Thank you for trying Sticky AMP!!

খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছেই

সম্পাদকীয়

বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী ধরা পড়ে গত বছরের ৮ মার্চ। সেই হিসাবে করোনাকাল চলছে এক বছরের বেশি। এ সময়ে একদিকে মানুষের আয় কমেছে, অন্যদিকে ব্যয় বেড়েছে। এ অবস্থা জনজীবনে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। প্রধানত নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব অনুযায়ী, গত এক বছরে মোটা চালের দাম বেড়েছে ৩৭ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং পাইজাম চালের দাম বেড়েছে ২২ শতাংশের বেশি। এ ছাড়া আটার দাম ১০ দশমিক ৭১ শতাংশ ও ময়দার দাম বেড়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ। বেড়েছে ডাল, গুঁড়া দুধ, ব্রয়লার মুরগি ও গরুর মাংসের দামও।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। খুচরা দোকান থেকে এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা লাগছে। বাছাই করা পেঁয়াজ ৫৫-৬০ টাকা কেজিতেও বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ান বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গুঁড়া দুধ ৫৫০ থেকে ৬৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, শীতের শুরুর দিকে বাজারে আসা কন্দ বা মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ শেষের দিকে। বীজ থেকে উৎপাদিত হালি পেঁয়াজ এখনো পুরোদমে ওঠা শুরু হয়নি। এ কারণে দাম বেড়েছে।

চালের দাম বাড়ার পেছনে সরকারের সংগ্রহনীতি দায়ী। প্রতিবছর ধান-চাল সংগ্রহের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, তা পূরণ হয় না। চলতি বছর সরকারি গুদামে চালের মজুত অপেক্ষাকৃত কম। আমদানি পণ্যের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে বিশ্ববাজারের দোহাই দেওয়া হয়। দেখার বিষয় বিশ্ববাজারে আমদানি পণ্যের দাম কতটা বেড়েছে, আর দেশে তার কী প্রভাব পড়েছে। অনেক সময় দেখা যায়, বিশ্ববাজারে কোনো পণ্যের দাম কেজিতে ১০ টাকা বাড়লে বাংলাদেশে ২০-৩০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়ার নজির আছে। বাংলাদেশে আমদানি পণ্য নিয়ন্ত্রণ করে থাকে কয়েকটি বড় ব্যবসায়ী গ্রুপ। তারা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ায়। সরকারের নীতিনির্ধারকেরাও ব্যবসায়ীদের এসব কারসাজি জানলেও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছেন।

সামনে রোজা। এ সময় ছোলা, পেঁয়াজ, চিনি, ভোজ্যতেল, মসলা, খেজুর খেজুর প্রভৃতি পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে। আমদানিকারকেরা এ সুযোগে অস্বাভাবিক দাম বাড়িয়ে দেন। সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে বলেছেন, রোজায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়বে না। এর আগেও তিনি বিভিন্ন পণ্যের দাম নিয়ে অনেক আশ্বাস দিয়েছেন, যার বেশির ভাগই রক্ষিত হয়নি। বিশ্বব্যাপী খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশনের (এফএও) প্রতিবেদনে বলা হয়, খাদ্যশস্যের দাম ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে। করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দাম বাড়তির দিকে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে দেখা যায়, এক মাসের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে মাংসের দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ২ শতাংশ।

খাদ্যশস্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ায় স্বল্প আয়ের মানুষ ভীষণ চাপে আছে। এ অবস্থায় দাম বাড়বে না বলে জনগণকে মৌখিক আশ্বাস শুনিয়ে কোনো লাভ হবে না। বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারকে নিত্যপণ্য, বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের মজুত ও সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে ঘুমন্ত টিসিবিকে জাগ্রত করতে হবে। পণ্যের সরবরাহ ঠিক থাকলে ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ইচ্ছেমতো দাম বাড়াতে পারবেন না।