Thank you for trying Sticky AMP!!

গবাদিপশুতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা

তিন বছর আগে যখন বাংলাদেশে ভারতীয় গরু আসা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তখন সবার মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল। গরুর মাংসের দাম হু হু করে বেড়ে গিয়েছিল। কোরবানির সময় পশুর সংকটে পড়েছিল দেশ। সবার চিন্তা ছিল ভারত ও মিয়ানমার থেকে গরু-মহিষ আনতে না পারলে দেশের এই বিপুল চাহিদা মেটানো হবে কী করে? খুব আনন্দের কথা, সেই সমস্যাটিই আজ শাপে বর হয়ে দেখা দিয়েছে।

পরনির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসায় খামারিরা মনোযোগী হয়েছেন। বহু শিক্ষিত তরুণ গবাদিপশুর খামার গড়ে তুলেছেন। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকেও সহযোগিতা করা হয়েছে। ফল হিসাবে দেখা যাচ্ছে, মাত্র তিন বছরেই দেশ গরু-ছাগলে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছে। গবাদিপশু উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে একটি নীরব বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছে, তা বলাই যায়।

সরকারি ও বেসরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, তিন বছর ধরে ভারত ও মিয়ানমার থেকে গরু আসার পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে কমেছে। অন্যদিকে ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে দেশি গরু-ছাগল। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর যে তথ্য দিচ্ছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে দেশি গরুতেই এ বছর ঈদুল আজহার চাহিদা মিটবে। ক্রেতারা কোরবানির জন্য দেশি গরুকেই বেশি পছন্দ করছেন।

দেশের কৃষি অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক দিক হলো, দেশি গরুর চাহিদা বাড়ায় দেশের তরুণ ও প্রবাসীরা গবাদিপশুর খামারে উৎসাহী হচ্ছেন।
বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের হিসাব মতে, গত তিন বছরে দেশে ১৫ হাজার নতুন খামার গড়ে উঠেছে। এটি একটি বিরাট আশাজাগানিয়া খবর।

এখন কোনো কারণে প্রতিবেশী দেশ থেকে গরু আসা সম্পূর্ণ বন্ধ হলেও ভয়ের কিছু নেই। বরং ধারাবাহিকভাবে গরু আমদানি বন্ধ করা গেলে দেশ গবাদিপশুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে যাবে বলে আশা করা যায়। এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে গেলে এ বিষয়ে তরুণদের আরও উৎসাহ দেওয়া এবং খামার স্থাপনে সরকারি সহায়তাসহ কৃষিঋণের ব্যবস্থা করা দরকার।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যথার্থ প্রশিক্ষণ। যৌক্তিক বিনিয়োগের বিপরীতে সর্বোচ্চ ফল বের করে আনতে প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই।
যেসব তরুণ গবাদিপশুর খামার করছেন, তাঁরা যদি বিজ্ঞানসম্মত পশুপালন এবং আধুনিক খামার ব্যবস্থাপনার প্রশিক্ষণ পান, তাহলে সেই
লক্ষ্য অর্জন সহজ হয়ে যাবে। গরু-ছাগল উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ানোর পাশাপাশি এই পশুসম্পদের গুণগত মান বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া
সবচেয়ে বেশি দরকার।

মাথায় রাখতে হবে, শুধু সংখ্যা বাড়ানোই শেষ কথা নয়, গবাদিপশু যাতে পুষ্ট-সুস্থ-সবল হিসেবে বেড়ে ওঠে, সেটিও নিশ্চিত করতে হবে।