Thank you for trying Sticky AMP!!

খালেদা জিয়ার মুক্তি

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দীর্ঘকাল পরে বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিতে একটা শুভেচ্ছা, সহানুভূতি, সৌজন্য ও মানবিকতার বার্তা বয়ে এনেছে। দীর্ঘ ২৫ মাসের কারাভোগের পরে আদালতের আদেশে জামিন বা প্যারোলে নয়, তঁার এই মুক্তি মিলল নির্বাহী আদেশে। সেদিক থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এটি একটি নজির তৈরি হলো। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি সহিষ্ণু মনোভাবের এই বহিঃপ্রকাশ মুজিব বর্ষ উদ্‌যাপনকে একটি ভালো মাত্রা দেবে। 

আমরা সরকারপ্রধানের এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। বিএনপি ও খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকেও প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। এখন সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হলো শুভেচ্ছার এ পরিবেশকে ধরে রাখা এবং একে বাংলাদেশের রাজনীতির চিরচেনা তর্কবিতর্কের মধ্যে ম্লান হতে না দেওয়া। খালেদা জিয়ার মুক্তি ছয় মাসের জন্য এবং শর্তসাপেক্ষ। কিন্তু তাঁর সুচিকিৎসায় কোনো শর্ত নেই। আমরা আশা করব, মুক্ত থেকে তাঁর সুচিকিৎসার পথে কোনো বাধাই থাকবে না। মুক্ত থাকাকালে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন কিংবা তিনি বাক্‌স্বাধীনতার অনুশীলন করবেন কি করবেন না, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত প্রজ্ঞার বিষয়। আইন ও বিচারমন্ত্রী স্পষ্ট করেছেন, এ বিষয়ে কোনো শর্ত নেই। 

এটা পরিষ্কার যে খালেদা জিয়ার মুক্তিবিষয়ক সিদ্ধান্ত বিএনপি রাজনৈতিকভাবে নিতে পারেনি। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্তটি এসেছে। এটাও লক্ষণীয় যে খালেদা জিয়ার ভাইবোনেরা অনধিক ১৫ দিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। সুতরাং এটা অনেকটাই পরিষ্কার যে একটা আগাম বোঝাপড়ার ভিত্তিতে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ (১)–এর অধীনে সাজা স্থগিতের সিদ্ধান্ত এসেছে। এটা প্রকারান্তরে একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীর উদারতার দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হবে। 

গণতন্ত্রকে বলা হয় আর্ট অব কম্প্রোমাইজ। এতে সেই সমঝোতার প্রতিফলন ঘটেছে। আমরা ধরেই নিয়েছিলাম, বাংলাদেশের রাজনীতিতে বুঝি এই ধ্রুপদি আপ্তবাক্যের গুরুত্ব চিরদিনের জন্য অপাঙ্‌ক্তেয় হয়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ যখন একটি স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা অতিক্রম করছে, তখন বাংলাদেশ বিশ্বকে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা ও উদারতার বার্তা দিতে পেরেছে। জেনারেল এরশাদের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পর্বে দুই জনপ্রিয় জাতীয় নেত্রীর সমঝোতা ও তঁাদের হাস্যোজ্জ্বল আলোকচিত্র জনগণকে উৎসাহিত করেছিল। তারপর মাঝখানে একটা দীর্ঘ সময় প্রধানত তিক্ততার সম্পর্কে কেটেছে। এখন ধেয়ে আসা বৈশ্বিক দুর্যোগ মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ সর্বশক্তি প্রয়োগ করবে, সেটাই প্রত্যাশিত।