে এক কেজি টমেটোতে কৃষকের লাভ ছিল ২ টাকা ১০ পয়সা, স্থানীয় ব্যবসায়ী লাভ করছেন ৩ টাকা ৫ পয়সা, পাইকারের লাভ ছিল ৬ টাকা ৬০ পয়সা এবং খুচরো বিক্রেতার লাভ ছিল ৭ টাকা ২৫ পয়সা। প্রায় সব সবজির ক্ষেত্রেই এই চিত্র দেখা যাচ্ছে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

এখনো গ্রামাঞ্চলের ৭০ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ–পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তাই সরকারকে কৃষি ও কৃষক নিয়ে সুন্দর সুন্দর কথা বলতেই হচ্ছে। কিন্তু সেসব কথা কার্যকর করার জন্য যে প্রচেষ্টা ও বিনিয়োগ দরকার, তা কার্যত হচ্ছে না। কৃষক তাঁর ফসলের ন্যায্যমূল্য কেন পাবেন না, তা নিয়ে সরকারি মহলে তেমন কোনো কথা শোনা যায় না। এর প্রধান কারণ রাজনৈতিক দিকটিতে কৃষকের কণ্ঠ অনেক কমজোরি। দেশের কৃষিনীতি তৈরি হয় মধ্যস্বত্বভোগীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে। সবজিচাষিদের মতো লোকের কথা কেউ তেমন চিন্তা করেন না।

সরকারি নীতির ওপর নিয়ন্ত্রণ না থাকা চাষির অতিরিক্ত লোকসানের বড় কারণ। ফসল ওঠার আগে নানা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে তাঁর মনে এমন শঙ্কা তৈরি করা হয়, যাতে তিনি যা পাওয়া যায় সেই দামেই দ্রুত ফসল বিক্রি করে দেন। এভাবে কৃষি খাতের অগ্রগতি টেকসই হবে না। কৃষকের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাওয়ার আগেই বড় ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।