Thank you for trying Sticky AMP!!

কোভিড চিকিৎসার সম্মানী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বছরখানেক আগে ঘোষণা করেছিলেন, সরকার কোভিডে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের এককালীন সম্মানী দেবে। এই বাবদে চলতি অর্থবছরে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ২৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা ছাড় করেছে। গতকাল প্রথম আলোয় খবর বেরিয়েছে, বাজেট বরাদ্দ করার দীর্ঘ আট মাস পর অবশেষে এই সম্মানী প্রদানের কাজটি শুরু হয়েছে, কোভিড চিকিৎসায় নিয়োজিত জনবলের সবাই তা পাবেন না।

এই সম্মানী প্রদানের কাজটির সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা এমনই গোলমেলে যে কোভিড চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে কে তা পাবেন, কে পাবেন না, তা পরিষ্কার নয়। সম্মানী পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলোকেই আবেদন করতে হবে, সেই আবেদন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ইত্যাদি ঘুরে অনুমোদিত হলে সম্মানীর অর্থ আবেদনকারী প্রাপকের কাছে পৌঁছাবে। আবেদনপত্রে ভুলত্রুটি থাকলে কোভিড চিকিৎসায় নিয়োজিত থেকেও একজন চিকিৎসক, নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মী সম্মানী পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবেন। আবার ‘স্বাস্থ্যকর্মী’ সংজ্ঞায় নাকি অস্পষ্টতা আছে, সেই জটিলতার কারণেও অনেকে সম্মানী পাবেন না।

প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে জানিয়ে দিয়েছে, আউটসোর্সিং বা অন্য কোনোভাবে নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা এ সম্মানী পাবেন না। হার্ট, লাং, সিটি স্ক্যান, এনজিওগ্রাম ও ইসিজি টেকনিশিয়ানরাও পাবেন না সম্মানী। এ ছাড়া প্রশাসনিক কর্মকর্তা, পরিসংখ্যান কর্মকর্তা, টেলিফোন অপারেটর, অফিস সহকারী, কম্পিউটার অপারেটর, হিসাবরক্ষক, গাড়িচালক, ইলেকট্রিশিয়ান, মুয়াজ্জিন, মেকানিক, স্টেনোটাইপিস্ট, স্টোরকিপার, মালি—তাঁদেরও সম্মানী দেওয়া হবে না।

আমরা মনে করি, এই সিদ্ধান্ত ঠিক নয়। চিকিৎসাসেবা একটা সামগ্রিক ব্যবস্থা, তা চলে নানা ধরনের লোকবলের দ্বারা। চিকিৎসক ছাড়া যেমন তা চলতে পারে না, তেমনই নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী এমনকি ওয়ার্ড বয়, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ছাড়াও কোনো চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলার সময় মন্তব্য করেছেন, একজন রোগী যখন হাসপাতালে পৌঁছান, তখন হাসপাতালের যে কর্মীটি প্রথম দৌড়ে গিয়ে ওই রোগীকে ট্রলিতে তোলেন, তাঁকে সম্মানী দেওয়া না হলে ভেদাভেদ করা হবে। আমরা মনে করি, এই রকমের ভেদাভেদে কোভিড চিকিৎসায় নিয়োজিতদের সম্মানী প্রদানের মূল উদ্দেশ্যটিই ব্যাহত হবে। কারণ, যাঁরা সম্মানী পাবেন না, তাঁরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ হবেন এবং তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কোভিড রোগীদের চিকিৎসায়।

কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত সবাই নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করছেন সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে। এ জন্য তাঁদের সম্মুখসারির যোদ্ধা বলে অভিহিত করা হয়। সম্মানী প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ভেদাভেদ না করে তাঁদের প্রত্যেকেরই সম্মানী পাওয়া নিশ্চিত করা উচিত। এটা যেমন ন্যায্যতার খাতিরে প্রয়োজন, তেমনই প্রয়োজন কোভিড চিকিৎসার সার্বিক গুণগত মান বাড়াতে সবার সম্মিলিত প্রয়াসকে উৎসাহিত করতে।