Thank you for trying Sticky AMP!!

কয়রায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ

প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস আইলায় দক্ষিণাঞ্চলের বেড়িবাঁধগুলো ভেঙে যাওয়ার পর দীর্ঘ ১০ বছর কেটেছে। কিন্তু বাঁধ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দুঃস্বপ্ন কাটেনি। আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধগুলো প্রতিবছরই কোনোমতে মেরামত করা হয়। কিন্তু স্থায়ী মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয় না। এ কারণে পাউবোর এই জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করা বাঁধ পরের বছর আবার ভাঙনের কবলে পড়ে। 

প্রকল্প এলাকায় কাজের বিবরণী উল্লেখ করে কোনো সাইনবোর্ড না থাকায় এসব বাঁধ মেরামত ও নির্মাণ প্রকল্প সম্পর্কে কিছুই জানতে পারেন না এলাকাবাসী। তাঁদের এই না জানার সুযোগ নিয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার এবং পাউবোর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী বেড়িবাঁধের কাজের টাকা লুটপাট করতে পারেন—এমন সন্দেহ অযৌক্তিক নয়। এই সন্দেহ থেকেই খুলনার কয়রা উপজেলাবাসী বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারকাজের বিবরণী উল্লেখ করে প্রতিটি বাঁধের প্রকল্প এলাকায় সাইনবোর্ড টাঙানোর দাবি জানিয়েছেন। তঁাদের এই দাবি যৌক্তিক ও মহৎ। এটি করা হলে তা কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। 

আমাদের দেশের বাস্তবতা হলো, প্রতিবার ভাঙনের পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাময়িক ত্রাণ বিতরণ করা হয়। কিন্তু বাঁধের স্থায়ী মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয় কম। কয়রার লোকজন সরকারের কাছে দেওয়া স্মারকলিপিতে বলেছেন, নদীশাসন না করে বাঁধ নির্মাণ করলে কখনোই তা টিকবে না। 

বর্তমানে কয়রা উপজেলায় পাউবোর মাধ্যমে ১৮টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে ৪ হাজার ৩০৫ মিটার বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ চলছে। ওই কাজের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে চার কোটি টাকার মতো। এ ছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরের রাজস্ব খাতেও সাড়ে তিন কোটি টাকার বেশি মূল্যের ১৭টি কাজের মধ্যে কয়েকটি কাজ শেষ হয়েছে আর কিছু কাজ চলমান রয়েছে। তবে একটি কাজেও প্রকল্প এলাকায় কাজের বিবরণী উল্লেখ করে কোনো সাইনবোর্ড প্রদর্শন করা হয়নি। ফলে এলাকাবাসী বাঁধ সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতে পারছেন না। এসব কাজে স্বচ্ছতা আনতে ও সাধারণ মানুষকে অবগত করতে বাঁধ এলাকায় কাজের বিবরণী, প্রকল্পের মেয়াদ, বাঁধের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও কত টাকা মূল্যের কাজ—সব তথ্য উল্লেখ করে সাইনবোর্ড টাঙানো একান্ত প্রয়োজন। 

কয়রায় যাঁরা এই দাবি তুলেছেন, তাঁদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে তাতে কয়েকটি ক্লাব, সামাজিক সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নিয়েছেন। এটি সামাজিক সচেতনতার উন্মিলনের আভাস দেয়। কয়রার মতো দেশের অন্য সব এলাকায়ও যদি স্থানীয় জনগণ প্রতিটি উন্নয়নকাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে এগিয়ে আসে, তাহলে দুর্নীতি বহুলাংশে কমে যাবে—এমন আশা করাই যায়।