Thank you for trying Sticky AMP!!

ক্ষতিকর খাদ্যদ্রব্যের ব্যাপকতা

ভেজাল ও পচা-বাসি খাবার, অতিরিক্ত সার-কীটনাশক ব্যবহারে উৎপাদিত কৃষিজাত খাবার, কৃত্রিম রংসহ নানা ধরনের রাসায়নিক পদার্থমিশ্রিত ফলমূলসহ নানা ধরনের খাবার মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর জেনেও বাংলাদেশে এগুলোর উৎপাদন, বিপণন ও সেবনের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেই। ফলে আমাদের জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর ঝুঁকি দিন দিন বেড়ে চলেছে। গত কয়েক দশকে জনস্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন দিকে আমাদের যে অগ্রগতি ঘটেছে, তা টেকসই হবে না যদি আমরা ক্ষতিকর খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন, বিপণন ও সেবন বন্ধ করার জন্য কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ না নিই।

সব ধরনের রাসায়নিক কীটনাশক-বালাইনাশকই বিভিন্ন মাত্রার বিষাক্ত পদার্থ, কৃষিতে সেগুলোর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার মাটি ও পানি বিষাক্ত করে, বিষ প্রবেশ করে আমাদের খাদ্যচক্রে। এসব বিষযুক্ত খাবার মানুষের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র, যকৃৎসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। নিউরোলজি ও লিভার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে রোগীর ভিড় দিন দিন বেড়ে যাওয়ার পেছনে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারে উৎপন্ন খাদ্য গ্রহণের সম্পর্ক থেকে থাকতে পারে বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন। এ ছাড়া শিল্পজাত খাদ্যদ্রব্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক রং ফল পাকানোর জন্য কার্বাইড এবং ফলমূল, শাকসবজি, মাছ প্রভৃতি পচনশীল খাবারের পচন ঠেকার জন্য ফরমালিন–জাতীয় রাসায়নিক পদার্থের ব্যাপক ব্যবহারের ফলে জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে।

পোলট্রি ও মৎস্যশিল্পের বাণিজ্যিক প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে জনস্বাস্থ্যের বাড়তি ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, এই দুটি শিল্পে ব্যবহারের জন্য বাণিজ্যিকভাবে যেসব খাদ্য উৎপাদন করা হচ্ছে, সেগুলোতেও মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর কাঁচামাল ও উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে। উদ্বেগজনক খবর হলো, চামড়াশিল্পের বর্জ্য থেকে তৈরি করা হচ্ছে মাছ ও মুরগির খাবার। বৃহস্পতিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মঙ্গলবার ঢাকার হাজারীবাগের বউবাজারসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ৮০০ টন মুরগি ও মাছের খাবার জব্দ করেছে, যেগুলো চামড়াশিল্পের বিষাক্ত বর্জ্য থেকে তৈরি করা হয়েছে।

অনেক দিন ধরে হাজারীবাগে এবং সম্প্রতি সাভারের চামড়াশিল্প এলাকায় পশুচামড়ার বর্জ্য থেকে মুরগি ও মাছের খাবার তৈরি করা হচ্ছে, সারা দেশে সেগুলোর কেনাবেচা ও ব্যবহার চলছে। গত বছরের ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও ওয়ার্ক ফর আ বেটার বাংলাদেশ (ওডব্লিউবিবি) নামের দুটি বেসরকারি সংস্থা ঢাকায় ‘পোলট্রি ফিডে বিষাক্ত ট্যানারি বর্জ্য, গভীর সংকটে জনস্বাস্থ্য’ শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল। সেখানে সাভারের ভাকুর্তার একটি গ্রামেই ২০টি পোলট্রি ফিড তৈরির কারখানার সচিত্র তথ্য তুলে ধরা হয়েছিল, যেগুলোতে বিষাক্ত ট্যানারি বর্জ্য ব্যবহার করে মুরগির খাবার তৈরি করা হয়। এ থেকেই অনুমান করা যায়, এই বিষাক্ত শিল্পের আকার কত বড় হতে পারে।

চামড়াশিল্পে প্রায় ২০ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়, যেগুলো মাটি ও পানিকে বিষাক্ত করে তোলে, সেসব বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থমিশ্রিত ট্যানারি বর্জ্য তৈরি খাবার খাওয়ানো হচ্ছে মাছ ও মুরগিকে। আমাদের প্রাণিজ আমিষের বৃহত্তম উৎস মাছ ও মুরগি এভাবে বিষাক্ত হচ্ছে, আমরা ও আমাদের শিশুরা তা খাচ্ছে।

চামড়াশিল্পে বর্জ্য থেকে পোলট্রি ফিড তৈরির ওপর আদালতে নিষেধাজ্ঞা আছে; কিন্তু এই মারাত্মক ক্ষতিকর বাণিজ্যিক তৎপরতা বন্ধ হয়নি, বরং আরও প্রসারিত হয়েছে। গত মঙ্গলবার হাজারীবাগে ভ্রাম্যমাণ আদালত ১১ ব্যক্তিকে দুই বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন, যাঁদের মধ্যে ৮ জনই নিরীহ শ্রমিক। আসলে প্রয়োজন এসব কারখানার মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানো, কারখানাগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ করা।