Thank you for trying Sticky AMP!!

খেলাপি ঋণ আর কত বাড়বে?

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত আঞ্চলিক ব্যাংকিং সম্মেলনে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের যে চিত্র উঠে এসেছে, তা উদ্বেগজনক বললেও পুরো সত্য বলা হয় না। এই সম্মেলনে বাংলাদেশ ছাড়াও নেপাল ও ভারত যোগ দেয়। এই তিন দেশে খেলাপি ঋণের হারে রয়েছে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। যেখানে নেপালে খেলাপি ঋণের পরিমাণ গড়ে ১ দশমিক ৭১ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশের খেলাপি ঋণের পরিমাণ গড়ে ২৫ শতাংশ। আর বেসিক ব্যাংক ও বিডিবিএলে সেই পরিমাণ ৫০ শতাংশেরও বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৮ সাল পর্যন্ত খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। আর গত নয় বছরে সেই ঋণ বেড়ে হয়েছে ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। এর বাইরে আরও ৪৫ হাজার কোটি টাকার খারাপ ঋণ অবলোপন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে খেলাপি ঋণ এখন ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।

অন্যদিকে সরকারি ও বেসরকারি খাতের ৪৮টি ব্যাংকের মধ্যে ১৩টির আর্থিক অবস্থা বেশ খারাপ। এর কারণ রাজনৈতিক প্রভাবসহ নানা মহলের চাপে ব্যাংকগুলো নিয়মবহির্ভূত ঋণ দিয়েছে বা দিতে বাধ্য হয়েছে। সোনালী ব্যাংকের হল–মার্ক কেলেঙ্কারি, বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির সঙ্গে নতুন যুক্ত হয়েছে জনতা ব্যাংক থেকে এ্যাননটেক্স নামে একটি গ্রুপকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার ঘটনা। সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে একধরনের নৈরাজ্য চলছে।

অথচ যেকোনো দেশের অর্থনীতির চাকা সুচারুভাবে চালাতে সুস্থ ও সমৃদ্ধ ব্যাংকিং খাত আবশ্যক। গত তিন দশকে বাংলাদেশে অর্থনীতির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকিং খাতেরও বিকাশ ঘটেছে। কিন্তু সেই বিকাশ যে সুস্থধারায় প্রবাহিত হয়নি, তার প্রমাণ ১৩টি ব্যাংকের বেহাল অবস্থা। সরকারি খাতের ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি মোকাবিলায় আরও ৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

ব্যাংকিং খাতে আইনের শাসন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি প্রায় নির্বাসিত। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ সংস্থা হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে আইনের সীমাবদ্ধতা যেমন আছে, তেমনি আছে নজরদারির ঘাটতিও। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ পাওয়া গেলেও তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নজির নেই। রিজার্ভের চুরি যাওয়া অর্থও তারা উদ্ধার করতে পারেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকটিই যদি দুর্নীতির ঊর্ধ্বে না থাকতে পারে, তাহলে প্রতিষ্ঠানটি অন্যের দুর্নীতি-অনিয়ম কীভাবে ধরবে? 

 বিআইবিএমের আঞ্চলিক সম্মেলনে বিশেষজ্ঞরা ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে যেসব সুপারিশ করেছেন, তা বিবেচনার দাবি রাখে। বিশেষ সরকার সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালক পদে এমন কাউকে নিয়োগ দেওয়া উচিত নয়, যাঁদের ব্যাংকিং সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। তাঁদের অতীতটাও পরখ করা প্রয়োজন। টাকা থাকলে যে কেউ ব্যাংকের শেয়ার কিনতে পারেন, কিন্তু পরিচালক হতে হলে তাঁর ন্যূনতম যোগ্যতা থাকতে হবে।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান চালানোর জন্য একাধিক আইন থাকলেও তার যথাযথ প্রয়োগ নেই। এ কারণেই একের পর এক কেলেঙ্কারি ঘটেছে, খেলাপি ঋণের পরিমাণ সীমা ছাড়িয়েছে, কোনো কোনো ব্যাংক গ্রাহকদের আস্থা হারিয়েছে। এ অবস্থায় সরকারের উচিত ব্যাংকিং খাতের সংকট উত্তরণে কার্যকর ও টেকসই পদক্ষেপ নেওয়া।

ব্যাংকিং খাতের বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে সরকার আরও তিনটি নতুন ব্যাংকের অনুমতি দিতে যাচ্ছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। মূলধনের অভাবে যেখানে নতুন প্রজন্মের ব্যাংকগুলো চলতে পারছে না, সেখানে নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা সংকটকে আরও বাড়াবে। অতএব, নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার চিন্তা বাদ দিন। চালু ব্যাংকগুলো যাতে ভালোভাবে চলে, সেই উদ্যোগ নিন।